ভারসাম্যের কৌশল!!

 ভারসাম্যের কৌশল!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইজরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আচমকা হামলা এবং পাল্টা হিসাবে গাজায় ইজরায়েলের ভয়াবহ আক্রমণের পর যুদ্ধবিধস্ত মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে গোটা দুনিয়া কার্যত আড়াআড়ি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে।ইজরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের ঘটনাকে ঘিরে একদিকে যখন একটা অংশ হামাসকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ইজরায়েল পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।তেমনি পাশাপাশি অপর পক্ষ প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের নিরন্তর দমনপীড়নের অভিযোগ তুলে হামাসের হামলাকে বৈধতা দিতে চাইছে।

এই অদ্ভুত সমাপতনের মধ্যে বিশ্ব রাজনীতি যতটা না জটিল আকার ধারণ করেছে,তার চেয়ে বেশি ইজরায়েল প্যালেস্টাইন নীতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দ্বৈরথ, অস্থিরতা তীব্র হতে শুরু করেছে।বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের এই আকস্মিক ঘটনা ভারতের কূটনীতির কাছেও একটা বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। গত ৭ তারিখ ইজরায়েলের দক্ষিণাংশে বেশকিছু শহর এলাকায় আচমকা সন্তর্পণে হামাস বাহিনী যে ভাবে রকেট হামলা চালায় তা নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিককালের মধ্যে ভয়াবহ ঘটনা।ঘটনার পরপরই ইজরায়েলর প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জমিন নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং এই ইস্যুতে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।সন্ত্রাসী হামলায় তিনি দেশের তরফে গভীর মর্মবেদনার কথাও জানান।এই কঠিন সময়ে ইজরায়েলের সঙ্গে একাত্মতারও বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী।যদিও এই ইস্যুতে গোটা দেশের মধ্যে একটি বিভ্রান্তিও ছড়ায়।পরবর্তী সময়ে দেশের বিদেশ মন্ত্রক এই সম্পর্কিত ধোঁয়াশা কাটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, সুস্থিতি এবং সহাবস্থানের প্রশ্নে প্যালেস্টাইন এবং ইজরায়েল উভয় রাষ্ট্রের প্রতিই ভারতের সমদর্শী মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির কথা ব্যক্ত করে কূটনৈতিক ভারসাম্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।আসলে ইজরায়েল- ফিলিস্তিনি সংঘাত নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের অবস্থান বিভিন্ন প্রেক্ষিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।যার ফলে ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ইজরায়েলকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিলেও ভারত তা মেনে নেয়নি। হয়তো ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের ভয়াবহ স্মৃতির কথা মাথায় রেখেই ভারত ১৯৫০ সালে প্রথম ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকার করে নেয়।১৯৫০ সালে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক ও স্বাভাবিক সম্পর্ক তখনও বন্ধ ছিল ইজরায়েলের।বরং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে প্যালেস্টাইনের অধিকারকে সমর্থন জানিয়ে ইয়াসের আরাফতকে ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে কাছে টেনে নেয় দিল্লী।

কিন্তু ১৯৯২ সালে পিভি নরসিমা রাওয়ের সময়ে ভারত প্রথম ইজরায়েলের সঙ্গে পূর্ব কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।পরবর্তী সময়ে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত- ইজরায়েল সম্পর্কের নৈকট্য আরও দৃঢ় হয়।এভাবেই ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে ফিলিস্তিনি আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থনের পাশাপাশি ভারত- ইজরায়েলের সঙ্গেও সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সক্ষম হয়। বিস্ময়কর ঘটনা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের তাবড় দেশগুলো যখন নিজেদের একটা অবস্থান কিংবা পক্ষভুক্ত হয়ে যায় তখনও ভারত নিজের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে বিবদমান দুই রাষ্ট্রের কাছেই সমীহের স্থান দখল করেছিল। ভারত এই যুদ্ধে সরাসরি রাশিয়ার বিরোধিতা না করে দুই পক্ষকে এক টেবিলে আলোচনায় বসার জন্য যেমন উদ্যোগী হয়েছিল। তেমনি রাশিয়া থেকে তেল কেনার সিদ্ধান্ত হয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ভারত সমালোচিত হয়েছিল। এই জটিল পথ মসৃণভাবে অতিক্রম করে এলেও এবার ইজরাইয়েল- হামাস সংঘাত কূটনীতিকে এক জটিল সন্ধিক্ষণে এনে ভারতকে দাঁড় করিয়েছে। কারণ একদিকে সৌদি আরব হলো ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারী দেশ। আবার ইজরায়েল হল এই মুহূর্তে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থল। অথচ চিনকে মোকাবিলার জন্য ভারতের সামনে সৌদি আরব এবং ইজরায়েলই ছিল নতুন আঞ্চলিক সাথী। কিন্তু অকস্মাৎ ইজরায়ল- হামাস সংঘাত ভারতের সামনে সৌদি আরব ও ইজরায়েলের মধ্যে কূটনীতির ভারসাম্য রক্ষার যে কঠিন পরীক্ষা সামনে এনে দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে আগামী দিনে ইতিহাসের গর্ভেই নিহিত। এক্ষেত্রে ভারতের চিরাচরিত শান্তি-সুস্থিতি এবং সহাবস্থানই যে মূলমন্ত্র, যাকে ভর করেই কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতকে এগিয়ে যেতে হবে তা নয়াদিল্লীর সাউথ ব্লক বেশ ভালো করেই জানে। আর তা অক্ষুণ্ণ থাকলে সেটাই হবে ভারতের বড় সাফল্য।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.