ভালো নেই প্রতিবেশী!!

 ভালো নেই প্রতিবেশী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে,সেই আগুনের লেলিহান শিখা আমার,আপনার বাড়িকেও গ্রাস করতে পারে।সেই আগুন শুরুতে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে গোটা পাড়া, মহল্লা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে।শুধু আগুন লাগাই নয়,প্রতিবেশীর যে কোনও বিপদ, সমস্যা হলে, তার আঁচ আমার-আপনার সকলের শরীরেই কম-বেশি লাগে।সেই বাড়ির পাশের প্রতিবেশীই হোক, কিংবা পাড়ার প্রতিবেশী।প্রতিবেশী রাজ্যই হোক,কিংবা রাষ্ট্রের প্রতিবেশী।সব ক্ষেত্রেই এটা একশ ভাগ প্রযোজ্য।এটাই বাস্তব।যুগ যুগ ধরে এই বাস্তবতা চলে আসছে।তাই প্রতিবেশী ভালো থাকলে, সুখে থাকলে আমি-আপনি সকলেই ভালো থাকবো। ভালো থাকবে রাজ্য এবং দেশ।
এই কথাগুলো বলার একটাই কারণ,এই মুহূর্তে আমাদের দেশের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’একদমই ভালো নেই।গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে অশান্তির আগুনে জ্বলছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এই অশান্তির তীব্রতায় ইতিমধ্যে ঝড়ে গেছে বহু প্রাণ। হাজারের উপরে আহতের সংখ্যা।প্রতিদিন এই সংখ্যা শুধু বেড়েই চলেছে। হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে বহু রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ।রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শুধু উন্মত্ত হিংসার দগদগে ক্ষতচিহ্ন।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই অশান্তির প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও।অশান্তির জেরে গত তিন সপ্তাহ ধরে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ।দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী প্রতিটি স্থলবন্দর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। অশান্তির জেরে বহু পড়ুয়া ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে এসেছে।বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে পর্যটন শিল্পে।এই অশান্ত পরিস্থিতিতে এখন কেউ বাংলাদেশে যেতে চাইছে না।খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশে এই অস্থির পরিস্থিতির জন্য ভারতের প্রতিদিন ১৮ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কেননা, পণ্য পরিবহণ স্তব্ধ হয়ে আছে। বন্ধ ব্যবসা- বাণিজ্য সব কিছু। এতে যে শুধু ভারতেরই ক্ষতি হচ্ছে এমনটা নয়।বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছে সব থেকে বেশি। আর এই অশান্তির সাথে সাথে প্রতিবেশী দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতাও চরমে উঠেছে।শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়।কেননা, চরম অশান্তির মধ্যে দেরিতে হলেও কট্টরপন্থী মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলাম ও তাদের সমস্ত শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার।ফলে এই সংগঠনগুলির নেতানেত্রীরা গ্রেপ্তার এড়াতে এখন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে।অনেকে লুকিয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। যা ভারতের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি ধারাবাহিক আন্দোলন করে গেছে জামাত ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে।আইনি লড়াইও হয়েছে।বাংলাদেশের সংবিধানকে সর্বোচ্চ হিসেবে স্বীকার না করার কারণে সে দেশের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে জামাতে ইসলামির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে ২০১৮ সালে।এরপরও পদ্মা-মেঘনা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেওয়ার পেছনে এই কট্টর মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলাম ও ছাত্র শিবিরের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে বলে জানতে পারে বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থা।এরপরই নড়েচড়ে বসে হাসিনা সরকার।কোটা আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই সন্ত্রাস বিরোধী আইনে পাকিস্তানি সেনাদের সহচর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামাতে ইসলাম ও ছাত্র শিবির সহ তাদের সমস্ত শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে হাসিনা সরকার। গত শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘জামাত ও ছাত্র শিবিরকে এখন থেকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবেই মোকাবিলা করা হবে।বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্ট মোতাবেক সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ছিনতাই করে দেশজুড়ে নাশকতা এবং ব্যাপক প্রাণহানির মতো পরিস্থিতি তৈরির জন্য জামাতে ইসলামি, ছাত্র শিবিরের বড় ভূমিকা সামনে এসেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, তিনমাস আগে দেশটির বিভিন্ন জেলা থেকে পাঁচ হাজারের উপরে কট্টর ক্যাডারকে ঢাকায় আনা হয়েছিল।মজুত করা হয়েছিল দাহ্য তেল, বিস্ফোরক এবং দেশি অস্ত্রশস্ত্র।প্রশিক্ষিত জেএমবি জঙ্গিদেরও ঢাকায় আনা হয়েছিল।কোটা আন্দোলনকে তারাই ভয়ঙ্কর হিংসার পথে নিয়ে গেছে।বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।তারা বলেছে, অনেক আগেই এই কাজ করা উচিত ছিল।কিন্তু সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, এরপরও কি বাংলাদেশ শান্ত হবে? রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, শেখ হাসিনার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি।একে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে না পারলে আগামীদিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলি, যেভাবে দেশটিকে অস্থির করে তুলতে চাইছে, তাতে ভারতেরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রতিবেশী ভালো থাকলে, প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলে ভারতও ভালো থাকবে।এটাই মোদ্দাকথা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.