ভাষণ ও বাস্তবতা।

 ভাষণ ও বাস্তবতা।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চোখে দেখা এবং কানে শোনার মধ্যে যেমন বিস্তার ফারাক রয়েছে , তেমনি কথা ( ভাষণ ) ও বাস্তব তথ্যের মধ্যেও বিস্তর ফারাক এই থাকে । অনেকে আবার তথ্যের উপর ভিত্তি করেই কথা বলেন । অর্থাৎ বাস্তব ও প্রকৃত তথ্য যা সেটাই বলেন । অনেকে আবার বাস্তবের ধারেকাছেও থাকেন না । মনগড়া , নিজের বা নিজেদের তৈরি করা তথ্যের ( ! ) উপর ভিত্তি করে কথা বলেন । ধরনের প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায় রাজনৈতিক দলের নেতা – নেত্রী এবং ক্ষমতায় থাকা দল ও সরকারের নেতা – মন্ত্রীদের মধ্যে । এই প্রবণতা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে । এটা নতুন কিছু নয় ।
গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলের নেতা – নেত্রীরা আম জনতাকে নানা আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখান । ক্ষমতায় আসার পর আম জনতাকে দেখানো সেই স্বপ্নের কথা বেমালুম ভুলে যান । জনতার প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতিওপূরণ হয় না । তবে এই ক্ষেত্রে সবাই একরকম না হলেও বেশির ভাগই ওই একই পথের পথিক । এরা জনগণকে বোকা ভাবেন । জনগণ কিছুই মনে রাখে না । এই তত্ত্বেই রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রী থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা – মন্ত্রীরা খুল্লামখুল্লা অসত্য তথ্য , মুখে যা খুশি তাই বলে বেড়ান । তাদের বলা কথা (ভাষণ ) মানুষকে মানতে ও বিশ্বাস করতে বাধ্য করেন । কোটি কোটি টাকা খরচ হয় নেতা মন্ত্রীদের ভাষণ প্রচারে । অথচ সেই সব কথা ও ভাষণের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না । যেমন চোখে দেখা ও কানে শোনার মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক থাকে , ঠিক তেমনই ।
এমনই এক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে বর্তমান রাজ্য সরকারের বাড়ি বাড়ি বিনামূল্যে জল সংযোগ দেওয়ার তথ্য ঘিরে । এককথায় চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে । একই সরকার , একই দপ্তরের দেওয়া তথ্যে ব্যাপক গরমিল ! স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যবাসীর মধ্যেও এ নিয়ে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে । কোন্ তথ্য সঠিক ? সেটা বুঝতে জনগণের অসুবিধা হচ্ছে । রাজ্যের গ্রাম – শহরে প্রতিটি বাড়িতে বিনামূল্যে জল সংযোগ দেওয়ার পরিসংখ্যান তিন জায়গায় তিন রকম ! গত মার্চ মাসে বিধানসভায় দেওয়া তথ্য বলছে একরকম । আবার দুই দিন আগে পানীয় জল দপ্তরের পর্যালোচনা বৈঠকে দেওয়া তথ্য বলছে আরেক রকম । কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে , সেই একই তথ্য আবার পানীয় জল দপ্তরের ( ডিডব্লিওএস ) ওয়েবসাইটে অন্যরকম । বিধানসভায় ও পর্যালোচনা বৈঠকে দেওয়া তথ্যের সাথে দপ্তরে ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যের মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃত তথ্য কোন্‌টি ? এবং সারা রাজ্যে গ্রাম ও শহর মিলিয়ে কতটি পরিবারে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ হয় , অথবা পাইপলাইন সংযোগ রয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে । রাজ্যবাসী কোন তথ্য ও পরিসংখ্যানটিকে সঠিক বলে বিশ্বাস করবেন ? এই জবাব কারোর কাছে নেই । সংশ্লিষ্ট মহলের মতে পূর্বতন সরকারের মতো বর্তমান সরকার ও জনগণকে বিভ্রান্ত করছে । উন্নয়নের জোয়ার বোঝাতে এবং প্রচার করতে গিয়ে প্রকৃত তথ্য ও বাস্তবতাকে আড়াল করছে । রাজ্যের কত শতাংশ পরিবার নিজেদের তৈরি উৎস থেকে জলপান করে বেঁচে আছে ? সেই পরিসংখ্যানও জনগণের সামনে নিয়ে আসা জরুরি । আর সেটা হলে , চোখে দেখা ও কানে শোনার মধ্যে ফারাকটা আরও স্পষ্ট হবে ।

Avatar

Dainik Sambad

Leave a Reply

Your email address will not be published.