ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষেণের দাবি উঠেছে!!

 ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষেণের দাবি উঠেছে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

 ।। শ্যামল সান্যাল।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কুমিল্লার বাড়িটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের দাবি উঠেছে।বাংলা ভাষা আন্দোলনে কুমিল্লার সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন।তিনি সরকারি কাগজে বাংলা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।জানা যায়,১৯৪৮ সালের ২৩ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হয়।২৫ ফেব্রুয়ারি ওই অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে সোচ্চার হন। তিনি অধিবেশনে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গণপরিষদে যে কার্যবিবরণী লেখা হয় তা ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়। সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। অধিবেশনে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি তোলেন তিনি।তখনকার পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এতে ক্ষিপ্ত হন। এতে ধীরেন্দ্রনাথ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রোষাণলে পড়ে কয়েকবার কারাবরণ করেন।
ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য আগে থেকেই টার্গেটে ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। আর সে কারণেই ১৯৭১সালের ২৯মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ের এইবাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লা সেনানিবাসে। সেখানে ৮৫ বছর বয়স্ক দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে বাবা-ছেলে দুজনকেই হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তাদের মরদেহের সন্ধানও পায়নি পরিবার।এরপর থেকে এই বাড়ির অবকাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়তে থাকে। বর্তমানে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি।বর্তমানে বাড়িটি দেখে বোঝার উপায় নেই,এখানে এক সময় অবিভক্ত পাকিস্তানের এক প্রথিতযশা বর্ষীয়ান রাজনীতিক বসবাস করতেন। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে ভাষা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।গবেষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহসানুল কবির বলেন, ধীরেন্দ্রনাথের বাড়িটি শুধু কুমিল্লাবাসীর নয়, এটি দেশের মানুষের অহংকারের জায়গা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় আজ বাড়িটি জীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়িটিকে কেন্দ্র করে আরও আগেই অনেক কিছু হতে পারতো। কেন হয়নি এটি না ভেবে,এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,বাড়িটি সংস্করণে যদি আইনগত কোনো বাধা না থাকে, প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করে এখানে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামেএকটি জাদুঘর করা হোক। যেটি দেখে শত শত বছর বাংলা ভাষা-ভাষি মানুষ অনুপ্রাণিত হবে।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নাজমুল বারী চৌধুরী বলেন, বাংলা ভাষার প্রস্তাবক ও ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি।জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি।আমাদের দাবি, এখানে ধীরেন্দ্র নাথের নামে একটি ভাষা জাদুঘর স্থাপন করা হোক।কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হাবিবুর আল আমিন সাদী বলেন,ইতোপূর্বে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ২২ লাখ টাকা খরচ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে স্টেডিয়ামের মূল গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে।ধীরেন্দ্রনাথের পরিবারের লোকজন বাড়িটি সংস্কারের দাবি তুললে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় দ্রুত সেটা করে দেবে। যেমনভাবে কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.