ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক মেরিট কাম মিনস্ অ্যাওয়ার্ডস,সহায়তার ছোঁয়ায় উচ্ছ্বসিত ৩২ পড়ুয়া!!

 ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক মেরিট কাম মিনস্ অ্যাওয়ার্ডস,সহায়তার ছোঁয়ায় উচ্ছ্বসিত ৩২ পড়ুয়া!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-একঝাঁক
সম্ভাবনাময় প্রাণের উচ্ছ্বাস আর প্রেক্ষাগৃহভর্তি মানুষকে সাক্ষী রেখে তাদের স্পর্ধিত উচ্চারণে সূচনা হলো ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক মেরিট কাম মিনস্ অ্যাওয়ার্ডস-এর যাত্রা। শনিবার মুক্তধারা প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চে তখন নবীন আর প্রবীনের আন্তরিক আদানপ্রদান।দৈনিক সংবাদ-এর প্রতিষ্ঠাতা, প্রাণপুরুষ প্রাতঃস্মরণীয় ভূপেনবাবুর দুই শিক্ষক এমবিবি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকুমার দাস আর অধ্যাপক মিহির দেবকে ঘিরে বত্রিশ জন মেধাবী ও দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে হলো অভিজ্ঞতা আর ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার দেওয়া-নেওয়া।

এর আগেই এদিনের অতিথিরা মাইকে ‘ত্রিপুরার প্রমিথিউস’ ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিককে পরিচয় করিয়ে দেন নতুন প্রজন্মের সামনে।
ত্রিপুরায় সাংবাদিকতার অগ্রপথিক ভূপেনবাবুই প্রথম ভেবেছিলেন পেশাদারিত্ব নিয়ে সংবাদপত্র করার পাঠকের কাছে দায় স্বীকার করে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার। প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতে এক বিরল প্রতিস্পর্ধায় তিনি লড়াই শুরু করেছিলেন।এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তি শুধুমাত্র সংবাদপত্রের মধ্যেই নিজেকে সীমিত রাখেননি, অজস্র সামাজিক কর্মকাণ্ড বিশেষত দুঃস্থ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন বারবার। আপোশহীন যোদ্ধা শেষ অবদি অসুখের কাছে অসময়ে মৃত্যুর সঙ্গে আপোশ মানলেন।কিন্তু তার আরব্ধ কাজ এবং ইচ্ছাগুলি পূরণের দায় দিয়ে গেলেন ট্রাস্ট-এর হাতে। ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক ট্রাস্ট এই কাজগুলি এগিয়ে নেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে।মঞ্চে এদিন বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বোরবার এই কথাগুলিই বললেন।
মঞ্চে সকাল ১১টা দশে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন উদ্বোধক আমতলি রামকৃষ্ণ মিশনের সচিব মহারাজ শুভকরানন্দ। উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি এমবিবি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকুমার দাস, দুই বিশেষ অতিথি অধ্যাপক মিহির দেব এবং আগরতলা আইএলএস হাসপাতাল জিপিটি গ্রুপের উপদেষ্টা কিশোর আম্বুলি।অনুষ্ঠানটির পৌরোহিত্য করেন ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক ট্রাস্ট-এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল।শিল্পী অমর ঘোষের বেদ মন্ত্রোচ্চারণে হলভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্বালন ও অনুষ্ঠানের সূচনাপর্ব ভাবগম্ভীর রূপ নেয়।স্বাগত ভাষণে দৈনিক সংবাদের এর বার্তা সম্পাদক এবং ট্রাস্ট-এর সচিব প্রদীপ দত্ত ভৌমিক বলেন, ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিকের ইচ্ছাগুলির রূপ দেওয়ার কাজ করছে ট্রাস্ট।দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রদের পাশে তাকে বরাবরই থাকতে দেখেছি।আজ তার ইচ্ছার মেরিট কাম মিনস অ্যাওয়ার্ডস চালু হল। “আগামীদিনেও ট্রাস্ট মেধাবী ও আর্থিকভাবে দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের জন্য কাজ করবে।বিশেষ অতিথি কিশোর আম্বুলি বলেন, ৬০ বছর ধরে দৈনিক সংবাদ আপোশহীন সংগ্রাম চালিয়ে যচ্ছে। অসংখ্য পত্রপত্রিকার ভিড়েও তাই দৈনিক সংবাদ মানুষের কাছে প্রিয়।মেধাবী গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য দৈনিক সংবাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করে রাজ্য প্রশাসনের প্রাক্তন আধিকারিক আম্বুলি বলেন, অনেক গরিব, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীর জন্য এই বৃত্তি সহায়ক ভূমিকা নেবে।কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনেক বৃত্তি চালু থাকলেও সেগুলি সব সময় পাওয়া যায় না। দৈনিক সংবাদের বৃত্তি ছাত্রছাত্রীকে উপকৃত করবে। তিনি জানিয়ে রাখেন আইএলএসের জিপিটি নার্সিং ইন্সটিটিউট রয়েছে, সেখানেও দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি অ্যাওয়ার্ডি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বিলেন, এই সুযোগ তারা যেন যথাযথ কাজে লাগান, তবেই দৈনিক সংবাদের আয়োজন সার্থক হবে।
অধ্যাপক মিহির দেব জানতে চান,যারা বৃত্তির জন্য বাছাই হয়েছে তারা পত্রিকা পড়ে কিনা। জবাব কেন নেতিবাচক তার কারণ তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেন।গৃহশিক্ষক আর নোটস- এর চাপ। তিনি ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবই পড়ার পরামর্শ দেন।তিনি বলেন, দেশের হাল ভালো না। নেট পরীক্ষার প্রসঙ্গ টানেন তিনি। ভূপেনবাবুকে জেলে পোরার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, কিছুদিন আগেই দিল্লীর সাংবাদিক পুরকায়স্থ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।মিহির স্যার আশাবাদী, এই নবীন প্রজন্মের মধ্য দিয়েই দেশের সনাতনী চেহারা ফিরে আসবে।দৈনিক সংবাদের সূচনা পর্বের স্মৃতিচারণ করে জানান, টিনের চালে তিন কোঠা ঘর ছিল।পত্রিকায় ‘ভূপেন’ প্রমিথিউস নাম দিয়ে লিখতেন। কলকাতায় কিছুদিন সাংবাদিকতার চাকরি করে আগরতলা ফিরে আসে পত্রিকা করবে বলে। আকণ্ঠ ঋণে ডুবে পত্রিকা চালাতেন।এই ছোট্ট পত্রিকাটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কল্যানে বিশ্বের নানা পত্রিকার মাধ্যমে পরিচিতি পেলো।মিহিরবাবু ‘বলেন, ‘ভূপেন’ এর নজর থাকতো নতুন প্রযুক্তির দিকে। ঋণের জন্য বিচলিত হতো না। সব প্রযুক্তি একে একে নিয়ে এসেছিল।আজ ট্রাস্ট ‘ভূপেন’ এর সবগুলি ‘ইচ্ছা পূরণ করছে। তার ইচ্ছা ছিল একটি ইংরেজি পত্রিকার। সেটিও হল। ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান, এদিনের বৃত্তি চালুর জন্য।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বিবেকনগরস্থিত রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক শুভকরানন্দ মহারাজ পরমাত্মা ও যোগাত্মার যোগ প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করে তার বক্তব্যে ছাত্রছাত্রীদের । উদ্দেশে বলেন, জীবনে সাফল্য যেখানে, সেখানে থাকবে মানবীয় প্রচেষ্টা।এর পর দরকার হয় মেধার সঙ্গে মূল্যবোধ।মূল্যবোধ দরকার মানুষ হতে গেলে। মূল্যবোধ থাকলে আত্মসম্মান জাগে। এই প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের কথায় মান ও হুঁশ-এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অ্যাওয়ার্ডি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ ও আশীর্বাদ দেনতিনি।তিনি চান মেধাবীরা মান ও হুঁশযুক্ত মানুষ হোক।শুধু মেধাবী হলে হয় না, মূল্যবোধ না থাকলে সে মেধার কোনও মূল্য নেই- বলেন শুভকরানন্দজী মহারাজ।অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকুমার দাস বলেন, ভূপেনের লড়াই ছিল ভীষণ কঠিন। সে সমাজসেবায় অনেক কাজ করতো, সেগুলি সব জানতে পারতাম না। কারণ সে প্রচারে আনতো না। আমাদের গর্ব হতো, সে আমাদের ছাত্র ছিল বলে।আধুনিক মুদ্রণ কারিগরির প্রতি ভূপেনবাবুর আগ্রহের প্রসঙ্গ টেনে তার ঋণগ্রস্ততার কথা বলেন। ট্রাস্ট বৃত্তি চালু করে যে কাজটি শুরু করেছে সেটি প্রশংসার কাজ মন্তব্য করে প্রাক্তন অধ্যক্ষ দাস বলেন, দেশে বিপিএলের উপরের স্তরের মানুষেরাও ভালো নেই। পড়াশোনা এখন ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। এই বৃত্তিগুলি ছাত্রছাত্রীদের জন্য খানিক সহায়ক হবে। দেশে শিক্ষার বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল মন্তব্য করে বলেন, আমরা যদি এভাবে সহায়তা “দিতে পারি, দেশের লাভ হবে।ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, চালাকি দিয়ে মহৎ ‘কাজ হয় না। তোমরা ভূপেনের মতো মানুষের লড়াই মনে রেখো। এগোতে পারবে। এরপর একে একে ৩২ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে মানপত্র, স্মারক এবং ব্যাঙ্ক ‘চেক তুলে দেওয়া হয়। মঞ্চে উপবিষ্টজন ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের হাতে বৃত্তি তুলে দিতে মঞ্চে এসেছিলেন ট্রাস্ট সদস্য ভূপেনবাবুর জ্যেষ্ঠপুত্র বিরাট দত্ত ভৌমিক, ‘ট্রাস্ট সদস্য ডা. পার্থপ্রতীম সাহা, প্রাক্তন বিচারপতি সুব্রত পাল, ট্রাস্ট সদস্য পঞ্চজবিহারী সাহা, দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক, ট্রাস্টের সচিব প্রদীপ দত্ত, নর্থ ইস্ট কালার্স এর সম্পাদক সঞ্জীব দেব, হেডলাইন্স ত্রিপুরা সম্পাদক প্রণব সরকার, দৈনিক সংবাদ জেনারেল ম্যানেজার মিহির গুপ্ত অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার দেবাংশু চৌধুরী, ট্রাস্ট সদস্য ডা. এ কে রায়, মধ্যশিক্ষা পর্যদের প্রাক্তন সচিব প্রত্যুষ দেব, দুই প্রধান শিক্ষক দ্বিজলাল দেবনাথ, শিবশঙ্কর পাল, দৈনিক সধবীদের সাংবাদিক অলক ঘোষ, দীপশু মজুমদার এবং বিজ্ঞাপন বিভাগের ম্যানেজার হরিদাস সাহা প্রমুখ এ দিন ছাত্রছাত্রীদের হাতে অ্যাওয়ার্ডগুলি তুলে দেন। বৃত্তিপ্রদান অনুষ্ঠানে মঞ্চে এসেছিলেন ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সিনিয়র ব্রাঞ্চ ম্যানেজার শ্রীমতী সুকন্যা বরা।তিনি জানিয়ে গেলেন ছাত্রছাত্রীদের স্টাডি লোনের ক্ষেত্রে কিছু সচেতনতার কথা। সহজ শর্তে এই ঋণের জন্য তিনি ছাত্রছাত্রীদের সহায়তার আশ্বাস দেন।
এ দিন ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন সভার সভাপতি ভূপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ভৌমিক
ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সঞ্জয় পাল।প্রসঙ্গত,এ দিন বৃত্তি নিতে আসা বাছাই ৩২
ছাত্রছাত্রীর সবাই তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বৃত্তি পেয়ে তারা তাদের উচ্ছ্বাস ব্যক্ত
করেছেন।কেউ বা আবেগে ভেসেছে।তবে প্রত্যেকেই জানিয়েছে, এই সহায়তা
নিয়ে তারা আগামী দিনে আরও ভালো করবে। প্রতিকূলতা, বিপর্যয় যাই-ই থাকুক তারা এগিয়ে যাবেই। তাদের কথার প্রসঙ্গে সভার সভাপতি সঞ্জয় পাল বলেন,
আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করতে আমরা যে
পথ চলা শুরু করেছি তা চালিয়ে যাব।ভূপেনবাবুর স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি
ছিলেন বিশাল মনের অধিকারী।তার ভাবনা, স্বপ্ন সামনে রেখে ট্রাস্টের পথচলা
আজ ২৭ বছর অতিক্রান্ত। আমরা তার স্বপ্নগুলি পূরণ করার কাজ করে যাবো।তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা আগামীদিনে উচ্চশিক্ষা পাবে, বড় হবে।কিন্তু বাবা-মা-দের যে অবস্থা বা পরিণতি দেখতে পাই তাতে মর্মাহত হতে হয়। এর কারণ ছাত্রছাত্রীদের মূল্যবোধের অভাব।বাবা মায়ের প্রতি তারা দায়িত্ব অনুভব করে না।এ প্রসঙ্গে তিনি মোবাইলের মতো গেজেট ব্যবহারে বিজ্ঞানের প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। অতিথিবর্গ সহ এ দিন উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।প্রসঙ্গত, এ দিনের অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট বাচিক চন্দনলেখা পাল এবং হরিদাস সাহা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.