ভোক্তার ভোগান্তি

 ভোক্তার ভোগান্তি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রথমে কাঁচালঙ্কা, এরপর টম্যাটো। এবার চোখ রাঙাচ্ছে পেঁয়াজ। গত এক পক্ষকালের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল খোলা বাজারে কিলো প্রতি ২৫ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কিলো প্রতি খুচরো মূল্য ৪৫ টাকা। এলাকা ভেদে এক এক বাজারে পেঁয়াজের দাম কিলো প্রতি ৫০ টাকাও হাঁকাচ্ছে। খোলা বাজারে খাদ্যপণ্য সহ সবজি সবকিছুরই বাজার মূল্য তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে খাদ্য দপ্তর।খাদ্য দপ্তর এজন্য টাস্ক ফোর্সকে সবজিও জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজে লাগায়।কিন্তু সারা বছর এই টিমের নজরদারি চালানোর কথা থাকলেও সাধারণতঃ বাস্তব অভিজ্ঞতা সে কথা বলে না। যদিও খাদ্য দপ্তর এবার তড়িঘড়ি করে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে টাস্ক ফোর্সকে কাজে নামিয়েছে। তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে খোজ খবরও নিয়েছে। কোন্ বাজারে পেঁয়াজের কত দর, সেটাও নিরন্তর খোঁজ খবর নিয়ে সামঞ্জস্যের মধ্যে মূল্য ধরে রাখতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের কাউন্টারের মাধ্যমে ৩৮ টাকা কিলো দরে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে বলেও দপ্তরের দাবি। কিন্তু তারপরেও খোলা বাজারে আটকানো যাচ্ছে না পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি। আসলে বর্ষার এই সময়টুকুতে উৎপাদিত পেঁয়াজের একটা বড় অংশই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই থাকে। তাছাড়া এই আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে উৎপাদনও অনেক সময় কম হয়।আর জোগানে ঘাটতি শুরু হতেই একাংশ ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দেন। আবার কখনও মজুতের পরিমাণ বাড়িয়ে, জোগানের পরিমাণ কম দেখানো হয়। এটাও এক ধরনের কৃত্রিম সঙ্কটের কৌশল।কিন্তু এই জায়গাটিতে টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা যতটা থাকা দরকার, ততটা কাজে দেখা যাচ্ছে না। আবার এটাও ঘটনা, পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে ঝাড়াই বাছাই করে পেঁয়াজ পাঠানোর পর কেজি প্রতি পেঁয়াজের খুচরো দাম খানিকটা বেড়ে যায়। কিন্তু একই শহরের মধ্যে পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে পেঁয়াজ পাঠানোর ক্ষেত্রে পরিবহণ খরচ তেমন বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ প্রায়শই দেখা যাচ্ছে আলু-পেঁয়াজ-রসুন সব কিছুর বেলাতেই পাইকারি ও খুচরো বাজারের মূল্যের মধ্যে বেশ বড়সড় ব্যবধান।কেন এমনটা হয়? আবার দেখা যায় বিভিন্ন বাজারে আলু- পেঁয়াজের দাম বিভিন্ন।এটাও বাঞ্ছিত এবং কাঙ্ক্ষিত নয়। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আকার, রং এবং উৎকর্য মানের বিষয়টিও এর সঙ্গে যুক্ত। দেখা যায় মোটামুটি মাঝারি আকারের লাল রং-রঙের উন্নত মানের পেঁয়াজ এখন বাজারে প্রায় উধাও। অথচ নিম্নমানের খোসা ছাড়ানো সাদা বড় আকারের পেঁয়াজ, সেগুলোই ৪৫ টাকা প্রতি কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।এছাড়া ফ্যাকাসে, কালচে সাদা রঙের পেঁয়াজও ৪৫টাকা কিলোতেই হাঁকাচ্ছে বিক্রেতা। কেন এমনটা হবে। ৪৫ টাকা কিলো তো পেঁয়াজ বিক্রি হলেও ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজ কিনলে ১৫ টাকা কেন দিতে হবে ?অথচ দপ্তর মুখেই বড় বড় কথা বললেও বাজার ব্যসায়ীদের উপর টাস্ক ফোর্সের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কারণে একাংশ ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। অথচ মুখে বুলি কপচাচ্ছেন, বাজারে পেঁয়াজের দামের বাড়া-কমার উপর আমাদের কোন হাত নেই। যে রকম জোগান আসে তেমনই দাম উঠা নামা করে। তবে এবার পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে আগাম আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে পেঁয়াজের দাম এবারও ৬০-৭০ টাকা খুচরো প্রতি কিলোতে বিক্রি হবে। অর্থাৎ আগামী অক্টোবর মাসের আগে বাজার যে স্বাভাবিক হচ্ছে না তার ইঙ্গিত কিন্তু মিলতে শুরু করেছে। আর ৬ মাস বাদেই দেশের লোকসভার ভোট। সেই কারণে হয়তো ২০২০ সালের মতো পেঁয়াজের ঝাঝ এতটা এবার চোখে লাগবে না। কিন্তু বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা তাতে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতায় কারণে আগষ্টের মাঝামাঝি থেকে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির যে সূচনা হয়েছে তা অক্টোবর মাস পর্যন্ত জারি থাকবে বলেই আভাস মিলছে। রবি ফসলের সময় পেঁয়াজ মূলত ২ মাস থাকে। তাই পেঁয়াজ শুকিয়ে যাওয়ার ভয়ে মার্চ মাস থেকে চাষিরা তড়িঘড়ি পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। যে কারণে পেঁয়াজের মজুত আগষ্টেই এলে ধাক্কা খেয়েছে। খারিফ শস্যের পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করলে পেঁয়াজের মূল্য কিছুটা থিতু হবে। ততদিনে অক্টোবর পেরিয়ে নভেম্বর ডিসেম্বর চলে আসবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে টম্যাটো, কাঁচালঙ্কার পর এবার পেঁয়াজও বেশি কিছু না হলেও ভোক্তাকে কিছুটা হলেও ভোগাবে। সুযোগ বুঝে দাম হাঁকাচ্ছে আদাও। ভারত থেকে পেঁয়াজ মূলত রপ্তানি হয় ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ এবং আরব দেশগুলোতে। কিন্তু ভোট বড় বালাই। তাই এবার আগে ভাগেই কেন্দ্র সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির উপর শুল্ক খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। যাতে নিজের দেশের পেঁয়াজের বাজারে কোন সঙ্কট না আসে। এখন উৎসবের মরশুমে পেঁয়াজ আম-আদমির চোখে কতটা ঝাঁঝ ছড়ায় সেটাই দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.