দ্বিতীয়দিন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো হাজারো দর্শক-শ্রোতা!!
ভোটাধিকার চেয়ে ২১-এ জাতীয় পতাকা নিয়ে রাজধানীতে মিছিল

বামপন্থী বিভিন্ন দল এবং কংগ্রেসের জোটের নামকরণ হলো সেকুলার ডেমোক্রেটিক ফোর্স। এই নামেই এইদিন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করলেন নেতারা। তারা জানালেন, জোটের পরবর্তী কর্মসূচি হলো ২১ জানুয়ারী সাধারণ মানুষের তরফে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে ডেপুটেশন। রবীন্দ্রভবনে জমায়েত হয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল হবে শহরে। সুদীপবাবু বলেন, পরিস্থিতি আমাদের আজ বাধ্য করেছে এক জায়গায় আসতে। অতীতের তিক্ততা ভুলে আমরা আজ কাছাকাছি। এই কথা ঠিক যে জোট আমলে সিপিএম খুন হয়েছে আবার বাম আমলে কংগ্রেস খুন হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরের আমলেও তো এইগুলি বন্ধ করতে পারলেন না। সে জন্যই তো তাদের সরকারে আনা হয়েছিল। এক সুরে জিতেন চৌধুরী, সুদীপ রায় বর্মণেরা বললেন, পরিস্থিতি আজ এমন জায়গায় যে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত নয়। আমরা রাজনীতি করি মানুষের অধিকারের কথা বলতে। সেই অধিকার যাতে সুরক্ষিত রাখা যায় সে জন্যই আজ এই জোট। তিপ্রা মথার চেয়ারম্যান প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ বিজেপিবিরোধী এই জোটের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বলে জানালেন নেতারা।আগরতলা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মঞ্চে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরী, কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিন্হা, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান নারায়ণ কর, সুদীপ রায় বর্মণ ছাড়াও আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক, সিপিআই, সিপিআইএমএল (লিবারেশন), টিপিপির প্রতিনিধিরা ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন আশিস কুমার সাহা। মোট এগারো জনকে সঙ্গে নিয়ে এক সুরে কথা বলেছেন জিতেন চৌধুরী, সুদীপ রায় বর্মণ এবং বীরজিৎ সিন্হা। নেতারা এদিনও বলেন, আজ মানুষের একটাই প্রশ্ন, আদৌ কি ভোট দিতে পারব? এই আমলে সংবিধান অচল করে দেওয়া, নানান প্রতিষ্ঠানগুলিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মানুষের অধিকার হরণ করা চলছে। রাজ্যে দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান এই কারণেই। এই কারণেই জোটবদ্ধ হওয়া। দুই নেতাই এই দিন বললেন, শুধু সংবিধানপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ দলের জোট নয়, আমরা চাইছি জোট হোক মানুষের।জিতেনবাবু বলেন, দেশের নির্বাচন কমিশন যথার্থ উপলব্ধি করেছে এই রাজ্যে আগের সব নির্বাচনে জোচ্চুরি হয়েছে। তারা বুঝেছেন বলেই রাজ্যে সিইও জিরো পোল ভায়োলেন্সের মিশন নিয়েছেন। কমিশন যেদিন মানুষকে ভোটদানের ক্ষেত্রে আশ্বাস দিলেন সে দিনেই সূর্যমণিনগরে মন্ত্রী ভাষন দিলেন। বিরোধী দলের কাউকে কোনও এলাকায়, বাড়িঘরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সে রাতেই উদয়পুরে দলীয় অফিসে আগুন দেওয়া হলো। নাগরিক ফোরামের মিছিলের পর উদয়পুরে আরেক মন্ত্রীর নেতৃত্বে সারা রাত সন্ত্রাস চললো। মজলিশপুরে আরেক মন্ত্রীর ভিডিও ভাইরাল, তিনিই একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে বলছেন— ক্ষমতা থাকলে এই কেন্দ্রে একটা পথসভা করে দেখাও। রাজনগরে সুদন দাসের উপর হামলা কিন্তু প্রশাসনের অলক্ষ্যে না। তাহলে এতো এতো সেন্ট্রাল ফোর্স কী কাজে আসছে? জিতেনবাবু বলেন, মন্ত্রীদের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছে বিজেপি।সুদীপবাবু বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি ঘোষণার পর মজলিশপুর, রাজনগর, সুরমা, আজ সকালে মলয়নগরের ঘটনা দিয়ে বিজেপি ভারতের নির্বাচন কমিশনের জিরো পোল ভায়োলেন্স মিশনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। জিতেনবাবু বলেন, এই ঘটনাগুলিতে আমরা আতঙ্কিত। বামনছড়ায় প্রণজিত শুক্লদাসকে খুন করা হলো সে তিপ্রা মথার সমর্থক বলে। সেজন্য ২১ জানুয়ারী সিইও-কে ডেপুটেশনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সকাল দশটায় রবীন্দ্র ভবন চত্বরে জমায়েত হয়ে জেলাশাসকের দপ্তরে সিইও-কে ডেপুটেশন দেওয়া হবে। গণতন্ত্র আর সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ যেন উৎসবের মেজাজে ভোট দিতে পারেন। তা নিশ্চিত করার দাবিতে এইদিন সকল অংশের মানুষের উপস্থিতি চেয়েছেন নেতারা। এই মিছিলে মানিক সরকার থাকবেন কিনা প্রশ্নের জবাবে জিতেন চৌধুরী বলেন, আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি। এমনকি বিজেপির ভেতরে যারা শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন তাদেরও স্বাগত জানাই।
বীরজিৎ সিনহা ২১-এর মিছিল ডেপুটেশনে সবার উপস্থিতি আহ্বান করে বলেন,আমাদের দাবি হবে আমার ভোট আমার অধিকার। আমার ভোট আমি যাকে খুশি দেব। সেই অধিকার আমরা চাই। এদিন জাতীয় পতাকা নিয়ে আমরা মিছিল করবো। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নেতারা জানান, যে আসন যাকে দিলে বিজেপিকে পরাস্ত করা যাবে সে ভাবেই আসন ভাগাভাগি হবে। এই ধরনের যৌথমঞ্চে মথাকে কবে পাওয়া যাবে প্রশ্নের জবাবে জিতেনবাবুরা বলেন, আমাদের এই কাজগুলিতে তার সম্মতি রয়েছে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি যাতে সুযোগ না পায় সেরকম সব পদক্ষেপে তার সম্মতি রয়েছে। মথার গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড সম্পর্কে দুই দলই বলেছে, গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের অর্থ যদি হয় উপজাতি, সুযোগ বঞ্চিত মানুষের সার্বিক উন্নয়ন, তাহলে সেই গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডকে সমর্থন করি। কিন্তু এর অর্থ যদি হয় রাজ্যভাগ তাহলে আমরা নেই।প্রসঙ্গত, এদিন সকালে কংগ্রেস, বাম নেতাদের বৈঠক হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। ওই বৈঠকে আসন রফা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে জিতেন চৌধুরী বলেন কথা হয়েছে। আরও কথা হবে। তার বিশ্বাস আর দুই-তিন সিটিং-এর পর সব ফাইনাল করা যাবে। তিনি আশাবাদী মথার সঙ্গেও ফাইনাল হয়ে যাবে। এসব কাজের জন্য সময়ও বেশি নেই প্রসঙ্গে জিতেনবাবু বলেন, সময় কম ঠিকই তাও দেখবেন, বিজেপির আগেই আমরা প্রার্থী ঘোষণা সেরে নেব। দুই দলের নেতারাই জানিয়েছেন, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ণয়ে সবাই বসে ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি তৈরি করা হবে।