ভোটের খয়রাতি!!

 ভোটের খয়রাতি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্বাচনের সময় হলেই রাজনৈতিক দলগুলি দরাজহস্ত। দেশের নানা স্থানেই ভোটকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা উপহার বিলি করে বেড়ায় প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলই। ঢালাও হারে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের মধ্যে শুধু প্রতিশ্রুতিই বিলি করে তা নয়। বহু কোটি টাকার গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা দিয়ে সেগুলোর শিলান্যাস, উদ্বোধনের হিড়িক পড়ে যায় ভোটমুখো রাজ্যগুলোতে। এর বাইরে উপহার হিসাবে ভোটারদের নগদ টাকা বিলি, বিভিন্ন পরিষেবা খাতে ছাড় ঘোষণা করা, ক্ষমতায় এলে পড়ুয়াদের জন্য ল্যাপটপ, সাইকেল, স্কুটি সহ আরও নানারকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আছে বেকারদের জন্য চাকরির লম্বা প্রতিশ্রুতি। ভোটের আগে এমনসব প্রকল্প ঘোষণা, শিলান্যাস পর্ব, উপহার দেওয়া এবং প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে সাধারণ ভোটারদের নিরপেক্ষ চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে থাকেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা।

আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের প্রভাবিত করতে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ঢালাও প্রতিশ্রুতির কথা বলে থাকলেও, বাস্তবে এর অনেকগুলোই পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় এলে পূরণ করা হয় না। এর মধ্য দিয়ে কার্যত ভোটারদের প্রতারিত করা হয়। দেখা গেছে, রাজনৈতিক এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবে অর্থনৈতিক যে জোগান সেটা কীভাবে সম্ভব পর্যালোচনা না করেই রাজনৈতিক দলগুলো লোক ঠকানোর এই ব্যবসা ফেঁদে বসে ভোটারদের যেমন প্রতারিত করছে, তেমনি মানুষের স্বচ্ছ ও স্বাধীন ভাবনাকেও প্রভাবিত করছে। এই দেশে নির্বাচন এলেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট খয়রাতি এবং দেদার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নানা সময়ে বহু অভিযোগ উঠেছে। এবারও ৫ রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের প্রভাবিত করার বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে শোরগোল উঠেছে। বলা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল দেদার প্রতিশ্রুতির ডালি দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার কাজে নেমে পড়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে এমনই একটি অভিযোগ নিয়ে সমাজকর্মী জাটুলাল জৈন মামলা করেছেন। বলা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে এই ধরনের ভোট খয়রাতির ঘটনা নিরন্তর গত ক’ মাস ধরে চলছে। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এবং রাজস্থানের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভোটারদের প্রলুব্ধ করতে যথেচ্ছ অর্থ খরচ করছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ এই মামলার শুনানিতে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছে। একই সাথে কেন্দ্র, নির্বাচন কমিশন এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে এই মর্মে কারণ জানাতে বলেছে, কেন এভাবে দেশের কর দাতাদের অর্থ দেদার অপব্যয় হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত একথা স্পষ্টভাবে বলেছে, ভোটের আগে নিজেদের দিকে জনমত টানতে ক্ষমতাসীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতির টোপ দেয়-আসলে সেগুলো দেশের করদাতাদের টাকা। আর এভাবেই সেই অর্থের অপব্যয় করা হচ্ছে।ভোটের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি ৫ রাজ্যে। কিন্তু ভোটের ৬ মাস আগে থেকেই ক্ষমতাসীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো নানা কৌশলে মানুষকে প্রলুব্ধ করতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বিলি-বিতরণ শুরু হয়ে গেছে। একদিকে রাজ্যগুলো প্রায় প্রত্যেকেই বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে এগিয়ে চলছে। আরেকদিকে ভোট জিততে বিনামূল্যের উপহার বিলির প্রতিশ্রুতি চলছে। একসাথে এই দুই ঘটনা কার্যত দেশের অর্থ ব্যবস্থাকেই শুধু কঠিন সংকটে ঠেলে দিচ্ছে না, দেশের গরিব ও দূর্বল অংশের মানুষের উপর বোঝা বাড়াচ্ছে। প্রতি ভোটে দেশের সর্বত্র একই ঘটনা ঘটছে। এভাবেই দেশের করদাতাদের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। অথচ ভোটের এই খয়রাতি বন্ধ করা যাচ্ছে না। একই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গেও ঘটছে। কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী সেখানে ক্লাবগুলোকে আসন্ন পুজোর খয়রাতি দিচ্ছে। যদিও আসল উদ্দেশ্য আসন্ন ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। ইতোপূর্বেও দেশের সর্বোচ্চ আদালতে একই অভিযোগ জমা পড়েছে। বলা হয়েছিল নির্বাচনের আগে যারা উপহার বিতরণ করে এবং প্রতিশ্রুতি দেয়, সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতীক ও রেজিস্ট্রেশন যেন বাতিল করা হয়। কিন্তু এই সম্পর্কিত সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। অথচ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ও ভোটারদের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থায় আরও কিছু সংশোধনী ও সংস্কার জরুরি হয়ে পরেছে। এক্ষেত্রে কোনটা ভোটের খয়রাতি আর কোনটা জনকল্যাণের বিষয় সেই সম্পর্কে ও সুস্পষ্ট দিশা থাকা দরকার। আর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ও ভোটারদের প্রভাবিত করতে যে বিনামূল্যে পরিষেবা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড়ের প্রবণতা শুরু হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন করতে গেলে আর্থিক জোগান কোথা থেকে আসবে, সংশ্লিষ্ট দলকে তা জানাতে হবে। এর জন্য জাতীয় স্তরে সুস্থ বিতর্কও প্রয়োজন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.