ভোটের মুড
কংগ্রেস ভোটের মুডে রয়েছে। কংগ্রেস সিডব্লুসি’র বৈঠক শেষে এই মন্তব্য করেছে। সম্প্রতি উত্তর ভারতের তিন রাজ্য অর্থাৎ হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য মধ্যেপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। এই তিন রাজ্যের মধ্যে ২ রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। দুই রাজ্যই হারাতে হয়েছে তাদের। মধ্যপ্রদেশে ফল ভালো হয়নি। বিশ্রীভাবে হেরেছে কংগ্রেস। এর আগে গত বছর হিমাচল প্রদেশ এবং চলতি বছরের মে মাসে কর্ণাটকে জয়ের পর কংগ্রেস কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল। এর উপর গত বছর সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ভারত জুড়ো যাত্রা কংগ্রেসকে কিছুটা ডিভিডেন্ট দিয়েছিল। এরপর বিরোধী দলগুলির মধ্যে একটা উৎসাহ দেখা দেয়। গঠিত হয় বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট। এরই মধ্যে চলে আসে পাঁচ রাজ্যের ভোট। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে বিজেপির সাথে সরাসরি কংগ্রেসের লড়াই ছিল চার রাজ্যে। কংগ্রেস ধরে নিয়েছিল অন্তত তিনটি রাজ্যে জয় পাবে কংগ্রেস। ছত্তিশগড় ধরে রেখে বাদবাকি ২ রাজ্য তুলে নেবে কংগ্রেস এরকম ধারণা ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বের। এজন্য কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের কোনও শরিকের জন্য কোনও আসন রাখেনি এই সমস্ত রাজ্যগুলিতে। শরিক দলগুলিও মনে মনে ধরে নেয় যে হয়তো বা কংগ্রেসের দাবিমতো কংগ্রেস এই রাজ্যগুলিতে ভালো ফল করবে। তাতে লোকসভা ভোটে একদিকে চাঙ্গা হলে কংগ্রেস এবং তাতে আখেরে লাভ হবে ইন্ডিয়া জোটের। তাই ইন্ডিয় জোটের বৈঠক এতদিন আর হয়নি। তেমনি জোটের কাজকর্ম অর্থাৎ রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতা বা কোন্ ফর্মুলায় কে কোন্ রাজে আসন পাবে। তাদের মধ্যে আসনের ভাগবাঁটোয়ারা কীভাবে হলে ইত্যাদি ইত্যাদি তা এগোয়নি। ইতোমধ্যেই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল বের হয়েছে। দেখা গেছে কংগ্রেস ডাহা ফেল করেছে। একমাত্র শিবরাত্রির সলতে তেলেঙ্গানা। এবার শরিক দলগুলি কংগ্রেসের উপর আক্রমণ হানতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। পাঁচ রাজ্যের ভোটে শরিকদের ন্যূনতম সম্মান করেনি কংগ্রেস-এমন অভিযোগ এনেছে শরিকদলগুলো। এরপরই তড়িঘড়ি ইন্ডিয়ার বৈঠক ডাকে কংগ্রেস। কিন্তু সেই বৈঠকে কেউ যোগ দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় শরিক দলগুলি। এরপর কংগ্রেস আর সেপথ মাড়ায়নি। অবশেষে গত ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ার বৈঠক হয় দিল্লীতে। বৈঠকে একপ্রস্থ কংগ্রেসকে কথা শুনতে হয়েছে শরিক দলগুলির কাছে। পরদিনই অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী স্পষ্টতই জানান, চার রাজ্যে কংগ্রেসের ফলাফল মোটেই ভালো হয়নি। দল তা ভালো চোখে নেয়নি। সুতরাং দলকে ভালো ফল করতে হলে এখন থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল নিতে হবে। একইভাবে গতকাল অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে কংগ্রেসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যে কংগ্রেস পুরোপুরি ভোটের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন কমিটি গঠন খুব শীঘ্রই করা হবে। এককথায় কংগ্রেস ভোটের মুডে রয়েছে। কংগ্রেসের মতে, একদিকে দলকে পাঁচ রাজ্যের ভোটের পর ফের চাঙ্গা করতে হবে। তেমনি ইন্ডিয়া জোটের একটা ভালো ভূমিকা নিতে হবে। একই সাথে কংগ্রেসকে নয়া স্ট্র্যাটেজি নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। কেন না কংগ্রেস যে জাতগণনা, আদানি ইস্যু নিয়ে ভোট প্রচার করেছে তা মানুষ নেয়নি তাই প্রচারের স্ট্র্যাটেজি পাল্টাতে হবে। লোকসভা ভোটে অন্তত বিজেপির সামনে একটা সম্মানজনক লড়াই করতে গেলে কংগ্রেসের অনেক কিছু ভাবতে হবে। নয়া রণকৌশল নিতে হবে। তাহলেই যদি কিছু হয়, আপাতত কংগ্রেসের ‘ভোটের মুড’ কতখানি দলকে চাঙ্গা করতে পারে তাই দেখার।