এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। দেশে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম পর্বের ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পর গোটা দেশ যখন পুরোমাত্রায় ইলেকশন মুডে, ঠিক তখনই বৃহস্পতিবার রাতে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হলেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু কেউ তারা গ্রেপ্তারির সময় মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন না, কিংবা প্রথমে পদত্যাগ করে তারপর তারা জেলে গিয়েছিলেন। এর আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ২০১৩ সালে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হওয়ার পর নিজে থেকে পদত্যাগ করে স্ত্রী রাবড়িকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসান এবং পরে গ্রেপ্তার হন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও দুর্নীতির মামলায় ১৯৯৬ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালা এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী মধু কোড়াকেও গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে জেরার আগেই তারা ইস্তফা দিয়েছেন, কিংবা পদ ছাড়ার পর অভিযুক্ত হিসাবে জেরার মুখে পড়েছিলেন এবং পরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এরকম নজির কম নয়। গত কয়েক মাস আগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও দুর্নীতির অভিযোগেই গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। কিন্তু গ্রেপ্তারির আগে রাজভবনে ইস্তফা দেওয়ার পর ইডি সোরেনকে তুলে নিয়ে যায়। সেদিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের বাড়িতে ঢুকে ইডির তল্লাশি, ও জিজ্ঞাসাবাদের পর কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ভারতের ইতিহাসে নজিরবিহীন।দিল্লীতে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নীতি বদলের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই তদন্ত করছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি। এই মামলাতেই কেজরিওয়াল সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী মণীষ সিসোদিয়া ১ বছরের বেশি সময় ধরে জেলে আছে। দলের সাংসদ সঞ্জয় সিং একই মামলাতেই গত অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সম্প্রতি তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কে কবিতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের তদন্ত এজেন্সি ইডি এর আগে ৯বার কেজরিওয়ালকে জেরা করার জন্য সমন পাঠিয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জেরার মুখোমুখি হননি। ইডি বলছে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে এবং মণীশ সিসোদিয়া সঞ্জয় সিং আর কেজরিওয়াল মিলে দক্ষিণ ভারতের একটি মদ লবিকে অর্থ সাহায্য পাইয়ে দিতে এই মদ নীতি তৈরি করেছিলেন।
সব কিছুর মূল ষড়যন্ত্রকারী কেজরিওয়াল। কেজরিওয়াল সরকার ২০২১ গালের নভেম্বর দিল্লীতে নতুন একটি আবগারী নীতি চালু করেছিল। এই নীতিতে সরকার নিজে মদ বিক্রি থেকে সরে আসে এবং বেসরকারী লাইসেন্সধারীদের মদের দোকান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এই নীতিতে মদের বিক্রি আকাশ ছুঁয়েছিল এবং দিল্লী সরকারের রাজস্ব ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। যদিও বিজেপির এই নিয়ে তীব্র আপত্তির জেরে এবং এই নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর আবগারি নীতি প্রত্যাহার করে নেয় কেজরি সরকার। বারবার ইডি সমন পাঠিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে এই নিয়ে কেজরিওয়াল দীর্ঘদিন ধরেই সরব ছিলেন এবং দিল্লী হাইকোর্টে অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য আবেদন জানিয়ে রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই আবেদন খারিজ হতেই থাবা বসায় ইডি। কিন্তু ঠিক লোকসভা ভোটের মুখে একজন বিরোধীদলীয় মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করার পেছনে যে মূলত বিজেপির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে দেশের মোটামুটি সব বিরোধী দল এই প্রশ্নে একমত। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ভোট ঘোষণার আগেই কেন ইডি কেজরিওয়ালকে জালে তুলেনি? দেশজুড়ে আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ার পর এভাবে কোনও নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা যায় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। গত দুই বছর ধরে আবগারি দুর্নীতি মামলায় অন্ততঃ শতাধিক আধিকারিক তদন্ত করেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন টাকা উদ্ধার হয়নি। এই অভিযোগও তুলেছেন বিরোধীরা। ভোটের আগেই যদি এভাবে মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়ে যায় তাহলে নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘটনা অবশ্য এখানেই থেমে থাকেনি। কেজরির গ্রেপ্তারের পর এখন বঙ্গে মমতাকেও নিশানা করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির যে সে কারোর বিরুদ্ধে নয়। খোদ বঙ্গ রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দিকে। সুকান্তবাবু নাকি বঙ্গে স্লোগান তুলেছেন, “যতই করো কান্নাকাটি, মাফলারের পর হাওয়াই চটি”। জাতীয় রাজনীতিতে মাফলার ম্যান মানেই কেজরি, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চটি-প্রীতি সবারই জানা। স্বাভাবিক কারণেই কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের পর গোটা দেশে যে চিত্র, তাতে বিরোধী বেঞ্চকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার কাজটি যে সবার অজ্ঞাতেই ঘটে চলেছে এবং ইন্ডিয়া জোট বলে নয়, বিজেপির তথাকথিত ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি নিয়ে বিরোধীদের রুখে আক্র দাঁড়ানোর যে রসায়ন আপনা-আপনিই তৈরি হচ্ছে তা কিন্তু শাসক জান বিজেপিকেই কার্যত চক্রব্যূহের মধ্যে ক্রমশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে বলেই পরিস্থিতি-প্রেক্ষাপট আভাস দিচ্ছে। কারণ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে মা নিজেদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা-এতদিন এই নিয়ে ফিসফিস গুঞ্জন শোনা গেলেও কেজরির গ্রেপ্তার পর্বের পর এই প্রশ্ন দেশের শাসকশক্তির সম্পর্কে দানা বাঁধে কিনা সেটাই দেখার।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে মৃত্যু ঢাকুরিয়ার যাত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-হাওড়া থেকে পুরী যাচ্ছিলেন ঢাকুরিয়ার হিমাদ্রি ভৌমিক (বয়স ৫৭)। পথেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে…

15 hours ago

পাকিস্তানে ৪৮ ঘণ্টায় ২০ বার ভূকম্প!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রবিবার রাত থেকে কুড়িবার কেঁপে উঠে পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচি। রিখটার স্কেলে কম্পনের…

15 hours ago

ভয়াবহ বন্যায় ১৪ জনের মৃত্যু অসমে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বন্যায় ভয়াবহ অবস্থা উত্তর-পূর্ব ভারতে। টানা বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত অসম। সূত্রে খবর, ভয়াবহ…

17 hours ago

কুম্ভে মৃ*ত্যু হয়েছিল ৫০–৬০ জনের’ পদপিষ্টে ১১ জনের মৃ*ত্যুর পর সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পদপিষ্টে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনাতে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের দিকে তোপ দেগে দিয়েছেন বিজেপি।…

19 hours ago

পদপিষ্টে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ্যের আর্থিক সাহায্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বুধবার বেঙ্গালুরুতে আরসিবি টিমের বিজয়োৎসব চলছিল স্টেডিয়ামের ভেতরে। সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আরসিবি…

19 hours ago

আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে লন্ডনে মৌ স্বাক্ষর: প্রদ্যোত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের উপজাতি জনসমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ভারত সরকার। দেশের সরকারের নির্দেশিত…

19 hours ago