ভোট গণনার আগেই পরাজয় স্বীকার সিপিএমের!!!

 ভোট গণনার আগেই পরাজয় স্বীকার সিপিএমের!!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি।। ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে উপভোটে লুটপাট ও কারচুপি হয়েছে। এটা দেশের কাছে লজ্জাজনক বার্তা বহন করেছে বলে মন্তব্য করেছে সিপিএম পলিটব্যুরো। বিজেপি সরকারের নেতৃত্বে ভোট কারচুপির মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো শাসকের অপশাসনের দৌলতে ত্রিপুরায় গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে গণতন্ত্রের হত্যা চলছে। বুধবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে ত্রিপুরায় প্রহসনের নির্বাচনের বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেছে সিপিএম পলিটব্যুরো। কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে, ত্রিপুরায় নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্লোগানকে কালিমালিপ্ত করেছে বিজেপি। সারা দেশের মানুষের কাছে ত্রিপুরায় ৫ সেপ্টেম্বর ধনপুর এবং বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট লুটের ভিডিও প্রমাণসহ দেশবাসীকে তুলে ধরবে পলিটব্যুরো। ত্রিপুরায় ভোট লুটপাটের ছবিগুলি সামাজিক মাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমেও এসেছে। দেশের মানুষ বিজেপির আসল চেহারা দেখেছেন। ত্রিপুরায় গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। এরপরও বিজেপির উপভোটে সরাসরি কারচুপি প্রকাশ্যে করতে হচ্ছে। কারণ তাদের মানুষের উপর বিশ্বাস নেই। বিজেপির জনসমর্থন শূন্য। তাই পরাজয়ের ভয়ে এরা আবারও ত্রিপুরায় ভোট লুট করেছে বলে অভিযোগ করলো সিপিএম পলিটব্যুরো। সিপিএম পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে আরও বলেছে, ৫ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরার দুটি বিধানসভা কেন্দ্র বক্সনগর এবং ধনপুর – উপনির্বাচনে বিজেপি রাজ্য সরকারের সরাসরি মদতে উপভোটে লুটপাট, ছাপ্পাভোট, জবরদখল হয়েছে। ভোট লুটের উদ্দেশে একটি অস্বাভাবিক আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল শাসকদল বিজেপি। বিরোধী দলের ভোটার এবং সিপিএম পোলিং এজেন্টদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বক্সনগরে মাত্র ১৬ জন সিপিআই(এম) পোলিং এজেন্ট এবং ধনপুরে ১৯ জন ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তাদেরও শারীরিকভাবে নিগৃহীত করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। লোকসভা, পঞ্চায়েত, পুরনগর এবং টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্রের উপভোটের মতোই ধনপুর এবং বক্সনগর কেন্দ্রে উপভোটেও প্রহসন করেছে বিজেপি। এদিকে সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি ও ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে ধনপুর এবং বক্সনগরের উপভোট বাতিলের দাবি করেছে। মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মাকে গ্রেপ্তার করা এবং সিপাহিজলার এসপি, বক্সনগর ও ধনপুরের আরওকে শাস্তি দেবার দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে করছে সিপিএম। সিপিএম রাজ্য কমিটি নির্বাচন কমিশনকে এক চিঠিতে বলেছে, শাসকদল বিজেপির দুষ্কৃতীরা পুলিশ এবং সাধারণ প্রশাসনের একটি অংশকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালিয়ে গিয়েছে। নির্বাচনি এলাকা এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে বহিরাগতদের তাড়িয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ৩ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই শাসকদল বিজেপি দুষ্কৃতীদের বিপুল সংখ্যক নির্বাচনি এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ভোটের দিন লুটপাট চালানোর জন্য দুষ্কৃতীদের উভয় নির্বাচনি এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ৪ সেপ্টেম্বর রাতে সিপিএম নেতা আবু জাফরকে বিজেপি প্রার্থী তফাজ্জল হোসেনের মদতে বক্সনগরে তার বাড়িতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ভোটের দিন ভোর থেকে বিজেপির জড়ো হওয়া বহিরাগতরা সন্ত্রাস ও ভয় দেখিয়ে বিরোধী সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়নি।ধনপুর বিধানসভার মোহনভোগ এলাকায় মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা নেতৃত্বে ভোট লুট চলে। টিওয়াইএফ নেতা জয়ন্ত দেববর্মার উপর হামলা করা হয়। বিধায়ক রামপদ জমাতিয়াও এই বিধানসভা কেন্দ্রে ছিলেন। ভোটারদের নামে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত ভোট দেন। দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির দুষ্কৃতীদের উপস্থিতিতে বেশিরভাগ ভোটারকে বিজেপিকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এভাবে দুই কেন্দ্রেই নির্বাচনকে সম্পূর্ণ প্রহসনে পরিণত করে বিজেপি। এদিকে ধনপুর ও বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপভোট বাতিল করার ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশন না নেওয়ায় আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ধনপুর ও বক্সনগর বিধানসভা ‘ভোট গণনা’ বয়কটের ডাক দিয়েছে সিপিএম।

কিন্তু রাজ্য রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের অভিমত, সিপিএম নেতৃত্ব ভোটের আগে নানা কথা বললেও, ভোটের প্রচারে নেমে দেখে অন্য চিত্র। বামেদের দূর্গ বলে পরিচিত ধনপুর এবং বক্সনগর দুই কেন্দ্রেই বামেদের পরিস্থিতি ভয়ানক। সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে। দলীয় কর্মী সমর্থকেরা ঘরে বসে গেছে। এমনকি কট্টর সিপিএম ঘরের লোক বিজেপিতে সামিল হয়ে গেছে। শাসক দলের রক্তচক্ষু প্রতিরোধ করার মতো ক্ষমতাই নেই সিপিএমের। শুধু তাই নয়, দল সব বুথে পোলিং এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারেনি। এই করুন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস ও ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলা ছাড়া সিপিএমের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। এর থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, সিপিএম ক্ষমতায় থাকলে একরকম। ক্ষমতা হাতছাড়া হলেই তাদের অস্তিত্ব যে সংকটময় হয়ে উঠে, উপ ভোট তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.