ভোট বড় বালাই!

 ভোট বড় বালাই!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২৪ সালে দেশে লোকসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। তার আগে দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করিয়া লওয়া মোদি সরকারের নিকট এক চ্যালেঞ্জ। ডিসেম্বরে প্রায় সারা মাসব্যাপী চলিবে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন।আর এই অধিবেশন শেষ হইবার পর কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটের কথা ভাবিতে বসিবে।২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে ইহাই হইবে মোদি সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট।এই বাজেট কীভাবে মনোহরা এবং জনমনমোহিনী করা যায় সেই চিন্তায় থাকিবে সরকার।

ঘটনা হইলো সরকারের কোষাগারের আকার আয়তন অনুযায়ীই বাজেটের ছাড়,জনগণের বাড়তি সুযোগ সুবিধার কথা ভাবিয়া থাকে।সেই সঙ্গতি কি এই সময়ে কেন্দ্র সরকারের রহিয়াছে? পূর্বতন অর্থবর্ষের একটি এবং বর্তমান অর্থবর্ষের দুইটি অর্থাৎ পরপর তিনটি ত্রৈমাসিকের প্রবৃদ্ধি কিন্তু নৈরাশ্যজনক ছিল সরকারের জন্য।প্রত্যাশার কাছাকাছিও যায় নাই প্রবৃদ্ধির গতি।তুলনায় বাড়িয়াছে পণ্যের খুচরো এবং পাইকারি মূল্য। একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের অভাব চলিতেছে ঠিক তাহার পাশাপাশি পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনে ত্রাহি রব তুলিয়াছে। আবার বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমিয়া যাওয়ায় উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হইয়াছে।

Price-hike

তবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক হইলো উৎসবের সময়কার। সরকার আশাবাদী এই ত্রৈমাসিকে আর্থিক অবস্থার হাল খানিক শুধরাইবে।আবার এই বছরে বর্ষণ ছিল আশানুরূপ।ফলে কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদনও হইবে প্রত্যাশা মতন।রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আভাস অনুযায়ী দুই দুইটি কোভিড বছরের পর এই বছরে ব্যাঙ্কগুলি তুলনামূলক ভালো ব্যবসার মুখ দেখিতেছে।এই সকল আভাসে সরকার এতোটাই আশাবাদী যে আর্থিক সংস্কারের পাগলা ঘোড়াকে ২০২৪-এর ভোটের আগে পর্যন্ত লাগাম লাগাইয়া রাখিবার কথাই বিবেচনা হইতেছে। আর্থিক সংস্কারের গতি লইয়া শাসকদলের অভ্যন্তরেই সরকারের উপর চাপ রহিয়াছে বলিয়া জানা যায়।

ফলে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্ক বিলগ্নিকরণে বা একত্রীকরণে কোনও বিল আনিতেছে না বলিয়া জানা যায়। যদিও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ ঘোষণা করিয়াছিলেন,চলতি আর্থিক বছরেই একাধিক ব্যাঙ্ক বিক্রি কিংবা সংযুক্তি করিবে কেন্দ্রীয় সরকার।বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে সংযুক্তিকরণের কাজ চলিতেছে ২০১৭ সাল হইতে।ফলে দেশে সেই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ছিল ২৭,বর্তমানে তা আসিয়া দাঁড়াইয়াছে ১২তে। এই বারোটি ব্যাঙ্ককে যে ১২তেই রাখা হইবে এমন নহে, সংখ্যা আরও কমাইয়া দেওয়া হইবে অথবা বিক্রয় করিয়া দেওয়া হইবে যুতসই গ্রাহক মিলিলে।

সব মিলাইয়া গোটা কয়েক ব্যাঙ্ক নিজেদের হাতে রাখিয়া ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অন্যরকম চেহারা দিবার কথা ভাবিতেছে। ইহাই আর্থিক সংস্কারের পরিকল্পনা।বিগত শতকের সাতের দশকে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করিয়াছিলেন আর এই সময়ে চলিতেছে বেসরকারীকরণের হয়েে চূড়ান্ত পর্যায়। মনমোহন সিং অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব লইবার সময়কাল হইতেই পেয়ে দেশে বিলগ্নিকরণ,উদারিকরণের পর্যায় শুরু হইয়া যায়। ইহার পর আজ প্রধানমন্ত্রী মোদির আমলে ইহার গতি হইয়া গিয়াছে বল্গাহারা।এই তীব্রতার সহিত যুঝিয়া উঠিতে পারিতেছে না দেশের বর্তমান অর্থনীতির চাকা।

বস্তুত ২০২৪ নির্বাচনের আগে সেই কারণেই গতি খানিক কমাইতে চাহিতেছে সরকার, এমনই মনে করিয়া থাকেন অর্থ বিশেষজ্ঞরা।অর্থমন্ত্রীর ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণের ঘোষণার পর বিষয়টির সম্পাদন কী প্রকারে তাহা নির্ণয় করিতে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ আইনের সংশোধনী আইন প্রণয়ন হইবে। সেই জন্য সংশোধনী বিল আনা হইবে সংসদে।ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণ ছিল এই সরকারের অগ্রাধিকার কর্মসূচি। কিন্তু দেখা যাইতেছে সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে সেই বিল আসিতেছে না। সরকার বিল লইয়া কোনও কথা বলিতেছে না। মানে এইরকম ভাবনা চিন্তাই নাই সরকারের।

মানে ইহাকে আর অগ্রাধিকার ক্ষেত্র বলিয়া ভাবিতেছে না সরকার।শোনা যায়,সরকার বেসরকারীকরণ লইয়া আর না ভাবিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে।তবে এই সিদ্ধান্ত কিন্তু ঘোষিত নয়। ঘোষিত হইবার উপায়ও নাই।কারণ নীতি আয়োগ বলিয়া দিয়াছে অন্তত আরও দুই খানি ব্যাঙ্ককে বেসরকারীকরণ করিতে হইবে। সেই সুপারিশ পাইয়া কোন্ স্ট্রাক দুইটি ব্যাঙ্ককে বেসরকারীকরণে পাঠানো হইবে তাহার তালিকা বানাইতে থাকে। শোনা গিয়াছিল প্রথমেই থাকিবে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। ওভারসিজ খনিনি ব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের নামও আসিতেছিল।কিন্তু সকলই বুঝি থামিয়া গেল ২০২৪-এর নির্বাচনের কথা ভাবনায়। ভোট বড়ই বালাই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.