ভোট ভাগ ঠেকাতে কংগ্রেস মথার সঙ্গে জোট তৈরি সিপিআই(এম)

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিজেপির সরকার হটানোই প্রথম কাজ। সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ধরে রাজ্যেও বিজেপিবিরোধী জোটে রাজি সিপিএম ৷ জোট হতে পারে মথা, কংগ্রেসের সঙ্গে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরীকে পাশে বসিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা জানালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএমের মতে, দেশে এই সময়ে সবার আগে দরকার বিজেপি হটানো যারা ধর্মনিরপেক্ষ, যারা সংবিধানের সঙ্গে থাকবেন – তাদের যারা আসতে চান তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। এক কথায় তেইশের নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকাতে জোট কিংবা আসন সমঝোতা যেকোনও ধরনের রাস্তায় অবিজেপি ভোট ঠেকাতে সিপিএম তৈরি রয়েছে বলে জানালেন নেতারা। মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকশেষে বুধবার সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ইয়েচুরি। তিনি জানান, রাজ্যে জোট কার সঙ্গে কোন্ পন্থায়, কত আসনের ভাগাভাগি এ বিষয়গুলি রাজ্যনেতারা স্থির করবেন। মথার দাবি দাওয়া পৃথক ত্রিপুরা গঠনের দাবির পরস্পরায়, তাদের দাবির সঙ্গে সিপিএম কীভাবে একমত হচ্ছে, প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেন, মথা যা দাবি করছে তা সংবিধানের মধ্যে থেকেই করছে। আমরাও তো বলি সংবিধানের মধ্যে এডিসিকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হোক। এ বিষয়ে কথা বলতে বলতে একসময়ে জিতেন চৌধুরীকে প্রশ্নের জবাব দিতে বলেন ইয়েচুরি। জিতেনবাবু খোলসা করে বলেন, আগে নানা সময়ে স্বাধীন ত্রিপুরার স্লোগান এসেছে। কিন্তু এবার বিষয়টি ভিন্ন। সাংবিধানিক দাবি উত্থাপন করে মধ্য সাংবিধানিকভাবেই সমাধান চাইছে। ইয়েচুরি জুড়ে দেন, যারা সংবিধানের আওতায় রয়েছেন তাদের সঙ্গে যেতে আমাদের আপত্তি নেই। প্রশ্ন আসে, সাংবিধানিকভাবে ত্রিপুরা ভাগের কথা এলে তখনও কি আপনারা সঙ্গে থাকবেন ? জবাবে ইয়েচুরি বলেন, সে পরের কথা। আগে দেখতে হবে গদিতে কে? বিজেপি হটল কিনা ? প্রসঙ্গক্রমে উদাহরণে বলেন, কংগ্রেস তো জরুরি অবস্থা জারি করেছিল, আমরা তো জরুরি অবস্থা সমর্থন করি না! প্রসঙ্গত, রাজ্য কমিটির সম্মেলনে দলের রণকৌশল নির্ধারণে এসেছিলেন ইয়েচুরি, কারাত। কী রণকৌশল? জিতেনবাবু বলেন, নীতি স্থির হয়েছে। এবার আমরা আলোচনা করব সম্মানজনকভাবে কীভাবে কী করা যায়। সেই স্তরে এখনও কথাবার্তা শুরু হয়নি। মানিক সরকার ভোটে লড়বেন কিনা, কংগ্রেসের সঙ্গে কত আসনে রফা হবে বা আঠারোর ভোটে উপজাতি এলাকায় রিক্তহস্ত সিপিএম এবার উপজাতি মুখ্যমন্ত্রী করবে কিনা এই ধরনের প্রশ্নের জবাব নেতারা এড়িয়ে গেছেন। তাদের প্রথম ও শেষ কথা – – আগে বিজেপি হটাই, তারপর দেখা যাবে। আর ইয়েচুরি বললেন, এ বিষয়গুলি রাজ্যদল দেখবে। বিজেপিকে দেশের ক্ষমতা থেকে হটানো কেন জরুরি, এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি আরএসএস সরসঞ্চালকের বক্তব্যের উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেন, তারা বললেন হাজার বছর ধরে যে যুদ্ধ চলেছে সেই যুদ্ধে খানিক আক্রমণাত্মক রূপ দেখালে দোষের কিছু নেই। যুদ্ধে শত্রু বাইরের নয়। ভেতরেরই শত্রু। এরা হলো মুসলিম, খ্রিস্টান ও কমিউনিস্ট। ইয়েচুরি সংঘ সরসঞ্চালকের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, এই ধরনের বক্তব্যের পর দেশের সংবিধানের আর কী দরকার রইলো? এই ধরনের বক্তব্যের প্রভাব কেবল রাজনীতি নয়, সমাজেও পড়ছে। ২০২৪ নির্বাচনের আগে এই ধরনের বক্তব্য তাদের হাতিয়ার। হিংসা আর জাতিগত সমীকরণ। বিজেপি আরএসএসকে ঘৃণার যন্ত্র’ বলেও মন্তব্য করেন এদিন। জিতেন চৌধুরী অভিযোগ করেন, ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে থেকে পাঁচ তারিখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুটি সভায় বিজেপির প্রচারের খরচের টাকা মেটানোর জন্য বিভিন্ন জেলাশাসকের দপ্তরে বিল পাঠানো হচ্ছে বলে তিনি জেনেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ভালো করে পরীক্ষা করে বিল পাস করুন, নয়তো ভবিষ্যতে জবাব দিতে হবে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বাড়িতে আক্রমণের যে অভিযোগ বিপ্লববাবু করেছেন ও রাজ্যের বাইরের মিডিয়া একটি বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে দোষারোপ করে যে সংবাদ প্রকাশ করেছে সেই ঘটনাকে মারাত্মক ক্ষতিকর বললেন জিতেন চৌধুরী। তিনি বলেন, বিপ্লব দেবের বক্তব্য অস্বীকার করেছে পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রীও। এই ধরনের ঘটনার এনআইএ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নেয়। বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধেও এই ধরনের মামলা নেওয়ার দাবি করেছেন জিতেন চৌধুরী। কারণ এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগে রাজ্যের সর্বনাশ হতে পারতো। ময়দানে নেমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, শুভেন্দু অধিকারীর নানা বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জিতেন চৌধুরী বলেন, ত্রিপুরার মানুষকে তারা কেন এত অবোধ, বোকা ভাবেন? ভোট আসে ভোট যায়, কিন্তু ভোটকে ব্যবহার করে ব্যক্তিবিশেষ আমাদের সংহতি, পরম্পরা ধ্বংস করবে এটা ঠিক নয়। বিজেপির উন্নয়নের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যে উন্নয়ন বুঝতে হলে মণ্ডলের নেতাদের বাড়িতে যেতে হবে। পাঁচ বছরে টিনের, শনের চাল কীভাবে অট্টালিকা হয়েছে, বাইসাইকেল কীভাবে এসইউভি, ইনোভা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ভোটের পর সিপিএমকে দুরবিন দিয়ে দেখতে হবে। এ কথা বলতেন জওহর সাহা ১৯৮৮ থেকে ৯২ ওই সময়ে। তাকে আজ দূরবিন দিয়েও দেখা যায় না। এবার মানিক সাহার অবস্থাও তাই হবে। তবে দূরবিন নয়, বিন তারা ভালো চিনেছেন। ডাস্টবিন। মানিক সাহাকে যিনি তুলে এনেছিলেন সেই বিপ্লব দেব এখন যেখানে, ক’দিন পর মানিক সাহাও সেখানেই যাবেন।

Dainik Digital

Recent Posts

যুদ্ধবিমান নিয়ে কালই মহড়া ভারতের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বুধবার পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর বড়সড় মহড়া দিতে চলেছে ভারতের বায়ুসেনা।…

6 hours ago

প্রতিবন্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রেকর্ড ফলাফল দিব্যাঙ্গ কিশোরীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-একদিকে আর্থিক সংকট অপরদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রেকর্ড ফলাফল…

10 hours ago

অসম্ভবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্যের বুকে রেকর্ড গড়ল পাইলোনাইডল সিনাস নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এক ছাত্র!!

অনলাইন প্রতিনিধি :এবছর কমলপুর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ৩৮০ নম্বর…

10 hours ago

এক বছর ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া,ধর্মনগর ক্রিকেট অ্যাসোর সংযোগ ছিন্ন করলো নিগম!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মাত্র একদিন আগেই রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ খোলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল…

12 hours ago

আক্রান্ত শহিদের স্ত্রী!!

বিয়ের ছয়দিনের মাথায়, মধুচন্দ্রিমা যাপনে গিয়ে চোখের সামনে জঙ্গিদের বুলেটে স্বামীকে হারানো স্ত্রীর বুকফাটা কান্না…

12 hours ago

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যের আঁশ!!

দৈনিক সংবাদ অনলাইন :-বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রতিদিনে খাদ্য তালিকা খাদ্যের আঁশের ওপর বেশ জোর দেওয়া…

12 hours ago