ভয়াবহ বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী!!

 ভয়াবহ বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার পৌরোহিত্যে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনাসমূহ নিয়ে বুধবার বিশদ পর্যালোচনা করা হয়। রাজ্যে বন্যা পরবর্তী ত্রাণ ও পুনরুদ্ধারের কাজকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে সকল দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং সকল জেলাশাসকদের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে পর্যালোচনা বৈঠক হয়।এদিন সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ মর্মে জানান রাজস্ব সচিব ব্রিজেশ পাণ্ডে।
রাজস্ব সচিব জানান, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে বর্তমানে এখন রাজ্যে ৬৭টি শরণার্থী শিবিরে ৩ হাজার ৮৭৩ জন মানুষ আশ্রিত রয়েছেন। তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পানীয় জল, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৩৬ জন বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বন্যায় মৃত ৩৬ জনের মধ্যে ২৬ জনের পরিবারকে ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ এবং সাত জনকে অন্তর্বর্তীকালীন আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।বাকীদেরও শীঘ্রই প্রদান করা হবে।তিনি জানান, সমগ্র রাজ্যে সম্পূর্ণ, মারাত্মক এবং আংশিকভাবে ৬২ হাজার ২০৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এরমধ্যে ১০ হাজার ৪৮৩টি ঘরের জন্য ১১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার অন্তর্বর্তী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান,রাজ্যের সমস্ত স্কুল ও কলেজগুলি চালু হয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও স্বাভাবিক। রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রায় কুড়ি হাজার বই বিতরণ করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে মিড- ডে-মিলও চালু আছে। খাদ্য দপ্তরের উদ্যোগে আগামী দুই মাস রেশন কার্ড প্রতি অতিরিক্ত দশ কেজি চাল
দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই চাল দেওয়া প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।সচিব জানান, রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৬৬৪ টি রাস্তার মধ্যে ৮১টি রাস্তার পুনসংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৮৭টির কাজ চলছে,৫৫৩ টির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন এবং ৮৪৩টি রাস্তা সংস্কারের অ্যাস্টিমেট করা হয়েছে।পূর্ত দপ্তর রাজ্যের বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত প্রধান রাস্তাগুলির পুনরুদ্ধার ও সাড়াইর কাজ আগামী ৫ অক্টোবর ২০২৪ এর মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।জল সম্পদ দপ্তরের ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ১৩৬টি এলআই প্রকল্পের মধ্যে ১৪০টি প্রকল্পের কাজ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ৪২৬টি কাজ চলছে।স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২টি স্বাস্থ্য শিবিরে ১ লক্ষ ১০ হাজার ২৮৯ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।এখন পর্যন্ত কোনও প্রকার জলবাহিত রোগের খবর নেই।বিদ্যুৎ দপ্তর সমস্ত সাব-ডিভিশন এবং ডিভিশনগুলিতে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। অমরপুর, শান্তিরবাজার, সাক্রম এবং উদয়পুরে ১৫-১৮ শতাংশ বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।এই সপ্তাহের মধ্যে ১০০ শতাংশ করা হবে বলে সচিব জানান।সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান,এদিন সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার পৌরোহিত্যে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনাসমূহ নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা করা হয়। সভায় মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব সহ বিভিন্ন দপ্তরের সচিব এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতি, বর্তমান অবস্থা এবং পুনসংস্কারমূলক কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।সভায় রাজ্যের আটটি জেলার জেলাশাসকগণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার বন্যা ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান, বর্তমান স্থিতি ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য ৫৬৪ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার পূর্বে গত ২৭ আগষ্ট মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবিলম্বে ত্রাণ ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নিকট অর্থ বরাদ্দের জন্য অনুরোধ করা হয়।পরবর্তীকালে ৩০ আগষ্ট ২০২৪ মন্ত্রিসভার বৈঠকেও সচিবগণ এই দাবি উত্থাপন করেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও অর্থ দপ্তরের পরামর্শক্রমে এই আর্থিক প্যাকেজ চূড়ান্ত হয়।রাজস্ব সচিব জানান,আজকের মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি দপ্তরের সচিবদের বন্যাকালীন সময়ে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ যেভাবে করা হয়েছিল ঠিক সেইভাবে একই গতিতে পুনরুদ্ধার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।সভায় আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের নির্দেশ দেন বর্তমান ত্রাণ শিবিরগুলিতে গুণমান সম্পন্ন খাবার, স্বাস্থ্য পরিষবা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার উপর।এই সপ্তাহের মধ্যে বন্যায় মৃত পরিবারগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া নিশ্চিত করতে গুরুত্ব আরোপ করেন।পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলির ক্ষতিপূরণ দ্রুত দেওয়ার কথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের প্রজেক্ট অফিসার শরৎ দাস ও ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের অধিকর্তা জে ভি দোয়াতী।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.