মণিপুরের সমাধান কোথায়

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পূর্বোত্তরের অশান্ত রাজ্য মণিপুরে শান্তি ফেরাতে অবশেষে কিছুটা উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। তীব্র সমালোচনার মুখে কেন্দ্র সম্প্রতি মণিপুর নিয়ে দিল্লীতে সর্বদলীয় বৈঠক করেছে। তাও মণিপুরে হিংসা শুরুর পঞ্চাশ দিন পর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বৈঠক ডেকেছেন। অনুপস্থিত প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তখন বিদেশ সফরে। মণিপুরে গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে হিংসা চলছে। প্রধানমন্ত্রী চুপ। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সম্প্রতি কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এক ভিডিও বার্তায় মণিপুর নিয়ে সরব হয়েছিলেন। মণিপুরের কিছু বিরোধী দলের বিধায়ক কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দিল্লীতে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়ে বসেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেখা করেননি। ফলে মণিপুরে হিংসা দমন নিয়ে কেন্দ্রের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আদৌ কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরে হিংসা দমাতে আন্তরিক কিনা সে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। গত ৩রা মে থেকে অশান্ত মণিপুর। স্থানীয় মেইতি এবং কুকিদের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ থেকেই এই হিংসার সূত্রপাত। দফায় দফায় সংঘর্ষ, সরকারী, বেসরকারী সম্পত্তি নষ্ট, ধ্বংস, লুট, নির্বিচারে মানুষজনের বাড়িঘরে হামলা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, বোমা, গুলী নিয়ে হামলা কোনও কিছুই বাদ যায়নি। এ রাজ্যের এ অবধি প্রাণ গেছে ১২০ জনের মতো নিরীহ নাগরিকের। প্রায় তিন সহস্রাধিক মানুষজন আহত হয়েছেন। ষাট হাজার মানুষ গৃহহীন। পড়শী রাজ্যগুলির বহু ছাত্র ছাত্রী কার্যত পালিয়ে বেঁচেছে মণিপুর থেকে। বহু মানুষ আশ্রয়স্থলে এখনও পড়ে রয়েছেন। কিন্তু সেখানেও নিরাপদ নেই তারা। দুষ্কৃতী হামলা চলছে। সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনীকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। যেতে দেওয়া হচ্ছে না ঘটনাস্থলে। এ এক অরাজক পরিস্থিতি রাজ্য জুড়ে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতার অভাবে এখনও রাজ্য জুড়ে হিংসা চলছে। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ি এবং রাজ্যের এক মন্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছেন। কেন্দ্র এবং রাজ্যে একই দলের সরকার। চাইলেই ডাবল ইঞ্জিন সরকার কড়া হাতে তা দমাতে পারত। কিন্তু তা কেন করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিংসার প্রায় মাস খানেক পর সেরাজ্যে গিয়ে প্রায় তিন-চারদিন ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন কিন্তু আদতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলে পূর্বোত্তরের ‘অমিত শাহ’, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকেও তিনিও ব্যর্থ মণিপুরে হিংসা দমাতে ।
বিরোধীরা লাগাতর বলতে আরম্ভ করল যে, মণিপুর কি দ্বিতীয় জন্ম কাশ্মীর হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার কি মণিপুরকে তা-ই বানাতে চাইছে। এতদিন ধরে পূর্বোত্তরের একটি রাজ্যে হিংসা চলছে। দমাতে পারছে না রাজ্য, না কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর আশ্চর্যজনক নীরবতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সইতে হয়েছে বিজেপিকে। অবশেষে পঞ্চাশদিনের মাথায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দিল্লীতে সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। এর আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা মণিপুরের মেইতি এবং কুকি নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন। কিন্তু কোনও সুরাহা বের হয়নি। পরে দিল্লী গিয়ে হিমন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। এরপরই সর্বদলীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার হিমন্তের চোখ দিয়ে মণিপুরকে দেখতে চেয়েছিল। হিমন্ত ব্যর্থ হওয়াতে মণিপুরেও মা হিংসা দমনে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থ।হিমন্ত বারবারই সংকটমোচন হিসাবে দেখা দেবেন – এ ধারণা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন এবার হিমন্ত নিজেই। হিমন্ত কেন্দ্রীয় সরকারকে সঠিক তথ্য তুলে ধরতেও ব্যর্থ হয়েছেন।তাই দিল্লীতে হিমন্তকে ডেকে পাঠিয়ে মণিপুর নিয়ে একপ্রস্থ জেনে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে সর্বদলীয় বৈঠক করলেন। যদিও সর্বদলীয় বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে বলে কোনও খবর নেই। বিরোধীরা রাজ্যে সর্বদলীয় দল পাঠানোর প্রস্তাব করেছে। কংগ্রেস বলেছে বৈঠক দিল্লীতে নয়, বৈঠক করতে হবে ইম্ফলে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকেও দিল্লীতে ডেকে পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফের একপ্রস্থ বৈঠক করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং তাকে জানান, রাজ্যে গত চৌদ্দ জুনের পর কোনও মৃত্যু নেই। তিনি একে সাফল্য হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন। বাস্তব হলো, মণিপুরে হিংসা অব্যাহত। এখনও সেনাবাহিনীর উপর হামলা চলছে। বোমা, মর্টার হামলা চলছে। এখনও সাধারণ মানুষ রাস্তায় বের হতে পারছে না। একটা দেশের এক অঙ্গরাজ্য দিনের পর দিন জ্বলছে, হিংসা চলছে আর সরকার তা দমাতে পারছে না, এটা কোনও সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে কাম্য নয়। অচিরেই মণিপুরে হিংসা দমাতে কেন্দ্র এবং রাজ্যকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে। শাসক দলকে সর্বাগ্রে এই ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে মানুষ দলকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে তবেই সরকারে বসায়। মানুষের জানমাল, নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। সরকারে বসে সেই মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। মণিপুরের মানুষ ভালো নেই। তাই সে রাজ্যের মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নি:শব্দে এগোচ্ছে চিন!!

প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…

13 hours ago

নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…

13 hours ago

স্মার্টসিটি প্রকল্পের কাজে বন্ধ উড়াল সেতু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেররাজধানী শহর আগরতলার যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে উড়াল সেতু। শহরের পশ্চিম…

13 hours ago

বার্ষিক পরীক্ষার সূচি নিয়ে শিক্ষা দপ্তরের রসিকতায় চরম ক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেরসরকারী স্কুলে পরীক্ষার সূচি প্রকাশ হতেই রাজ্যের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের উপর জুলুমের অভিযোগ উঠেছে…

13 hours ago

রাজ্যের প্রতীকে স্বীকৃতি কেন্দ্রের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট একটি প্রতীককে ত্রিপুরা সরকারের রাজ্য প্রতীক/লোগো হিসেবে ব্যবহারের…

13 hours ago

চূড়ান্ত সীলমোহর পড়বে ১০টি সাংগঠনিক জেলা সভাপতির নামে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকালই বিজেপির দশটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নামে চূড়ান্ত সীলমোহর পড়বে।…

13 hours ago