মণিপুর-কঠোর হোক প্রশাসন।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কিছুদিন শান্ত থাকার পর ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। পূর্বোত্তরের সাত বোনের এক বোন মণিপুর প্রায় মাসখানেক আগে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে। স্থানীয় ২ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে ক্রমেই হিংসাদীর্ণ হয়ে উঠে রাজ্যটি। ফলে বহু নিরীহ নাগরিক প্রাণ হারায়। সরকারী, বেসরকারী সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বহি:রাজ্যের প্রচুর ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে মণিপুরে।তারা প্রাণভয়ে বাড়িঘরে ফিরতে বাধ্য হয়।কেন্দ্রীয় বাহিনী, সেনা নামিয়ে তিন-চারদিনের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা সামলে দেয় রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।যেভাবে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরের পরিস্থিতি সামলে দেয় তা সাধুবাদযোগ্য।একটা সময় ছিল সংবাদ শিরোনাম হতো পূর্বোত্তরের হিংসার ঘটনা। নাগাল্যাণ্ড,আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, মেঘালয় ইত্যাদি রাজ্যের হিংসার ঘটনা পত্রিকায় জায়গা করে নিতো। প্রতিদিনই কোনও না কোনও রাজ্যে হিংসা, জঙ্গি আক্রমণ, অপহরণ ইত্যাদি লেগেই ছিল।একটা সময় আসামের আলফা জঙ্গি,বড়ো জঙ্গিদের দাপট ছিল।নাগাল্যাণ্ডে এনএসসিএন বৈরী গোষ্ঠী, মণিপুরে জঙ্গি দল,ত্রিপুরায় টিএনভি,এনএলএফটি, এটিটিএফের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে নিরীহ নাগরিকদের প্রাণহানি,সরকারী সম্পত্তি লুট, নষ্ট করা ইত্যাদি খবর হতো। দেশের বাকি রাজ্যের মানুষজন পূর্বোত্তরকে জঙ্গিপ্রবণ এলাকা হিসাবেই ধরে রাখতো। অন্যদিকে ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। তিল তিল করে সেই বাধা অনেকটা দূর করছে পূর্বোত্তর। পূর্বোত্তরে জঙ্গিদের হিংসা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। উন্নয়নের মূলস্রোতের সাথে জোড়াচ্ছে পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলি।সেই নিরিখে পূর্বোত্তরকে এখন শান্তির অঞ্চল হিসাবেই চিহ্নিত করা যায়।

এহেন পূর্বোত্তরের মণিপুরে হঠাৎ করে গত মাসখানেক আগের হিংসার ঘটনায় সবাই বিচলিত। স্থানীয় মণিপুরি মেইতেই জনগোষ্ঠীকে এসটি হিসাবে স্বীকৃতি দেবার একটা দাবি উঠে। সেই থেকে হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠে কুকিরা। দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।পরে সেই সংঘর্ষ মারাত্মক হিংসার রূপ নেয়। মণিপুরে স্থানীয় মেইতেই ভাষাভাষীর লোকজন প্রায় ৫২-৫৩%। কুকি জনগোষ্ঠীর বক্তব্য হলো,তাদের যদি এসটি হিসাবে স্বীকৃতি মেলে তবে কুকিদের অধিকার খর্ব হবে এবং সবকিছুতেই তারা পিছিয়ে যাবে। যদিও মণিপুরি মেইতেইদের এসটি হিসাবে স্বীকৃতি দেবার বিষয়ে পাকাপাকি কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।এ নিয়েই ব্যাপক হিংসা একপ্রস্থ।তাও কিছুটা মিটে গেছিল সেনা,নিরাপত্তা বাহিনীর কারণে।কিন্তু ফের নতুন করে হিংসা ছড়াচ্ছে।এবার কুকিরা জঙ্গির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যারা বাড়িঘর ছেড়ে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে তাদের উপর হামলা করছে গত কয়দিন ধরে।

এখানেও অবশ্যই সরকারের গাফিলতি রয়েছে। মণিপুরি মেইতেই মানুষজন কিছুদিন ধরেই সরকারকে দোষারোপ করছিল। এমনকী ক্ষুদ্ধ নাগরিকরা ২দিন ২ মন্ত্রীর বাড়িতে আক্রমণও করে। এর মধ্যে একজন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী, অপরজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানানো, সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো পরিস্থিতি কি ভয়াবহ হলে এমনটা হতে পারে।মানুষজন সরকারের কাজকর্মে দারুণ ক্ষুব্ধ।একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, নির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজই হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করা। নাগরিকরা যাতে নিৰ্ভয়ে থাকতে পারে তা সুনিশ্চিত করা।কিন্তু সেখানে প্রশাসনের নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আশ্রয় শিবিরে কুকি জঙ্গিরা হামলা চালাচ্ছে তাহলে প্রশাসন কোথায়?প্রশাসনের গা ঢিলেমি ভাব নয় তো এটা।এরই মধ্যে সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডের মণিপুরে সফরের দিনও কুকি জঙ্গিরা শিবিরগুলির উপর হামলা চালিয়াছে। যদিও সরকার দাবি করেছে,সেনার পাল্টা হামলায় প্রচুর কুকি জঙ্গি নিহত হয়েছে। সময় এসেছে কঠোর হাতে জঙ্গি মোকাবিলা করার। আবার মণিপুর অশান্ত হোক – দিনের পর দিন অশান্তি লেগে থাকুক তা আমরা চাই না। কেউ চায় না। কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথভাবে মণিপুরের হিংসাশ্রয়ী ঘটনার কঠোর হাতে মোকাবিলা করুক -এটা সময়ের দাবি।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

5 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

6 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

6 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

6 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

7 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

7 hours ago