মনজয়ী ভাষণে বাম-কংগ্রেসকে নিশানা করে বললেন এরা জিরো!!
অনলাইন প্রতিনিধি :- কাকতালীয় কিনা জানা নেই, তবে শনিবার রাজধানীর টাউন হলে বিজেপির জনজাতি মোর্চার কার্যকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত সভায় আচমকা হাজির হয়ে সকলের মন জয় করে নিলেন তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। সম্ভবত এই প্রথম ভারতীয় জনতা পার্টির কোনও রাজনৈতিক সভা মঞ্চে ভাষণ দিলেন প্রদ্যোত কিশোর। মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, বিজেপির দুই আসনের প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব এবং কৃতি সিং দেববর্মণ, বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, দুই মন্ত্রী শান্তনা চাকমা ও বিকাশ দেববর্মা, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া সহ জনজাতি মোর্চার রাজ্য নেতৃত্ব। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার টাউন হলে জনজাতি মোর্চার কার্যকর্তাদের সভা আহ্বান করা হয়েছিল।
সেই সভাতেই এদিন আচমকা হাজির হন প্রদ্যোত কিশোর। সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে নিশানা করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। এদিন ভাষণের শুরুতে তিনি বলেন, ভোলাগিরি মাণিক্য এনক্লেভে তিপ্রা মথার বৈঠক ছিলো। সেই বৈঠকে এসে জানতে পারলাম এখানে জনজাতি মোর্চার সভা হচ্ছে। তাই চলে এলাম। আমার মনে হয়েছে, এই বৈঠকে আমার আসা উচিত, তাই এলাম। এরপরই মঞ্চে উপবিষ্ট পশ্চিম আসনের প্রার্থী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। তিনি বলেন, তিপ্রাসাদের প্রকৃত অর্থে যদি কেউ মন থেকে ভালোবেসে থাকে, তিনি বিপ্লব কুমার দেব। রিয়াং শরণার্থী সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে খুমুলুঙে হাসপাতাল নির্মাণে অর্থ প্রদান বিপ্লববাবু সবকিছু মন থেকে করেছেন। হাসপাতালের জন্য আমরা ২২ কোটি টাকা চেয়েছিলাম, বিপ্লববাবু একদিনের মধ্যে আমাদের ৩০ কোটি টাকা দিয়েছেন। বিপ্লববাবুর হৃদয়ে প্রকৃত অর্থেই রাজ্যের তিপ্রাসাদের জন্য ভালোবাসা রয়েছে। আমরা এবার দিল্লীতে এমন দুজনকে পাঠাচ্ছি, তারা প্রকৃত অর্থেই সবকা সাথ সবকা বিকাশ চান। প্রশংসা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহারও। তিনি বলেন, রাজ্যের তিপ্রাসাদের উন্নতি চাইলে, তিপ্রাসাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করতে হলে লাল ঝাণ্ডায় হবে না। আমি জানি, দিল্লীতে যে সরকার রয়েছে, সে সরকার আমাদের তিপ্রাসাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই চিন্তাভাবনা করছে। ইগো এবং অহঙ্কার থাকলে হবে না। ইগো পতন ডেকে আনবে, আর অহঙ্কার আমাদের কোনওদিন উপরে উঠতে দেবে না। তাই সবাইকে একসাথে থেকে কাজ করতে হবে।
লোকসভা নির্বাচনে আমাদের রাজ্য থেকে বিজেপির দুই প্রার্থীকে রেকর্ড ভোটে জয়ী করতে হবে। প্রদ্যোত বলেন, আমার বোন কৃতিকে আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম। আর বিপ্লব দেবকে রেকর্ড ভোটে জয়ী করার দায়িত্ব আমি নিলাম। তিপ্রাসাদের বুঝতে হবে কে আমাদের প্রকৃত অর্থেই মন থেকে ভালোবাসে। আর কে অন্য কিছু করতে চায়। যারা আজ আমাদের টার্গেট করছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই আমরা যা করেছি খোলাখুলি। এতে লুকোচুরির কিছু নেই। আমিও কংগ্রেসে ছিলাম। ২০০৮, ২০১৩ জয়ী হবো ভেবেও আমরা জয়ী হতে পারিনি। কারণ রোমিও-জুলিয়েটের ভালোবাসা ছিল। ১৯৯৩ সালে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার এই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ত্রিপুরাকে সিপিএমের হাতে তুলে দিয়েছে। কংগ্রেসের কোনও শীর্ষনেতা এই রাজ্যে প্রচারে আসেনি। এর উদ্দেশ্য কী ছিল? সবসময় তিপ্রাসাদের দাবিয়ে রাখা হয়েছে।প্রদ্যোত কিশোর বলেন, মানিক সরকার যদি দেশের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী বলে প্রচার করেন, তাহলে এটাও সত্যি যে তিনি এই রাজ্যের তিপ্রাসাদের গরিব বানিয়ে রেখেছেন। জিতেন্দ্র চৌধুরী তিপ্রাসা বলে বিধানসভা ভোটে তার বিরুদ্ধে আমরা কোনও প্রার্থী দিইনি। কিন্তু এখন বিধানসভায় গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কারণ তাদের ভাবনা হচ্ছে পার্টি, তাদের ভাবনা হচ্ছে তিপ্রাসাদের গরিব রাখা। আজ গোটা উত্তর পূর্বের মধ্যে এই রাজ্যের তিপ্রাসারা সবথেকে গরিব। কেন এমনটা হবে। আজ আমাদের সমস্যা নিয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সমাধানের। আমি কে? যে বলবো আপনি অসত্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দশ বছর কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার ছিলো। আমি নিজে কংগ্রেসে ছিলাম। কতবার আমরা আর্জি জানিয়েছি। কিছুই মেলেনি। গত ২৫ বছর এই রাজ্যে শুধু বিরোধীদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। মানুষকে শোষণ বঞ্চনা করা হয়েছে। আজ সিপিএম-কংগ্রেস জোট করছে। এত নাটক কেন? আমি কংগ্রেস সভাপতি ছিলাম। কিন্তু আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। কারণ ওরা চায় না এই রাজ্য থেকে আমি সিপিএমকে হটিয়ে দিই। তাই আমাকেই সরিয়ে দিয়েছে। এমবিবি এয়ারপোর্ট কে দিয়েছে? মোদি সরকার দিয়েছে। তিপ্রাসাদের কখনও ভুল রাস্তায় যাওয়া উচিত নয়। দিল্লীতে কংগ্রেস সরকার আর আমরা সিপিএমের সাথে। কিন্তু কী পেয়েছি? আজ নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ আছেন। এখানে মুখ্যমন্ত্রী, এমপি এবং আমি আছি। সিপিএম-কংগ্রেস জিরো। এরা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাদের একটাই লক্ষ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করা। এটাই তাদের রাজনীতি। তাই সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে এবং দুই আসনে বিজেপি প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়ী করতে হবে। এদিন প্রদ্যোতের বক্তব্যে টাউন হলে মোর্চার কার্যকর্তাদের ঘন ঘন হাততালিতে স্পষ্ট – মন জয় করে নিয়েছেন প্রদ্যোত।