দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি || প্রায় শতাব্দী প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দল আজ গভীরতর অস্তিত্বের সঙ্কটে দাঁড়িয়েছে।১৯২৫ সালে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের উদ্যােগে কানপুরে যে পাটির রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিলো, সেই কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া সংক্ষেপে সিপিআই ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতিতে একটা সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছে গোটা দেশে।
গীতা মুখার্জীর মতো অগ্নিস্রাবী নেত্রী, যিনি গোটা সংসদ একাই উত্তাল করে দিতেন ধারালো যুক্তি, তথ্য আর সমালোচনায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক আদর্শকে ফালা ফালা করে দিয়ে, সেই সিপিআই এখন ভারতীয় রাজনীতি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া একটা দল মাত্র। গত ১০ এপ্রিল দেশের নির্বাচন কমিশন একটি ঘোষণায় তৃণমূল কংগ্রেস, এনসিপি পার্টির পাশাপাশি সিপিআইয়েরও জাতীয় দলের স্বীকৃতি বাতিল করে দিয়েছে।
রাজনৈতিক গুরুত্বের নিরিখে অনেকেই হয়তো সিপিআই কিংবা এনসিপি দলের তুলনায় তৃণমূলের জাতীয় দলের স্বীকৃতি বাতিলের ঘটনাকে বড় করে দেখবেন। কিন্তু ভারতের জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটকে মাথায় রাখলে সিপিআই দলের স্বীকৃতি বা জাতীয় দলের তকমা বাদ পড়ার ঘটনাটা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এবং তাৎপর্যপূর্ণ দিকনির্দেশ হতে চলেছে। মনে রাখতে হবে সিপিআই গত তিন দশক ধরে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হলেও একটা সময় এই দলটি কিন্তু গোটা দেশে বিস্তারলাভ করেছিল। কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং বিহারের মতো বড় বড় রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল ছিল সিপিআই, কিন্তু সময়ের চক্রে আর সবকিছুর মতোই সিপিআই-কে একটা সময় বড়সড় ধাক্কার মুখে পড়তে হয়েছে যখন ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের ইস্যুকে ঘিরে সিপিআই ভেঙে দুটুকরো হয়ে সিপিএমের যাত্রা শুরু হয়।
তারও আগে সিপিআই জন্মলগ্ন থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি বিশেষ করে কংগ্রেস বা দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করার রসদ জুগিয়েছিল এই বামপন্থী দলটি। কিন্তু কংগ্রেস বিরোধিতার এই অবস্থান ধরে রাখতে পারলো না সিপিআই। মূলত কংগ্রেস- সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যেকার মাখামাখির কারণে ক্রেমলিনের চাপেই রাতারাতি ঢোঁড়া সাপের চেহারা নেয় সিপিআই। সেই থেকেই দলে ভাঙন ও কংগ্রেসের দোসর হিসাবে পরিচিতি পাওয়া সিপিআই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়তে শুরু করে। ভোটের মুখে দেওয়ালে দেওয়ালে কার্টুনে ভরে যায় “দিল্লী থেকে এলো গাই, সঙ্গে বাছুর সিপিআই”। এভাবেই অধোগমন শুরু হয়েছিল সিপিআইয়ের। আর এই সুযোগেই সিপিএম ফুলে ফেঁপে বেড়ে উঠে বামপন্থীদের মধ্যে নিজের বিগ ব্রাদার ইমেজ গড়ে তুলে। দুর্বল সিপিআই বুঝতে পেরেছিল ভারতে বামপন্থীদের আবার একজোট হওয়া দরকার। নইলে বামপন্থাই এদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
এটা উপলব্ধি করে সিপিআইয়ের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি এবি বর্ধন প্রকাশ্যেই সিপিএমের কাছে দুই বামদলের পুনর্মিলনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন । কিন্তু তখন রাজ্যে প্রবল পরাক্রমশালী দল হিসাবে দেশের তিন রাজ্য ত্রিপুরা করালা, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে সিপিএম । তাই আরেক ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ মহাবলশালী’ প্রকাশ কারাত পত্রপাঠ এবি ধনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। সময়ের হাত ধরে, দিন বদলে গিয়ে এখন বামেদের হাতে রইলো শুধু একমাত্র কেরালা। সিপিআই রাজনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছিল গত ২-৩ দশক ধরেই। তবুও টিকে ছিল শরিকি দয়ায়। এবার কমিশনের চিঠি পেয়ে তাদের আমও গেল ছালাও গেল। জাতীয় দল হতে গেলে এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, লোকসভার ভোটে অন্তত ৩ রাজ্যে প্রার্থী দিতে হবে একটি দলকে এবং জিততে হবে দেশের মোট লোকসভার আসনের ২ শতাংশ সিট। দ্বিতীয়ত,লোকসভা কিংবা বিধানসভার ভোটে অন্তত ৪ রাজ্যে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। সেই সঙ্গে ৪ টি লোকসভার আসন জিততে হবে। আর তৃতীয়ত, চারটি বা তার বেশি রাজ্যে স্টেট পার্টির মর্যাদা থাকতে হবে সেই দলকে। তবেই সেই পার্টি জাতীয় দলের স্বীকৃতি পাবে। এই জাতীয় দল হওয়ার সুবিধাও বেশ কিছু আছে। সারা দেশে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জন্য একটাই প্রতীক থাকে যেটা আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
এই দলগুলো পার্টির অফিস স্থাপনের জন্য সরকার থেকে জমি পায়। ভোটের প্রচারে ৪০ জন তারকা প্রচারক তারা নিয়োগ করতে পারেন। সর্বোপরি ভোটের খরচের বিষয়টিতেও তাদের জন্য যথেষ্ট সরলীকরণ করা আছে। এই অবস্থায় সারা দেশে এমনিতেই বামেদের যখন দেওয়ালে পিঠি ঠেকে গেছে, সেখানে সিপিআইয়ের জাতীয় স্বীকৃতি হারানো এদেশে বাম আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখাই বড় প্রশ্ন। একমাত্র সিপিএম এখনে নিভু নিভু দশায় শিবরাত্রির সলতে হয়ে কোনভাবে জ্বলছে। বাদবাকি অন্য বামদলের অবস্থা আরও করুণ। শুধুই শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্বদিয়ে বর্তমান ভারতের মতো জটিল রাজনীতিতে টিকে থাকা যে সম্ভব নয় সেটা বামপন্থীরা বেমালুম ভুলে গেছে। ফলে সিপিআইয়ের পরিনতি আগামীতে সিপিএমের জন্যও যে অপেক্ষা করছে এটা যত তাড়াতাড়ি সিপিএম উপলব্ধি করতে পারবে ততই তা এদেশের বামপন্থীদের জন্য অক্সিজেন হিসাবে কাজ করবে। অন্যথায় ভারতীয় রাজনীতির তথা বামপন্থার জন্য ঘোষিত সিদ্ধান্তটি যে একটা টার্নিং পয়েন্ট দিক নির্ণয়কারী হিসাবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায় ৷
অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এপ্রিল মাসের শেষে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পাস করিয়ে দেবার নাম করে ডা. সোমা চৌধুরী নামে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা টিএফএর সংবিধান সংশোধন করার নামে নিজেদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার…
অনলাইন প্রতিনিধি :-এডিসির ৩০২ টি স্কুলে শিক্ষক ১ রয়েছে।জাতীয় স্তরে প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র- শিক্ষকের অনুপাত…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বামফ্রন্টের টানা ২৫ বছরে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের কোনও উন্নয়নই হয়নি। সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে…
একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। কথাটা বোধহয় এক্ষেত্রে একেবারে যথার্থভাবে ধ্বনিত হয়।গত কয়দিন ধরেই…