মহাকাশে ইঁদুরের ভ্রূণ তৈরি করে মানব প্রজননের পথ খুঁজলেন বিজ্ঞানীরা।
এই প্রথম মহাকাশে ইঁদুরের ভ্রূণ বিকাশের পরীক্ষায় সাফল্য পেলেন বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ভ্রূণ তৈরির এই পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘নিউ সায়েন্টিস্ট ডট কম’ নামে বিজ্ঞানীমহলে পরিচিত ওয়েবসাইট।ইঁদুরের ভ্রূণ তৈরির গবেষণার মাধ্যমে আদতে মহাশূন্যে অতি কম
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে মানুষের গর্ভাবস্থার পরিস্থিতি বুঝতে এই পরীক্ষা চালানো হয়।জাপানের ইয়ামানাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল,জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিকেন এই গবেষণা পরিচালনা করে।গবেষণার
ফলাফল মার্কিন বিজ্ঞান জার্নাল আইসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।জাপানের ইয়ামানাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী তেরুহিকো ওয়াকায়ামা বলেন,’ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহ পরিভ্রমণের সময় নারীদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে।মঙ্গল গ্রহে যেতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে।সেই সময় নিরাপদে সন্তান ধারণের বিষয়টি
জানতে আমরা গবেষণা চালাচ্ছি।’কী ভাবে চলে এই গবেষণা? গর্ভবতী ইঁদুর থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা ভ্রূণ বের করে সেটিকে হিমায়িত করা হয়।পরে সেই ভ্রূণকে ২০২১ সালের আগস্টে ফ্লোরিডা থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয়। গবেষক দল ৭২০টি দুই কোষের হিমায়িত ইঁদুরের ভ্রূণ মহাকাশে পাঠায়। বিশেষ একটি বাক্সে ভ্রূণ সংরক্ষণ করা হয়। আইএসএসের জাপানি পরীক্ষাগার কিবোতে ৩৬০টি সেল বা কোষের কালচার করা হয়।মহাকাশের ওই অঞ্চলে এক মাত্রার মাধ্যাকর্ষণ রয়েছে।বাকি ৩৬০টি কোষের শূন্য মাধ্যাকর্ষণে কালচার করা হয়।নভোচারীরা যেন সহজেই ভ্রূণ নিষিক্তের পরীক্ষা করতে পারেন, সেই বিষয়গুলি মাথায় রাখা হয়।চার দিন ধরে কোষ কালচার করা হয়। আইএসএসে অবস্থানকারী জাপানি মহাকাশচারী আকিহিকো হোশিদে প্রেরিত ভ্রূণের নিষেক ও কালচারের কাজ করেন।এরপর মহাকাশচারীরা রাসায়নিকভাবে ভ্রূণকে সংরক্ষণ করে পৃথিবীতে ফেরত পাঠান।বিজ্ঞানী ওয়াকায়ামা বলেন, ‘ভ্রূণ শুধু চার দিনে বিকশিত হয়। জরায়ুর বাইরে একই সময় পর্যন্ত ভ্রূণ সক্রিয় থাকতে পারে। মহাকাশ থেকে ফিরে আসা ভ্রূণ নিয়ে এখন বিস্তর গবেষণা চলছে।ভ্রূণের বিকাশে উচ্চতর বিকিরণ ও কম মাধ্যাকর্ষণ কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা নির্ণয় করা হবে।তিনি জানান, বিকিরণের সংযোগের কারণে ভ্রূণের ডিএনএতে এখনও কোনও ক্ষতি দেখা যায়নি।আগে মনে করা হয়েছিল, মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি কোষ বিকাশের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। মহাকাশ থেকে পাঠানো নমুনায় দেখা যায়, ভ্রূণ ও প্ল্যাসেন্টার ভিত্তি তৈরি করে এমন দুটি কোষের মধ্যে পার্থক্যসহ স্বাভাবিক কাঠামো রয়েছে।