মহুয়ায় জোটবদ্ধ ইন্ডিয়া!!

 মহুয়ায় জোটবদ্ধ ইন্ডিয়া!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অনৈক্যের চেহারা এক জাদুবলেই উধাও।ইস্যু মহুয়া মেত্রের সাংসদ পদ খারিজ।গত কয়েকমাস ধরেই মহুয়া ইস্যুতে দিল্লী থেকে কলকাতার রাজনীতি সরগম ছিল।এরপর মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ ইস্যুতে সংসদ উত্তাল হল শুক্রবার।এর রেশ পড়ল এসে সংসদের বাইরে।

গান্ধীমূর্তির পাদদেশে স্বয়ং সোনিয়া গান্ধীকে পর্যন্ত ধর্নায় বসতে দেখা গেল।হিন্দি বলয়ে তিন রাজ্যে কংগ্রেসের হারে ইন্ডিয়া জোটে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু মহুয়া ইস্যুতে ফের এককাট্টা হলো ইন্ডিয়া –এই প্রমাণ মিললো শুক্রবার।এবং মহুয়া ইস্যু যে বিরোধীরা ছেড়ে দেবে না এর ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বিরোধী নেতৃত্ব।লোকসভা ভোটের আগে ইন্ডিয়া জোটের একটা ইস্যু দরকার ছিল।কেননা সদ্যসমাপ্ত পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনে তিন রাজ্যে কংগ্রেসের পরাজয়ের পর ইন্ডিয়ার শরিকদের মধ্যে অনৈক্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।সবাই প্রায় একবাক্যে কংগ্রেসের ‘দাদাগিরি সুলভ আচরণের জন্য কংগ্রেসকে প্রকাশ্যে গালমন্দ করে।এই তালিকায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় থেকে নীতীশ কুমার, মায়াবতী থেকে অখিলেশ, ফারুক আবদুল্লা প্রমুখ ছিলেন।

কিন্তু শুক্রবার আচমকা মহুয়া ইস্যুতে সংসদে একজোট হল ইন্ডিয়া।

অধীর চৌধুরী থেকে মণীশ তেওয়ারি দৃঢ় বক্তৃতা করলেন সংসদে মহুয়া ইস্যুতে।মহুয়া ইস্যুতে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের ফের অটুট থাকাটা জরুরি ছিল।তিন রাজ্যে ধাক্কার পর ইন্ডিয়া জোটের কাছে একটা ইস্যু দরকার ছিল।মহুয়া ইস্যু তাদের ফের এককাট্টা হবার সুযোগ এনে দিল।মহুয়া কী করেছিলেন? মহুয়ার অপরাধ কী ছিল। মহুয়া কি শাসকের ষড়যন্ত্রের শিকার?সংসদে যে কয়জন শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তাদের মধ্যে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ছিলেন অন্যতম। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো -তিনি ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেছিলেন। এতে সাংসদ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তার সাংসদের ইমেলের আইডি, পাসওয়ার্ড অন্যকে শেয়ার করেন।মূলত মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন তার এক সময়ের বন্ধু এক আইনজীবী।এবং অভিযোগের ভিত্তিতে লোকসভার স্পীকারের কাছে অভিযোগটি করেন মহুয়ার আরেক প্রাক্তন বন্ধু বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।অর্থাৎ মহুয়ার ঘনিষ্ঠ লোকেরাই মহুয়াকে ফাঁসিয়েছেন বলা যায়। তারা মহুয়ার প্রত্যেক মুহূর্তের গতিবিধি লক্ষ্য রেখেছেন।মহুয়া প্রশ্ন করেছেন দুবাইভিত্তিক তার আরেক বন্ধু দর্শন হীরানন্দনের পক্ষ নিয়ে— অভিযোগ এমনটাই।আসল কথা হচ্ছে, মহুয়া লোকসভায় আদানির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন।এই আদানির মোদি ঘনিষ্ঠ এ নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।এর আগে গত এপ্রিল মাসে রাহুল গান্ধী আদানির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পর পাঁচ বছর আগেকার পুরনো একটি মামলায় রাহুল গান্ধীর ২ বছরের সাজা হয়।এর ফলশ্রুতিতে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়।
এবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ লোকসভার এথিক্স কমিটির রিপোর্টের মোতাবেক খারিজ হয়ে যায়।এ নিয়ে বিরোধীরা একযোগে হামলে পড়ে সরকারের উপর।বিরোধীদের অভিযোগ, মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।সরকার পক্ষ পাল্টা জানায় যে ২০০৫ সালেও কংগ্রেস রাজত্বে ১১ জন বিরোধী সাংসদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছিলো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে।এ নিয়ে সরকার পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়।এবার দেখার, বিরোধী ইন্ডিয়া জোট মহুয়া ইস্যুতে সরকার পক্ষকে কতখানি বেগ দিতে পারে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হতে চলেছে।এই বৈঠকে একদিকে পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা যেমন হবে তেমনি ইন্ডিয়া জোটের রাজ্যে রাজ্যে প্রার্থী বাছাই তথা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হবে।কেননা আগামী মাসেই রামমন্দির উদ্বোধন।এই উপলক্ষে শাসক বিজেপি দেশব্যাপী প্রায় দেড় মাস ব্যাপী কার্যক্রম নিচ্ছে। এর রেশ ধরে রাখতে রাখতে লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা করতে চাইছে শাসক শিবির। সুতরাং ইন্ডিয়া জোটের কাছে এটাই মোক্ষম সুযোগ।একজোট হয়ে শাসকের বিরুদ্ধে অলআউট ফাইটে নামতে হবে।তাহলেই যদি লোকসভায় কিছু করা যায়।

যদিও ইতিমধ্যেই তিন রাজ্যে জয়ী হয়ে বিজেপি এখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে। নরেন্দ্র মোদির অপ্রতিরোধ্য অশ্বমেধ ঘোড়াকে কতখানি ইন্ডিয়া জোট বেগ দিতে পারে তাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.