রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
মহুয়ার সাংসদ পদ বাতিল!!
অনলাইন প্রতিনিধি :- মহুয়া মৈত্রের সংসদ পদ বাতিল হয়ে গেল। তৃণমূলের এই এমপির বিরুদ্ধে সংসদের এথিকস কমিটি আগেই রিপোর্টে দিয়েছিল। সরকার পক্ষের হয়ে ৬ জন মহুয়া মৈত্রকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আর বিরোধী সদস্যদের ৪ জন বিরুদ্ধাচরণ করেছে। এথিকস কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে সংসদে এই সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। শুক্রবার সেইমতোই দুপুর ১২ টার সময় এথিকস কমিটির ওই রিপোর্ট লোকসভায় পেশ করা হয়। আর তারপরই ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে আলোচনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। ওই আলোচনার শুরুতেই কংগ্রেস সহ বিরোধীরা তীব্র বিরোধিতা করে যে হঠাৎ কী এমন যুদ্ধকালীন তৎপরতা এল যে, একটি রিপোর্ট পেশ হওয়ার মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে আলোচনা করতে হবে? যেকোনও রিপোর্ট সংসদে পেশ হওয়ার পর সেটি এমপিদের পড়ার জন্য সময় দেওয়া হয়। কংগ্রেস এমপি
অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, মাত্র দেড় ঘন্টায় প্রায় ৫০০ পাতার রিপোর্ট পড়ার মতো দক্ষতা কজনের আছে আমার এমপি জানা নেই। অন্তত তিন চারদিন সময়দেওয়া হোক। যদিও সেই দাবি বা দার আবেদন মানা হয়নি। বরং বিজেপিএমপি হিনা গাভিট বলেন, দেড় দুই ঘন্টায় রিপোর্ট পড়তে সমস্যা কী?
আমি তো পড়ে নিলাম। যদিও সম্মিলিত বিরোধীদের দাবি ছিল, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই মহুয়া মৈত্রকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হোক। এটাই তো বিচারের পদ্ধতি। তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্পণে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাঁকে কেন এমপি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? যদিও এই বাদানুবাদ ও আলোচনার পর ভোটাভুটিতে মহুয়া মৈত্রের এমপি পদ বাতিলের সিদ্ধান্তই নেওয়াহয়। আর তারপরই দেখা গেল বিরোধী সব দলই মহুয়া মৈত্রের পাশে রয়েছে। এমনকী কংগ্রেস এমপি সোনিয়া গান্ধী পর্যন্ত সংসদ ভবনে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিরোধীদের অবস্থান বিক্ষোভে হাজির হন। ইন্ডিয়া জোটের একটি সম্মিলিত চিত্র দেখা যায়। বিরোধীদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ পরিকল্পিত চক্রান্ত। গোটা প্রক্রিয়া থেকেই সেটা স্পষ্ট। পক্ষান্তরে স্পিকার বলেছেন, এই সংসদের একটি আই গরিমা আছে। ঐতিহ্য আছে। আমি কখনও চাইব না কোনও এমপি সংসদ পদ বাতিল হোক। কিন্তু এথিকস কমিটির রিপোর্ট দেখে এবং সম্মিলিতভাবে সিংহভাগ সদ্যদের অভিমত শোনার পর সংসদই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, মহুয়া মৈত্রের পক্ষে আর এপি পদে থাকা উচিত নয়। তাঁর বিরুদ্ধে অত্যন্ত গর্হিত অভিযোগ উঠেছে। আর সেটা সংসদের জন্য সম্মানজনক নয়। প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে একটি স্টিং অপারেশন হয়েছিল এমপিদের নিয়ে। সেখানে গোপন ক্যামেরায় দেখা যায় এমপিরা ঘুষ নিচ্ছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এথিকস তদন্ত করে। আর তারপর ১০ জন এমপির পদ বাতিল করা হয়। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল, তিনি টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেন। শিল্পসংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ সংসদ ভবনের বাইরে অস্বীকার করেছেন মহুয়া। তিনি এ দিন বলেন, আমার লড়াই চলবে। ৩০ বছর ধরে লড়াই চালাব দরকার হলে। জিতে ফিরব। এদিকে এ দিনই বোঝা যায় যে, তৃণমূল কংগ্রেস তো বটেই, গোটা বিরোধী জোট তাঁর পাশে রয়েছে। কলকাতা থেকে রাজীব মৈত্র জানাচ্ছেন:- অভিযোগের তদন্ত না করে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়ে, এমনকী বিচার প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই যেমন অতি-সক্রিয়তার সঙ্গে মহুয়া মৈত্রকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হল তাতে ‘স্তম্ভিত’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারী সফরে কার্শিয়াঙে দাঁড়িয়ে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ লোকসভায় যা হয়েছে, তা শুনে আমি স্তম্ভিত।
শুক্রবার দুপুর তিনটে নাগাদ মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাবে সিলমোহর দেন স্পিকার ওম বিড়লা। তার পরেই সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বলেন, আমরা এর ঘোর নিন্দা করছি। মহুয়ার সঙ্গে দল ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুরোটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে করা হয়। মহুয়ার সঙ্গে সুবিচার করা হল না। ওর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হল, আবার ওকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারও করা হল। এই ঘটনা থেকে বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আরও একবার প্রমাণিত হল। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি। মহুয়ার সঙ্গে ঘটা এই ঘটনা ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের আরও একজোট করে তুলেছে বলে জানান মমতা।
তিনি বলেন, ‘আমি ‘ইন্ডিয়া’কে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা একজোট আছি। ইন্ডিয়ার সঙ্গে মিলেই দল মহুয়ার হয়ে লড়বে। আমরা সকলে বিজেপি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।
বিজেপি সাংসদে নিশিকান্ত দুবে মহুয়ার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন গত ১৭ অক্টোবর। ঘটনার গোড়ার দিকে তৃণমূলকে মহুয়ার পাশে দাঁড়াতে বিশেষভাবে দেখা যায়নি। বরং দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, এ ব্যপার দলের কোনও বক্তব্য নেই। মহুয়ার ব্যাপারে যে সব অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে সাংসদ নিজেই জবাব দেবেন। পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মহুয়ার লড়াই তার একার। একাই সেই লড়াই তাকে লড়তে হবে। তিনি লড়াকু সাংসদ। তিনি নিজের লড়াই নিজেই লড়তে সক্ষম। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে গোড়া থেকে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস। তাদের প্রথম থেকেই বক্তব্য ছিল, মহুয়া যেহেতু আদানিদের নিয়ে সংসদে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন তাই তাকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি। সেই সময় এমনও জল্পনা ছড়ায় যে, তৃণমূল মহুয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারে এবং তা করলে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। মহুয়ার পাশে বাকি বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা সরব হলে তৃণমূল তাদের অবস্থান বদলে মহুয়ার পাশে খোলাখুলি দাঁড়ায়। নবান্ন থেকে সাংবাদিকদের সামনে মহুয়ার পাশে থাকার বার্তা দেন মমতা। এ দিন তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আর একটি অধিবেশন বাকি ছিল। কী এমন হল যে, তার আগেই এক জন মহিলা সাংসদকে লোকসভা থেকে তাড়িয়ে দিতে হল? বিজেপির লজ্জা করে না? এই ঘটনা আমাদের উজ্জীবিত করবে। মহুয়া এবং আমরা লড়াই করব। মহুয়ার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা হল, কিন্তু ওকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেওয়া হল না। আমি এর ঘোর নিন্দা করছি। এখন বড় কৌতূহলের বিষয় হল, আগামী লোকসভা ভোটে কি মহুয়া ফের কৃষ্ণনগর থেকে প্রার্থী হবেন? এ ব্যাপারে সরাসরি জবাব না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মহুয়া ওর লড়াই থামাবেন না। উনি নিজের কথা বলে যাবেন। মমতা বলেন, এই তো দু-তিন মাস, তার পর আবার যাবে। লোকসভা ভোটের আর তিন মাস বাকি। অর্থাৎ, মমতা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, ফের লোকসভায় যাবেন মহুয়া। এ দিন দুপুর ১২ টায় লোকসভায় এথিকস কমিটি রিপোর্ট পেশ করে। তার দুই ঘন্টার মধ্যেই সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আলোচনা শুরু করে দেওয়া হয়। এই তাড়াতাড়ি নিয়ে বিরোধীরাও এ দিন লোকসভায় প্রশ্ন তোলেন। এ বিষয়ে মমতা সবিস্ময়ে বলেন, ‘মহুয়ার বিষয়ে আমাদের ‘ইন্ডিয়ার শরিকেরা আরও খানিকটা সময় চেয়েছিলেন। ৪৯৫ পৃষ্টার একটি রিপোর্ট, সেটা পড়তে সময় লাগবে না? দু’ ঘন্টার মধ্যে আলোচনা শুরু করা হল। আধ ঘন্টার ৪৯৫ পাতায় আলোচনা হয়ে গেলে! কী করে হল আমি বুঝলাম না। মহুয়ার সাংসদ পদও খারিজ করে দেওয়া হল। আমি স্তম্ভিত। ২০১৬ থেকে ২০১৯ নদিয়ার করিমপুরের বিধায়ক ছিলেন মহুয়া। ২০১৯ সালে ওই জেলারই কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে ম্যাসাচুস্টেস ইউনির্ভাসিটির প্রাক্তনী মহুয়াকে প্রার্থী করে তৃণমূল। জয়ী হয়ে লোকসভায় যান তিনি। তবে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সাংসদ হিসেবে খুব কাছের মানুষ কখনোই হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। কৃষ্ণনগরের পাশে লোকসভা কেন্দ্র রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এ দিন কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘যেমন কর্ম করেছেন, তেমনই ফল পেয়েছেন মহুয়া মৈত্র। নিজে অজুহাত তৈরি করেছেন। সংসদকে অপমান করছেন। মহিলাদের অপমান করছেন। এখন আবার ধান ভানতে শিবের গীত গাইছেন। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী মহুয়া প্রসঙ্গে নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘উনি আদানির বিরুদ্ধে সংসদে লাগাতর সরব ছিলেন। তাকে সেই খেসারত দিতে হল।