মাতারবাড়ির কল্যাণ সাগরের কচ্ছপ অস্তিত্বের সংকটে, উদ্বেগ।

 মাতারবাড়ির কল্যাণ সাগরের কচ্ছপ অস্তিত্বের সংকটে, উদ্বেগ।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- সতী পীঠের একান্ন পীঠের অন্যতম এক পীঠ পাঁচশো বছরের অধিক পুরনো সাধনপীঠ রাজ্যের অন্যতম ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের পেছনের রাজন্য আমলে খনন করা কল্যাণ সাগর দিঘির জলে প্রাকৃতিকভাবে আবির্ভাব হওয়া কচ্ছপের অস্তিত্ব বর্তমানে গভীর সংকটে। কল্যাণসাগরে কচ্ছপদের খাদ্যাভাব ও প্রজননগত সমস্যার কারণেই উদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের অভিমত। অর্থাৎ মাতার বাড়ির কল্যাণসাগর দিঘির জলাশয়ে পরম্পরাগত ভাবে থাকা কচ্ছপগুলিকে ডিম দেওয়ার জন্য দিঘির পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট নালায় কিংবা আশপাশের গৃহস্থবাড়ির কোন পুকুরে ছুটে যেতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা ধর্মীয় ভাবাবেগে ভয়ঙ্কর বিষয়। আর এসবই হচ্ছে মাতারবাড়ির কল্যাণসাগরে কচ্ছপদের প্রজননের পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভবেই। বাম আমলে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাগরের সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে অবাস্তব সম্মত কংক্রিটের দেওয়াল ও সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন মন্দির উন্নয়ন কমিটির কর্তারা কল্যাণসাগরে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপদের কথা, কচ্ছপদের প্রজননের বিষয়টিকে কোন গুরুত্বই দেননি। বড়বড় মাথারা ভুলেই গিয়েছিলেন যে কচ্ছপেরা মাটি ও বালি ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না এবং ডিম পাড়তে কিংবা প্রজনন বৃদ্ধি করতে পারে না। ফলে কল্যাণ সাগরকে কংক্রিটের দেওয়ালে মুড়ে ফেলার ফলে তৎকালীন সময়ে এক সঙ্গে অনেকগুলি কচ্ছপের অকাল মৃত্যু হয়েছিল।বামেদের সময়ে মাতার বাড়ির উন্নয়নের কিংবা কল্যাণ সাগরের সৌন্দর্যায়নের পরিবর্তে অনুন্নয়ন এবং ক্ষতিসাধনই বেশি হয়েছে বলে সংশিলষ্ট সকলের অভিযোগ। বামেদের পঁয়ত্রিশ বছরে বেদখল হয়েছে মাতার বাড়ির উত্তর দিকের জোড়া পুকুরের বেশির ভাগ ভূমি। যার ফলে মাতার বাড়ির জোড়া পুকুর বর্তমানে নালায় পরিণত হয়ে অস্তিত্ব সংকটের মুখে। প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমানেও রাজ আমলের খতিয়ান ও ম্যাপ অনুযায়ী তদন্ত করলে মাতার বাড়ির বেদখল হয়ে যাওয়া ভূমি জবরদখলমুক্ত করা সম্ভব বলে মাতারবাড়ি এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের অভিমত।মাতারবাড়ির কল্যাণ সাগরের কচ্ছপকুলের রক্ষার্থে বাম আমলেই কল্যাণ সাগরের কংক্রিটের দেওয়াল ভেঙে ফেলার উচ্চ আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত অমান্য করা হয়েছে। অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ সাগরের কংক্রিটের দেওয়াল সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়নি।যা বর্তমানেও কল্যাণ সাগরের চার পাড় প্রদক্ষিণ করলে বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়ে গেলে স্বচক্ষেই প্রত্যক্ষ করা যায়। যদিও কচ্ছপদের প্রজননের জন্য ওই সময়ের মাতাবাড়ি উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ
অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কচ্ছপদের প্রজননের জন্য কিছু হ্যাচারি তৈরি করা হয়েছিল। স্কুলে পড়ুয়া কিশোর কিশোরীরাও জানে কচ্ছপ তার বুকের উপর ভর দিয়েই ডাঙায় চলাফেরা করে। অথচ সে সময়ে কচ্ছপদের হিতাকাঙ্ক্ষী বিজ্ঞরা হ্যাচারি তৈরিতেও কংক্রিটের মিশ্রণের ব্যবহার করছেন। ফলে কচ্ছপকুল হ্যাচারিমুখো হয়নি। ওই সময় থেকেই কল্যাণসাগরে
ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপের অস্তিত্বের সংকট শুরু হয়। আর বর্তমান রাম সরকারের সাড়ে পাঁচ বছরে মাতাবাড়ির কল্যাণ সাগরের পরম্পরাগত ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপকুলের অস্তিত্ব সংকটের ষোলকলা পূর্ণতা লাভ করে বলে অভিযোগ।মাতাবাড়িতে আগত পুণ্যার্থীদের ধর্মীয় ভাবাবেগে বরাবরই ব্যাঘাত ঘটছে। কল্যাণ সাগরের মাছ ও কচ্ছপদের নিয়ে ছেলেখেলা হয়েছে বারে বারে ৷ ফলে প্রশ্ন উঠেছে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের প্রকৃত ভূমিকা নিয়ে।বর্তমানের বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারের উপর মাতাবাড়ি এলাকার বিশাল অংশের মানুষের আশা ভরসা ছিল একেবারে তুঙ্গে। সকলেই আশা করেছিলেন এবার অন্তত রাষ্ট্রবাদী সরকার কল্যাণ সাগরের পরম্পরাগত কচ্ছপকুলের রক্ষার্থে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু ধর্মপ্রাণ মানুষের আশার গুড়ে বালি। মন্ত্রী, বিধায়ক, চেয়ারম্যান ও নেতারা কল্যাণসাগরের কচ্ছপকুলের রক্ষার্থে কোন কার্যকর ভূমিকা নেননি বলে মাতার বাড়ি এলাকার প্রবীণ “ বৃদ্ধদের ক্ষুব্ধ অভিযোগ। যার কারণেই মাতার বাড়ির কল্যাণসাগরের ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপের অস্তিত্ব বর্তমানে চরম সংকটে পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের অভিমত।কল্যাণ সাগরের কচ্ছপদের ডিম দেওয়ার সময় হলেই তারা নিরাপদ স্থানের খোঁজে ছুটতে থাকে। কল্যাণ সাগরের পার্শ্ববর্তী নালায়, আশপাশের গৃহস্থদের পুকুরে ডিম দেওয়ার জন্য চলে যায়। কখনও কখনও এরা দিশাহারা হয়ে এদিক সেদিক ছুটতে থাকে। এমনকী মায়ের মন্দিরে পর্যন্ত কচ্ছপদের উঠে আসতে প্রত্যক্ষ করা গেছে। আর তখনই সংশ্লিষ্ট কচ্ছপকে জীবন সংকটের মুখে অর্থাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়।আর এসবের কারণেই কখনও কখনও মা কচ্ছপকে পাঁচ/সাতটা বাচ্চা সহ কংক্রিটের রাজপথের পাশের জঙ্গলে সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তবে যে বা যাদের চোখে পড়ে তারাই বাচ্চা সহ কচ্ছপদের উদ্ধার করে এনে পুনরায় কল্যাণ সাগরে ছেড়ে দিয়ে যান। সম্প্রতি মাতাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অনুরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আটটি বাচ্চা সহ মা কচ্ছপকে সফল ভাবে কল্যাণ সাগরে ছেড়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন বলে মাতারবাড়ির এলাকাবাসীরাই জানিয়েছেন। কল্যাণ সাগর যে কচ্ছপদের প্রজননের জন্য নিরাপদ নয় সেটা রাজপথ থেকে বাচ্চা সহ মা কচ্ছপ উদ্ধারের ঘটনা, মানুষের বাড়ি ঘরে, পুকুর পাড়ে কচ্ছপের ডিম পাওয়া যাওয়াই বড় প্রমাণ। কিন্তু মাতাবাড়ির ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপের অস্তিত্ব সংকট নিরসনে এখনও কোনও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেই। মাতাবাড়ি ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপের অস্তিত্ব সংকটের মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো কল্যাণ সাগরের পাড়ে কংক্রিটের আস্তরণ, প্রজননের প্রকৃত জায়গার অভাব, অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি হ্যাচারি, কচ্ছপদের চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত বালি ও মাটির অভাব এবং সর্বোপরি অপর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ তথা খাবারের সংকট। কল্যাণ সাগরের কচ্ছপ কুলের প্রধান খাদ্য মায়ের মন্দিরে বলির মাংসের পাশাপাশি খোলা বাজার থেকে ক্রয় করা নির্দিষ্ট পরিমাণ পাঁঠার মাংস। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, প্রতিদিন মায়ের মন্দিরে সরকারী ভাবে পাঁচ/সাত কেজি ওজনের একটি মাত্র পাঁঠা বলি প্রদান করা হয়। বলিদানের পর বেশিরভাগটা প্রসাদ হিসেবে রান্নার জন্য চলে যায়। বাকি ক্ষুদ্র অংশটুকু কচ্ছপদের জন্য কল্যাণ সাগরে ফেলা হয়। যা খুবই অপর্যাপ্ত। ফলে কচ্ছপদের বেঁচে থাকার ভরসা পুণ্যার্থীদের ছুঁড়ে দেওয়া বিস্কুট। বাম, ডান কিংবা রাম কোন আমলেই মাতার বাড়ির কল্যাণ সাগরের ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপদের সংরক্ষণের লক্ষ্যে এতটুকুও নজর দেওয়া হয়নি। যার কারণেই মাতার বাড়ির কল্যাণ সাগরের ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপের অস্তিত্ব বর্তমানে চরম সংকটে। তারমধ্যেই কল্যাণ সাগরকে নিয়ে নতুন খেলায় মেতে উঠেছে মাতারবাড়িরই একটি স্বার্থান্বেষী মহল বলে মাতার বাড়ির পার্শ্ববর্তী এলাকার আম জনতার মধ্যেই ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। বিয়াল্লিশ দিন কল্যাণ সাগরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই বিয়াল্লিশ দিনে কল্যাণ সাগরের মাছ, কচ্ছপদের অস্তিত্ব কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় সেদিকেই সংশ্লিষ্ট সকলের নজর।কল্যাণ সাগরের কচ্ছপ কুলের অস্তিত্ব রক্ষার্থে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির পরিচালন কমিটি তথা ট্রাস্টের নিকট রাজ্যের সমস্ত ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষেরা দাবি জানিয়েছেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.