মাত্র পাঁচ দিন ব্যাঙ্কের লকারবন্দি দশা থেকে মুক্তি পান দেবী দুর্গা।।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- পুজোর পাঁচদিন ছাড়া বছরের ৩৬০ দিন মা দুর্গা থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে। শুধুমাত্র পুজোর সময়তেই ব্যাঙ্কের লকার থেকে রাজবাড়িতে মাকে নিয়ে আসা হয় কড়া পুলিশি পাহারার মধ্য দিয়ে. ভাবা যায়।শুধুমাত্র এই পুজোর জন্যই বিজয়া দশমী বা দশেরার দিন যখন সারা দেশের ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকে তখন একমাত্র পুরুলিয়া সদর শাখার স্টেট ব্যাঙ্কটিকে খুলে রাখতে হয়। সেদিন অবশ্য ব্যাঙ্কের কোনও কাজ হয় না; শুধুমাত্র লকারে মা দুর্গা ফিরবেন বলেই খোলা রাখতে হয়তো ব্যাঙ্ককে।
দুর্গাপুজোর পাঁচদিন পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় রাজবাড়িতে বিরাজমান থেকে পুজো নেন সোনার দুর্গা।দশমীতে অপরাজিতা পুজো সাঙ্গ করে দধিকর্মি খেয়েই আবার ভিভিআইপি মর্যাদায় ব্যাঙ্কের লকারেই ফিরে যান দেবী। প্রাচীন ঐতিহ্য ও আচারবিধি বজায় রেখে পুরুলিয়ার জয়পুরের রাজপরিবারে ঠিক এভাবেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। তবে দেবী দুর্গা দশভুজা নন, সোনার তৈরি দেবীমূর্তি এখানে দ্বিভুজা।পিছনে থাকে রূপোর চালচিত্র।ভিন জেলা এবং রাজ্য থেকে যা দেখতে প্রচুর দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে জয়পুর রাজবাড়িতে। রাজার রাজত্ব না থাকলেও, পুজোর চারটি দিন যেন সেই পুরনো রাজতন্ত্র ফিরে আসে জয়পুরে। এই চারটে দিন আয়োজিত হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।ইতিহাস বলছে, প্রায় চারশো বছর আগে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা জয়সিংহ পুরুলিয়ায় আসেন। যাঁর নামে এই অঞ্চলের নাম হয় জয়পুর।জয় সিংহ উজ্জয়িনী থেকে এসে মুণ্ডা সর্দার খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে জঙ্গলমহলের এই এলাকা দখল করেন।খামার মুণ্ডা একটি খাঁড়াকে ইষ্টদেবী হিসেবে পুজো করতেন।ইতিহাসবিদ রমেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা থেকে জানা যায়; জয় সিংহ সেই খাঁড়াটিও ছিনিয়ে নেন। সেই খাঁড়া ও কলা বউয়ের পুজোর প্রচলন হয় সিংদেও পরিবারে। এর বহু বছর পর সপ্তম রাজা কাশীনাথ সিংহের আমলে দুর্গাপুজোর দিন একটি অঘটন ঘটে।আগুন লেগে যায় কলাবউয়ে।পুড়ে ছাই হয়ে যায় মন্দির। এরপরই রাজা কাশীনাথ সিংহ দেবীর কাছে ক্ষমা চান। শোনা যায়, সেদিনই স্বপ্নাদেশ পান সোনার প্রতিমা তৈরি করে পুজো করার। সেই মতোই সোনার বিগ্রহ তৈরির জন্য বেনারসের স্বর্ণশিল্পীদের ডাক পড়ে।এক সের ওজনের বা দেড় কেজি সোনার দ্বিভুজা দুর্গামূর্তি ও দেড় মন বা ৬০ কেজি রূপো দিয়ে চালচিত্র তৈরি করান রাজা। সেই থেকে সোনার বিগ্রহ পুজোর প্রচলন শুরু জয়পুর রাজবাড়িতে। এরপর ১৯৭০ সালে ঘটে যায় আরেক বিপত্তি।একদল ডাকাত হানা দেয় রাজবাড়িতে।তারা সোনার মূর্তির হদিশ না-পেয়ে মন্দিরে রাখা মায়ের সমস্ত অলঙ্কার ও অন্যান্য দামি সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার পরই টনক নড়ে রাজ পরিবারের।তৎকালীন জেলা পুলিশের উদ্যোগে রাজবাড়ির স্বর্ণ বিগ্রহের নিরাপত্তায় চালু হয় বিশেষ ব্যবস্থা। ঠিক হয় পুজোর পাঁচ দিন ছাড়া বাকি ৩৬০ দিন ব্যাংকের লকারে থাকবে সোনার বিগ্রহ। এই রীতিই আজও চলছে।পুজোর দিনগুলির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় সোনার দুর্গা ও রূপোর চালচিত্র আনা হয় রাজবাড়িতে।পুজো শেষে দশমীতেই দুপুর দুটোর মধ্যে পুলিশি পাহারায় আবার ব্যাঙ্কে লকারবন্দি করা হয় মা দুর্গাকে।

Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

5 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

6 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

6 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

6 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

7 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

7 hours ago