মাদার্স ডে

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। এই দিনটি যে ইন্টারন্যাশনাল মাদার্স ডে তথা আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস তা ফেসবুক আমাকে মনে করিয়ে দিল।মোবাইলে ফেসবুক খুলতেই দেখা গেল বন্ধুরা নিজ নিজ মায়ের ছবি পোস্ট করে অনেক মিষ্টি মধুর কথা লিখে মাতৃভক্তির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। জন্মদাত্রী মা আমার কৈশোরেই আমাকে ফেলে চলে গেছেন পর পারে। ফেসবুকে পোস্ট করার মতো মায়ের তেমন ছবিও নেই আমার কাছে।মাতৃদিবসে ফেসবুকে লিখে মাতৃভক্তি জাহির না করলেও চুপচাপ বসে আপন মনে মায়ের কথা ভাবছিলাম। কিন্তু মায়ের স্মৃতিতে মনঃসংযোগ করতে পারিনি।মা ও সন্তানের প্রেম বন্ধনের পবিত্র এই দিনটিতেই আমার কারণে মা ও সন্তানের সন্তানের বিচ্ছেদ ঘটে গেল।আমি সত্যিই অনুতপ্ত। কিছুদিন আগে আমার পাশের বাড়ির ঘরের পেছনের ঝুপড়িতে এক মা- বিড়াল ছানা প্রসব করেছে। মা-বিড়ালতটি প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে এসে ফেলে দেওয়া এঁটো খাবার খেয়ে যায়। আমি তাকে কোনও দিন তাড়িয়ে দিইনি বরং মাছের কাঁটা সহ উচ্ছিষ্ট খাবার তার জন্য
রেখে দিই। দিনে দিনে বিড়ালছানাটি বড় হতে থাকে।সে তার আস্তানা থেকে বেরিয়ে ঘরের পেছনে ছোটাছুটি করে আপন মনে খেলে। কী মিষ্টি! কোলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে। মা-বিড়াল ছানাটিকে বুকের দুধ খাওয়ায়,আদর করে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে।এ দৃশ্য দেখতে আমার বড় ভাল লাগে, মনে তৃপ্তি পাই।আদর করে পোষা আমার বিড়ালটার কথা মনে পড়ে। এই বিড়াল ছানাটিকেও বাড়িতে এনে পুষতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারিনি। ‘ঘরে আর বিড়াল নিয়ে আসবে না। মা কালীর নামে দিব্বি করে বলছি—এবার যদি ঘরে বিড়াল নিয়ে আস তাহলে আমি ঘর ছেড়ে চলে যাব। বিড়ালের সঙ্গেই ঘর করো তুমি।’ –আমার গিন্নি মনিরমা হুলিয়া জারি করেছে।তাই ইচ্ছে থাকলেও বিড়ালছানাটিকে ঘরে নিয়ে আসতে পারিনি। যে বিড়ালটিকে আদর করে পুষেছিলাম সেটি কিছুদিন আগে মারা গেছে।সেও মা-র পিছু নিয়ে আমাদের বাড়িতে এঁটো খাবার খেতে এসেছিল।মনিরমা বিড়াল দু’চোখেই দেখতে পারে না। বিড়াল দেখলেই হাতের কাছে ইট-পাটকেল যা পায় ছুড়ে মারে। গিন্নির গলার আওয়াজ পেলে তারাও প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালায়। মা-র পিছু নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসা বিড়ালছানাটা পালাতে পারেনি। আমাদের বাড়িতে থেকে যায়। আমি তাকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করেছি। বিড়ালের সহজাত স্বভাব মতো সে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করত। তার ওপর সুযোগ পেলেই মাছ, দুধ ও অন্যান্য খাবার চুরি করে খেত। এতে মনিরমা একেবার খেপে গিয়েছিল। তবে ছোট বিড়ালটি আমাকে দেখলেই ছুটে এসে পায়ে ঘেঁষত আর সুযোগ পেলেই লাফিয়ে কোলে উঠত। আমি আদর করে তার গালে আঙুল চালাতাম। আরাম পেয়ে সে ঘড়ঘড় আওয়াজ তুলত।সে কী বলে, কী চায় আমি ঠিক বুঝতে পারতাম।বয়স হয়ে আমার আদরের বিড়ালটা কিছুদিন আগে মারা গেছে। আমি বড় কষ্ট পেয়েছি। আজ ভোরে দরজা খুলে ঘর থেকে বের হতেই দেখি পাশের বাড়ির ঝুপড়িতে জন্ম নেওয়া সেই বিড়ালছানাটা মায়ের পিছু নিয়ে চলে এসেছে আমাদের বাড়িতে।মনের আনন্দে সে ছোটাছুটি করছে।ইস! মনিরমা যদি বিড়ালছানাটাকে দেখে তবে সে রেগে আগুন হবে। আর আমিই একে ডেকে এনেছি বলে আমাকে কাঠগড়ায় তুলবে। তাই দেরি না করে বিড়ালছানাটাকে ওর আস্তানায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাড়া করি। আচমকা আমার তাড়া খেয়ে সে পড়িমরি করে ছুটতে লাগল। আমিও ওর পিছু ছাড়লাম না।ভীত সন্ত্রস্ত বিড়ালছানাটি প্রাণ বাঁচাবার জন্য পাশের আর এক বাড়ির বেড়ার ফোকর গলে ঢুকে গেল।আমাকে হঠাৎই বিড়ালছানাটিকে তাড়া করতে দেখে মা বিড়ালটি ভয়ে ছানাটিকে ফেলে কোথায় যেন পালিয়ে গেল। মনিরমার আর গঞ্জনা শুনতে হবে না ভেবে স্বস্তি পেলাম।কিন্তু দুপুরে সন্তানহারা মা- বিড়াল বিলাপের সুরে তার ছানাকে ডাকতে লাগল। আমার বাড়ির চারপাশে ঘুরে তার হারানো ছানাকে খুঁজতে লাগল। সন্তানের জন্য মায়ের এই করুণ বিলাপের সুর আমার বুকে যেন বল্লমের ফলার মতো এসে বিধল। আমার মনে অপরাধবোধ কাজ করছিল। কৃতকর্মের জন্য আমি সত্যিই অনুতপ্ত। যে বেড়ার ফোকর গলিয়ে বিড়ালছানাটা পাশের বাড়িতে ঢুকে গেল, সেই বেড়ার ওপারে ভাল করে দেখলাম। সে ওখানে নেই। বাড়ির চারপাশ ভাল করে খুঁজে দেখলাম। কোথাও নেই সেই বিড়ালছানা। দুপুরে খেতে বসেও খেতে পারলাম না। খাওয়া থেকে উঠে অভ্যাস মতো বারান্দায় চেয়ারে বসে পত্রিকা দেখছিলাম। মা-বিড়ালটা এসে কাছের পাঁচিলের ওপর বসে আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্রমাগত ডাকতে লাগল।‘আমার বাচ্চাকে তুমি কোথায় তাড়িয়ে দিয়েছ?” বলে আমার কাছে যেন যে কৈফিয়ত চাইছে।ওর কৈফিয়তের কোনও সদুত্তর আমি দিতে পারিনি।কী করব ভেবে না পেয়ে পত্রিকা পড়া বন্ধ রেখে ঘরে ঢুকে পড়লাম। বিছানায় শুয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুমোতে পারলাম না। সারা দুপুর সন্তানহারা মা-বিড়ালটা করুণ সুরে ডেকে গেল হারিয়ে যাওয়া তার বাচ্চাকে। আমি আর ফেসবুক খুলে দেখিনি। আমার জন্মদাত্রী মা-কেও আর স্মরণ করতে পারিনি। মা-র কাছ থেকে বিচ্ছেদ হওয়া বিড়ালছানাটার কথাই কেবল মনে পড়ে বারবার। মা ও বাচ্চা দিনভর বিচ্ছেদে থাকার পর গোধূলিবেলায় সেই ফোকর দিয়েই বিড়ালছানাটা বেরিয়ে এসে গলা ছেড়ে মাকে ডাকল । বাচ্চার ডাক শুনে কোত্থেকে মা- বিড়ালটা ছুটে এসে জিভ দিয়ে তার সারা গা আদর করে লেহন করতে লাগল। দূর থেকে আমি মাদার্স ডে সেলিব্রেশনের এই মধুর দৃশ্য প্রাণ ভরে উপভোগ করলাম।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

8 hours ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

8 hours ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

9 hours ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago