মানব কোষ থেকে তৈরি ক্ষুদ্র রোবট, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা।।
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিজ্ঞানীরা মানবদেহের কোষ থেকে এমন একটি ক্ষুদ্র রোবট তৈরি করেছেন, যা ‘জীবন্ত’।হ্যাঁ, জীবন্ত কারণ সেই রোবট নিজে থেকে নড়াচড়া করতে পারে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, মানব কোষ থেকে সৃষ্ট এই রোবট একদিন মানবদেহে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করবে।বস্টনের টুফ্টস ইউনিভার্সিটি ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ওয়েইজ ইনস্টিটিউটের এক দল গবেষক এটি তৈরি করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘অ্যানথ্রোবট’। এর আগে আফ্রিকান নখযুক্ত ব্যাঙের (বৈজ্ঞানিক নাম জেনো পাস লেভিস) ভ্রুণের স্টিম কোষ থেকে জীবন্ত রোবট বা জেনোবট তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাদেরই কয়েকজন এবার জেনোবটের উপর ভিত্তি করে অ্যানথ্রোবট সৃষ্টি করলেন। গত ৩০ নভেম্বর এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যাডভান্স সায়েন্স’ জার্নালে। গবেষণাপত্রের মুখ্য লেখক মাইকেল লেভিন বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটি জীবন্ত উপাদানগুলির একটি।তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের শরীরের কোষের যেসব দক্ষতা বা সক্ষমতা রয়েছে তার সবগুলো আমরা বুঝতে পারি না।”লেভিন বলেন, ‘অ্যানথ্রোবটগুলি পূর্ণাঙ্গ জীব ছিল না।কারণ তাদের পূর্ণ জীবনচক্র ছিল না।এটি আমাদের ভাবায় যে এই ক্ষুদ্র শ্রেণি আসলে একটি রোবট, নাকি একটি প্রাণী, নাকি যন্ত্র? এগুলি থেকে আমরা খুব ভালো ধারণা পাই না। আমাদের এর বাইরে গিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা করতে হবে।’ বিজ্ঞানীরা এই অ্যানথ্রোবট সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন বয়স (প্রাপ্তবয়স্ক) ও লিঙ্গের মানুষের শ্বাসনালী বা উইন্ডপাইপের কোষ ব্যবহার করেছেন।গবেষণাটির সহলেখক গিজাম গুমুস্কায়া বলেন, ‘কোভিড-১৯ ও ফুসফুসের রোগ নিয়ে কাজ করার কারণে এই ধরনের কোষের উপর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করাটা গবেষকদের জন্য তুলনামূলক সহজ ছিল।’তিনি বলেন, ‘শ্বাসনালির কোষগুলো সিলিয়া নামক লোমের মতো কিছু দ্বারা আবৃত থাকে, যা সামনে-পিছনে নড়াচড়া করতে পারে।আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, এসব কোষ অর্গানয়েড (কোষগুচ্ছ) গঠন করতে পারে।”রাসায়নিক সংমিশ্রণ ব্যবহার করে গুমুস্কায়া শ্বাসনালীর কোষের বৃদ্ধির উপর পরীক্ষা চালান।তিনি সিলিয়াকে অর্গানয়েড থেকে বহির্মুখী করার একটি উপায় খুঁজে পান। আরও বিশদে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর কয়েকদিন পর অর্গানয়েডগুলো নিজে থেকে নড়াচড়া করতে শুরু করে। গুমুস্কায়া বলেন,’প্রথম পাঁচ দিন পর্যন্ত কিছুই ঘটেনি।সাত দিনের মাথায় একটি দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটি দেখতে ছিল- ফুটন্ত ফুলের মতো। লেভিন জানান, প্রতিটি অ্যানথ্রোবটের নিজে নিজে একসাথে জড়ো হওয়ার দৃশ্য তাদের রীতিমতো বিস্মিত করে করে তোলে।এই অ্যানথ্রোবট নিরাপত্তা বা সুরক্ষা নিয়ে কোনও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন না লেভিন।তিনি বলেন, ‘এগুলি কেবল একটি নির্দিষ্ট পরিবেশেই বেঁচে থাকতে পারে। তাই অ্যানথ্রোবটগুলি কোনওভাবে ল্যাবের বাইরে চলে গেলেও তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।”