মানব চর্ম দ্বারা নির্মিত বইয়ের মলাট সরলো হার্ভার্ড থেকে!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বই থেকে মানব চামডার মলাট শেষ পর্যন্ত সরিয়ে নিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম উচ্চ শিক্ষায়তন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
চামড়ায় বাঁধানো বই কিংবা ডায়েরির ব্যবহার অনেকেই করেছেন। কিন্তু সেটি কোন প্রাণীর চামড়া কেউ কি কখনও ভেবে দেখেছেন?
বছর দশেক আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে উদ্ধার করা হয় ‘দে দেসতিনে দো লামে'(ডেস্টিনিজ অব দ্য সোল)নামের একটি বই।তার পরেই শোরগোল শুরু হয়। ইতিহাস খুঁড়তে গিয়ে জানা যায়, সেই বইয়ের মলাট নাকি বাঁধানো হয়েছে মানুষের চামড়ায়!গবেষণার টেবিলে চামডার তৈরি মলাট নিয়ে বসেন বিজ্ঞানীরা।পিএমএফ, ম্যাট্রিক্স-অ্যাসিস্টেড লেসার ডিসর্পশন পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালিয়ে ২০১৪ সালে তারা প্রমাণ করেন, বইয়ের মলাটে ব্যবহৃত চামড়া আসলে মানুষের।এখানেই শেষ নয়। আরও জানা যায়, সেটি একজন নারীর চামড়া।১৯৩৪ সাল থেকে বইটি ঠাঁই পায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফটন লাইব্রেরিতে।সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ঘোষণা করা হয়, বইয়ের উৎপত্তি ও পরবর্তী ইতিহাসের নৈতিকভাবে বিতর্কিত প্রকৃতির কারণে তারা ওই বইটি থেকে মলাট খুলে নিয়েছে।
হার্ভার্ডের হাফটন গ্রন্থাগারে ৯০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাখা ছিল এই বই।১৮৮০-এর দশকে আর্সিন হুসে আত্মা ও মৃত্যু-পরবর্তী জীবন নিয়ে মেডিটেশন বিষয়ক’দে দেসতিনে দো লামে’ বইটি লিখেছিলেন।তিনি বইটি তার শল্য চিকিৎসক বন্ধু লুডোভিক বোল্যান্ডকে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন বলে কথিত। তিনিই মানুষের চমড়া দিয়ে বইটি বাঁধাই করেছিলেন।
জানা যায়, স্বাভাবিক ভাবে মারা যাওয়া এক মহিলা রোগীর শরীরের চামড়া দিয়ে বইটি বাঁধাই করেছিলেন ডাঃ বোল্যান্ড।
ওই নারীর লাশের নাকি কেউ দাবিদার ছিল না। ১৯৩৪ সালে হার্ভার্ডে আনা হয় ‘দে দেসতিনে দো লামে’। সেই বইয়ের সঙ্গে ছিল ডাক্তার বোল্যান্ডের হাতে লেখা একটি চিরকুট।তাতে লেখা ছিল, ‘মানব আত্মা নিয়ে লেখা একটি বইয়ে মানব মলাট থাকাটাই
উপযুক্ত।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে,বই থেকে খুলে নেওয়া মানব দেহাবশেষটির সম্মানজনক অন্ত্যেষ্টি করতে চান কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অজ্ঞাত ওই নারীর জীবন নিয়েও গবেষণা করছে হাফটন লাইব্রেরি।বোল্যান্ড লিখেছিলেন,ষোড়শ শতাব্দী থেকে ‘এনথ্রোপোডার্মিক’ শব্দটি বেশ প্রচলিত,যার অর্থ হচ্ছে মানুষের চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট করা।ওই শতকে এর প্রচলন ছিল। তখন কেউ অপরাধ করলে তার চামড়ায় তা লিখে দেওয়া হতো।অনেক সময় কেউ কেউ মরে যাওয়ার পর তার চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট বানিয়ে তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের অনুরোধও করে যেতেন। উনিশ শতকের এমন বহু বিবরণ রয়েছে, যেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃতদেহ বিজ্ঞানকে দান করা হয়েছিল।তাদের চামড়া পরে যারা বই বাঁধাই করে, তাদের দেওয়া হয়েছিল।