মানব পাচারের হিড়িক!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের আন্তর্জাতিক সীমান্তে ঘেরা ছোট রাজ্য ত্রিপুরা এখন মানব পাচারের মতো ভয়ানক অপরাধের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। এই ভয়ানক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরাকে, নিরাপদ করিডর হিসেবে মনে করছে এবং ব্যবহার করছে। বলতে কোনও দ্বিধা নেই, ত্রিপুরায় যেন মানব পাচারের হিড়িক পড়েছে। বুধবার এই সম্পাদকীয় প্রতিবেদন যখন লিখছি, তখনও খবর এসেছে আজও আগরতলা রেল স্টেশনে একাধিক মহিলা (যুবতী) সহ এগারোজন বাংলাদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গা, সাথে দুজন ভারতীয় মানব পাচারকারী যুবক রেল পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে তিন জুলাই পর্যন্ত শুধু আগরতলা রেল স্টেশনে পাচারকালে রেল পুলিশের হাতে আটক হয়েছে ১১৬ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে অর্ধেকের উপরে রোহিঙ্গা। গত এক সপ্তাহে আটক হয়েছে ৩৩ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলা এবং শিশু।
ফলে সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরা এখন গোটা দেশের সামনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশবাসীর সুরক্ষা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য। তেমনি প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের বিজেপি সরকার এবং সীমান্তে নজরদারির দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধেও। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি নাগরিকরা ত্রিপুরায় প্রবেশ করছে। এরপর সেখান থেকে নানাভাবে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।সাম্প্রতিককালে দেশের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক সাথে ২১ জন মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে দিল্লী নিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী এজেন্সি। খবরে প্রকাশ, গত এক বছরে শুধু ত্রিপুরা থেকে ৩২ জন মানব পাচারকারীকে আটক করেছে এনআইএ। স্বাভাবিকভাবেই ত্রিপুরায় মানব পাচারের এই বাড়বাড়ন্ত দেখে উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। অথচ বিস্ময়ের ঘটনা হলো, রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের এ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে বাংলাদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে। অথচ রাজ্য গোয়েন্দা শাখা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এনআইএ এসে রাজ্য থেকে মানব পাচারের মতো ভয়ানক অপরাধের সাথে যুক্ত অপরাধীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলেও, রাষ্ট্রপতির পুরস্কারপ্রাপ্ত ত্রিপুরা পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনীকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি কাউকে গ্রেপ্তার করতে! অথচ পুলিশ কিন্তু সবই জানে, কারা এ ধরনের জঘন্য অপরাধের সাথে যুক্ত আছে। অত্যন্ত বিস্ময়ের ঘটনা হলো, মানব পাচার সংক্রান্ত ঘটনায় ত্রিপুরা আজ গোটা দেশের সামনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও, সরকার ও প্রশাসনের এসব অপরাধ প্রতিরোধে কোনও ভূমিকা নেই। এমন একখানা ভাব যেন সব ঠিকঠাক চলছে! বাম আমলে স্বর্ণযুগের গল্প শোনা গেছে প্রচুর। সময়ের পরিবর্তনে গল্পের স্বর্গযুগ পেরিয়ে এখন হীরাযুগের গল্প শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই হীরাযুগ যে দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকেই বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, সেই খেয়াল কারোর নেই।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

17 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

17 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago