মানুষের ইস্যু, রাজনীতির ইস্যু!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

একদিকে এক দেশ এক ভোট তো আর একদিকে আদানি গোষ্ঠীর এক ঘুষকাণ্ড।এই লইয়া যখন দেশের আইনপ্রণেতাদের দুই কক্ষে শীতকালীন অধিবেশন প্রায় শেষ হইতেছে তখন শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।দীর্ঘ শীতকালীন অধিবেশনে এক খানাও জনস্বার্থবিষয়ক বিল পাস হয় নাই।একবারও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি লইয়া কথা হয় নাই, তবুও শেষ হইতে চলিয়াছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। অক্ষম দুর্বল চিড়াচ্যাপ্টা মানুষের দল যাহারা পাঁচ বছরে একবার ভোট দিয়া পাঁচটি বছর হাপুস নয়নে প্রতিনিধিদিগের দেখিয়া দেখিয়া কাটান, তাহারা ধরিয়াই লইয়াছেন সাধারণ মানুষের স্বার্থ লইয়া কথা বলিবার মেজাজে নাই অসাধারণ এই সকল জনপ্রতিনিধি। তাই এমন অধিবেশন যত তাড়াতাড়ি শেষ হইয়া যায় ততই মঙ্গল।
কিন্তু শেষ হইলো কই!শেষ হইতে হইতেও আম্বেদকরে আসিয়া আটকাইয়া গেল। আজ সংসদের অভ্যন্তরে কিংবা বাহিরে সর্বত্রই গুঞ্জরিত হইতেছে আম্বেদকর আম্বেদকর আম্বেদকর আম্বেদকর আম্বেদকর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য আম্বেদকর’এক ফ্যাশান’ এর পরদিন সংসদের ভেতরে হাতাহাতি হইয়া গেল।অধিবেশন কক্ষের বাহিরে মাঠে বিরোধীরা আম্বেদকর লইয়া ‘অপমানজনক’ মন্তব্যের প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চাহিয়া বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।সেই প্রদর্শনের সময়ে শাসক দলের সাংসদদের সঙ্গে সম্মুখ সংঘর্ষ ঘটে।এই লইয়া দিনভর নানান চাপান উতোর চলিতে থাকে।পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের সামনে ভোটের সম্মুখ রাজনীতির ছবি ভাসাইয়া তোলে।রাজনৈতিক দলগুলি মুখে যতই শাস্তির ললিতবাণী প্রচার করুক না কেন,সম্মুখে বিরুদ্ধ দলের কাউকে পাইলেই ক্যালাইতে শুরু করিবে। ইহাই তাহাদের ঠ্যাঙ্গানো সংস্কৃতি।এই সংস্কৃতি হইতে মুক্ত নহে কোনও শাসক বা বিরোধী দল। সকলেই এই ক্ষেত্রে এক ও অভিন্ন। সংসদ চত্বরে যখন বিরোধীরা প্রকাশ্য বিক্ষোভ করিতেছিল সেই সময়ে বিজেপির সদস্যরা কেন ডান্ডার মাথায় দলীয় পতাকা বাধিয়া সেই বিক্ষোভে প্রবেশ করিবে?ইহা কি ঠ্যাংগানে তন্ত্র নহে? আবার বিরোধী পক্ষের লোকজনকে বাগে পাইয়া ইহাদের ধাক্কা মারিয়া দেওয়া কি ক্যালানে তন্ত্রের প্রতি দুর্বলতা নহে? এই করিয়া দুই পক্ষ নাক মাথা ফাটাইয়াছে কিংবা থেতলাইয়াছে। সর্বোপরি এই ঘটনা যে ঘটিয়াছে সত্যি সত্যি, তাহা প্রমাণের জন্য স্থানীয় থানায় গিয়া অভিযোগও জানাইয়াছে।
শাসক বিজেপির অভিযোগ রাহুল গান্ধী দুই বিজেপি সংসদের মাথা ফাটাইয়া দিয়াছেন ধাক্কা মারিয়া। অন্যদিকে কংগ্রেসও পাল্টা অভিযোগে বলিয়াছে নিগৃহীত হইয়াছেন মল্লিকার্জুন খাড়গের মতন প্রবীণ নেতা। আক্রমণ করার চেষ্টা ছিল রাহুল গান্ধীর ওপর। অর্থাৎ সংসদের অধিবেশন আম্বেদকর ইস্যুতে মুলতুবি হইয়া যাইবার পর সেই ইস্যু প্রথমে সংসদ চত্বরে আসিয়া যায়। আর সেইখান হইতে আসিয়াছে রাজপথের প্রান্তে থানায়।শুক্রবার শেষ হইতেছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন।কিন্তু অধিবেশন শেষ হইয়া যাইবার সাথে সাথেই শেষ হইতেছে না আম্বেদকর ইস্যু। বরং এই ইস্যু বোড় হইয়া আসিতেছে ময়দানে। সেই প্রমাণ মিলিয়াছে বৃহস্পতিবারেই।থানায় মামলার ঘটনার কাছাকাছি সময়েই বিজেপি হামলা করিয়াছে কলকাতা, মুম্বাইয়ে কংগ্রেস ভবনে।
প্রসঙ্গত, আম্বেদকর ফ্যাশান বলিয়া অমিত শাহের বক্তব্যের পরপরই প্রমাদ গুনিয়াছিল বিজেপি। এই ইস্যু যে অনেকদূর যাইবে তা তাহার আগে হইতেই অনুমান করিয়াছিলেন। আবার কংগ্রেস সহ বিরোধীরা বলিতেছে, আম্বেদকরকে ভয় পাইতেছে বিজেপি। সেই কারণেই সংসদ চত্বরে বিরোধীদের বিক্ষোভে পরিকল্পিতভাবে বিজেপি সাংসদদের পাঠানো হইয়াছে গোল বাধাইবার জন্য। ভয় পাওয়া আর না পাওয়া, বাস্তব যাহাই হোক না কেন আম্বেদকর ইস্যু সত্যই অনেকদূর যাইবে।
কতদূর?অন্তত বিহার নির্বাচন পর্যন্ত গড়াইয়া লইয়া যাইবার চেষ্টায় থাকিবে বিরোধী দল।সংবিধানের ছোট্ট সংস্করণ হাতে লইয়া মঞ্চে উঠা রাহুল গান্ধীর দল হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে পরাজয়ের মুখ দেখিলেও জাতি গণনার যে বীজ তাহারা পুতিয়া দিয়াছেন তাই বিজেপির জন্য।এমনিতেই অস্বস্তির কারণ হইয়া রহিয়াছে।ইহার ওপর আম্বেদকর ইস্যুকে মিলাইয়া দিলে বিষয়টি বিহার নির্বাচনে সোনায় সোহাগা হইয়া উঠিতে পারে।যদিও হরিয়ানা,মহারাষ্ট্রের পর আর কোনও রাজ্যে বিরোধীরা জয়ের নিকটবর্তী ফল করিবে বলিয়া ভাবা সহজ নয়, তথাপিও বিজেপির জন্য এই সকল ইস্যু লড়াই কঠিন করিয়া নিতে যথেষ্ট।
বলাই বাহুল্য ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য এই ইস্যুটি একটি আশীর্বাদ হইয়া সামনে আসিতেছে। বিশেষত, হরিয়ানা মহারাষ্ট্রের রাম ধাক্কার পর নিজেদের সামলাইতে আম্বেদকর ইস্যুকে তাহারা অষুধি হিসেবে কাজে লাগাইতে চাহিবে। আর এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হইতেছে যে গরিব মানুষের যে দ্রব্যমূল্য ইস্যু তাহা লইয়া বিরোধীরা খুব বেশি সময় দিবে না। অথচ পণ্যমূল্য দিনদিন বাড়িতেছে, আকাশ ছোঁয়া হইতেছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, ভোজ্য সামগ্রী। গরিব মধ্যবিত্তের ঘরের এই আগুনকে আর ভোটের ইস্যু করিতে চাহে না কেন দেশের বিরোধীরা? গরিবেরা বিনামূল্যে চাল পায় আর মধ্যবিত্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অলীক রাষ্ট্র লালন করে- এই জন্যই কি?তাহলে তো প্রশ্ন আসবে,ভোট আসবে কোথা হইতে?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

16 mins ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

19 mins ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

24 mins ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

26 mins ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

21 hours ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

22 hours ago