মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক চিতাবাঘে।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

একবার ভাবুন তো!রাস্তা দিয়ে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন, আর এমন সময় আপনার সামনে হাজির আস্ত একটি চিতাবাঘ। সামনের চারটি ক্যানাইন দাঁতে যখন রোদ্দুরের ঝিলিক পড়ে তার হিংস্রতা দেখেই আতঙ্কে মানুষের। রাজস্থানের পালি জেলার আরাবল্লীর পর্বতের মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম, বেরা। সেখানে চিতাবাঘকে ভয় পাওয়া তো দূরের কথা, বরং তাদের পাত্র করে দুধ খাওয়ান বেরাবাসী।প্রায় ৪৫ বছর আগে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার প্রতাপ সিংহ এবং তার স্ত্রী কাত্যায়নী নিছকই ঘুরতে গিয়েছিলেন বেরা গ্রামে। আর সেখানেই মানুষ ও চিতাবাঘের সহাবস্থানের দৃশ্য দেখে রীতিমতো চমকে ওঠেন তারা। সেই দম্পতির ছবির হাত ধরেই যেমন পরিচিতি পায় বেরা গ্রাম। এখন প্রতাপের পরিবারের স্থায়ী বসতি বেরায়। কার্যত তাদের হাত ধরেই ধীরে ধীরে পর্যটক আসতে শুরু করে এই গ্রামে। গ্রামের ঠিক বাইরে প্রথম রাত্রি আবাস বা হোটেল তৈরির নেপথ্যেও রয়েছেন প্রতাপ দম্পতি । পরবর্তীতে তার তোলা ছবি দিয়ে বেরার কাহিনি নিয়ে একটা গোটা বই লিখেছিলেন সন্দীপ ভুতোরিয়ার।বেরায় চিতাবাঘ ও মানুষের এই অপার্থিব বন্ধুত্বের নেপথ্যে রয়েছেন একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর মানুষরা। তারা রাবারি সম্প্রদায়ের মানুষ। ‘রাবারি’ শব্দের অর্থ ‘যাযাবর’ বা ‘বহিরাগত’। ইতিহাস বলছে, আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে ইরান থেকে আফগানিস্তান ঘুরে ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন রাবারিরা।তবে ভিনদেশ থেকে এলেও, রাজস্থানের মাটিকেই আপন করে নিয়েছিলেন তারা। সেই রুক্ষ মরুভূমিতে কৃষিকাজ এবং পশুপালন করেই দিন কাটান রাবারিরা। এমনকি কালের আবহে তারা হয়ে উঠেছেন পশুপতি শিবের ভক্ত। চিতাবাঘের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক সেই সূত্রেই।বেরাবাসীর সঙ্গে চিতাবাঘের বড়ো কোনো সংঘাত হয়নি আজ পর্যন্ত। কেবলমাত্র একটি শিশুকেই একবার জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়েছিল চিতাবাঘ। তবে তাকেও প্রাণে মারেনি বা আহত করেনি। চিতার মনস্তত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন কাত্যায়নী সিংহ। তিনি বলেছেন, ‘শাবক অবস্থা থেকেই মানুষকে দেখে বড়ো হয়ে ওঠার জন্যই হয়তো, মানুষের প্রতি হিংস্র হয়না চিতাবাঘেরা। ফলে, রাস্তা- ঘাটে তো বটেই, বাড়ির উঠোন এবং বিশেষ করে মন্দিরে হামেশাই দেখা যায় চিতাবাঘেদের। মন্দিরে তাদেরকে নিজে হাতে দুধ, জল খাওয়ান পুরোহিতরা।’ আর চিতাবাঘেরা যদি দু-একটা গরু-ছাগল নিয়েও যায়; সে-নিয়ে চিন্তিত থাকেন না স্থানীয়রা। তাদের বিশ্বাস, মহাদেব নাকি এতে তাদের দ্বিগুণ সম্পদ ফিরিয়ে দেবেন।এমনকি সেখানে চিতাবাঘ পুজিত হয় ‘অম্বে মাতা’ নামের দেবীরূপে।২০০৩ সালে বেরা সংলগ্ন জাওয়াই বাঁধের নিকটবর্তী ২০ বর্গকিলোমিটার জায়গাকে চিতাবাঘ সংরক্ষণ অঞ্চল বলে ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকার। এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছে চিতা সাফারি। হিসাব বলছে, ৯৯ শতাংশ পর্যটকরাই সেখানে গিয়ে- দেখা পেয়েছেন চিতাবাঘের। তাছাড়াও শেয়াল, হায়েনা, নীলগাই, কুমির এবং প্রায় একশোর বেশি। প্রজাতির পাখি রয়েছে বেরা ও বেরা সংলগ্ন অঞ্চলে। চিতাবাঘের দেশ’ হিসাবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত বেরা।পরিসংখ্যান ও নথি দেখিয়ে দীর্ঘদিনের ব্যাঘ্র গবেষক ঊমা রামকৃষ্ণান বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্যত্র প্রতি ৩টি চিতাবাঘের শাবকের মধ্যে কেবলমাত্র ১টি শাবকই বেঁচে থাকে শেষ পর্যন্ত। তবে বেরার হিসাব বলছে, সেখানে চিতা-শাবকের বেঁচে থাকার হার প্রায় ১০০ শতাংশ। ফলে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে মাত্র ৬টি বাঘ ছিল এই অঞ্চলে, ২০২০ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮০টির কাছাকাছি।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ভারতীয় সেনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের…

11 hours ago

বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক মোদী সরকারের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল কেন্দ্র।২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে পর্যটকদের উপর হামলা পরপাকিস্তানের বিরুদ্ধে…

11 hours ago

শূন্য কলস!!

শূন্য কলসি বাজে বেশি,আশৈশব এই বাক্যটি পাঠ্যে পড়ে বেড়ে উঠেছি আমরা সকলে।এখন পাক ফৌজির হম্বি…

16 hours ago

বাতিল করলেন তিন দেশের সফর প্রধানমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মে মাসের মাঝামাঝি ক্রোয়েশিয়া, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র…

17 hours ago

পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানে ভারতের হামলায় মৃত বেড়ে ২৬। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক জানিয়েছেন,…

17 hours ago

কৃষকের মাঝেই ঈশ্বরের অবস্থান: রতন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান!!

অনলাইন প্রতিনিধি :;মঙ্গলবার সারা রাজ্যে একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত বছর রাজ্যের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের…

18 hours ago