এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মারাঠি কেবল উদ্ধব ঠাকরে,শারদ পাওয়ার নহেন।মারাঠি পরিচয় একনাথ শিন্ডে, দেবেন্দ্র ফাডনবিশের আবার অবশ্যই মারাঠি নীতিন গড়করি।নির্বাচন চলাকালে মারাঠি বনাম গুজরাটির যে লড়াই চলিতেছিল মুম্বাই তথা মহারাষ্ট্রজুড়ে ফলাফলে তাহার প্রতিচ্ছবি দেখিয়াছেন সারা দেশের মানুষ।পাঁচ পর্যায়ের ভোট শেষ হইবার পর মহারাষ্ট্রের ভোটের দিকে সারা দেশের নজর ছিল অপলক।শুধুমাত্র এই কারণ নহে যে এনডিএ বা ইন্ডিয়া কত আসন পাইতেছে, তাহার চাইতেও জানিবার অধিক কৌতূহল ছিল সবার- বালাসাহেব ঠাকরের শিবসেনার প্রাণভোমরা কার হাতে। স্পষ্টতই প্রমাণ হইলো,ভোমরা উদ্ধব ঠাকরের কুঠুরিতেই, একনাথে শিন্ডের হাতে নহে।
অন্যদিকে অজিত পাওয়ার যে পাওয়ার নহেন পাওয়ার কেবল শারদ চন্দ্রেরই- তাহাও প্রমাণ করিয়া ছাড়িলেন মহারাষ্ট্রবাসী। ইহারা সবাই এখন পরীক্ষিত হইয়াছেন।সার্টিফিকেট দিয়াছে নির্বাচন কমিশন।বাকি রহিয়াছেন দেবেন্দ্র ফাড়নবিশ এবং নীতিন গড়করি।তাহাদের পরীক্ষা খানিক জটিল।জনগণ বা নির্বাচন কমিশনের কোনও সার্টিফিকেট তাহাদের দরকার নাই।দরকার বিজেপি নামক দলের বিশ্বাস এবং সমর্থন।সেই সমর্থনেই তাহারা নিজেদের মারাঠি অস্মিতা প্রমাণ করিবেন।সংসদে ম্যাজিক সংখ্যা হইতে নিচে নামিয়া প্রধানমন্ত্রী মোদি যত সময় অতিক্রম করিতেছেন ততই নানান ধরনের প্রতিকূলতা পাইতেছেন।তবে সরকার গঠনে এনডিএ শরিকদের তরফে আপাতত কোন বাধা তার সামনে নেই।রাষ্ট্রপতিকে সেই কথা লিখিতভাবে জানাইয়া আসিয়াছেন।এইবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে যাইবেন মোদি।
কিন্তু এর আগে আরও এক বাধা সামনে আসিয়াছে।মোদি এনডিএর প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হইয়াছেন বটে কিন্তু বিজেপির পরিষদীয় দলের নেতা হিসাবে এখনো নির্বাচিত হন নাই।ইহা এখনো বাকি রহিয়াছে।জানা গিয়েছে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক শেষ করিয়া তবেই প্রধানমন্ত্রীকে শপথ মঞ্চে যাইতে হইবে।সেই খানে কি কোনও বাধা বা প্রতিবন্ধকতা আসিতে পারে? তাহাও সম্ভব?রাজনীতিতে সকলই সম্ভব এবং অসম্ভব।মোদি শাহ এইবার বিজেপির নামে ভোট লড়েন নাই।ভোট ছিল মোদির গ্যারান্টির।মানুষ মোদি গ্যারান্টি মানিয়া লন নাই।বিজেপিকে সরকার গড়িবার মতন সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেন নাই।এর জবাবদিহি তো দলের ভেতরে হইতেই পারে।
দিল্লীতে যখন ইন্ডিয়া, এনডিএর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলিতেছিল সেই সময় মুম্বাইয়ে চলিতেছে বিভিন্ন ঘটনা।সেই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন মাস।সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব হইতে পদত্যাগের ইচ্ছা জানাইলেন।কারণ লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে বিজেপির যে শোচনীয় ফলাফল তাহার দায় নিজেদের মাথায় লইয়া তিনি সরিয়া যাইতে চান।ভোটের ফলাফলের উলটফেরে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি নানামুখী স্রোতে আন্দোলিত আর সংবাদ মাধ্যমে হাজার রকম উত্থানপতনের খবর, লক্ষ গুঞ্জন,আশঙ্কা সম্ভাবনার রকমারি।গুঞ্জন রহিয়াছে নাগপুর থেকে নির্বাচিত এবং সংঘ ঘনিষ্ঠ নীতিন গড়কড়ি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী হইতে পারেন।দলের ভেতরে সেই আয়োজন চলিতেছে। বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হইবে।
এই গুঞ্জন মহারাষ্ট্রের জনমানসে ব্যাপক প্রভাব ফেলিয়াছে।এই ধরনের খবরের সত্যাসত্য কে জানাইবে?তবে সকল প্রচার বা গুঞ্জনের মধ্যে গড়করি এবং সঙ্ঘের সঙ্গে দূরত্ব রক্ষাকারী ফাডনবিশের আচমকা পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশকে মারাঠি অস্মিতায় উত্তেজিত মানুষ দেশে প্রথম মারাঠি প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাবনাকে সত্য বলিয়া ধরিতে শুরু করিয়াছেন।অতএব সেই দিক হইতে শনিবার দিল্লীতে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য ইঙ্গিতবহ হইলেও হইতে পারে।শরিকদের মন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নানান দপ্তর তাদের হাতে দিতে হইতেছে।আবার শরিকদের মন রক্ষায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে রাজনাথ সিং-এর কথাও ভাবা হইতেছে বলিয়া জানা যায়।তবে এইসব খবরের সত্যতা শীঘ্রই মিলিবে,প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদির শপথ গ্রহণের পরেই।কিন্তু এত কিছুর পরেও কি শ্যামকুল রক্ষা হইতেছে?মহারাষ্ট্রে দুই সেনার, দুই পাওয়ারের নির্বাচিত সাংসদেদর মধ্যে কুশল মঙ্গল বিনিময়কে লইয়া রাজনীতি করিবার ইচ্ছাকে কেহ আমল করিত না যদি ফাডনবিশ পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ না করিত।
এই কথা সত্য যে মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ার এবং একনাথ শিন্ডে মোদিজির মুখ হইয়াই দল ছাড়িয়াছেন,ভোটে লড়িয়াছেন। তাহাদের সেই লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়াছে।মোদিজি যখন তাহার দিল্লী লইয়াই এত ব্যবস্থা থাকিতেছেন তখন অক্টোবরে বিধানসভার নির্বাচনে এই দুই পক্ষ কাহার মুখ অবলম্বন করিয়া ভোট লড়িবে?তাহাদের তো অনাথ হইবার উপক্রম হইতেছে। তাহার ওপর রহিয়াছে অঙ্কের সর্বশেষ জের।লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট যে আসন জিতিয়াছে তার নিরিখে ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় তাহাদের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৪। অর্থাৎ দুই সেনার কুশল বিনিময় ঘনঘন চলিতে থাকিলে তিন মাস আয়ুর বিধানসভা আবারো হাতবদল হইয়া যাইতে পারে। এতদিকে নজর দেওয়ার অবকাশ কিন্তু খুঁজিতে হইবে মোদিকেই।তাহার সামনে আজ বড় চ্যালেঞ্জ।ভক্তরা আবার কম্বু কন্ঠ কহিতে চাহিতেছেন,মোদিজি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। লক্ষ কোটি প্রাণে সেই বিশ্বাস আবার ফিরাইয়া আনিবেন মোদি।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

21 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

21 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago