মার্কিন কংগ্রেসে মোদি।
এক কথায় ইতিহাস।এবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ইতিহাস গড়েছেন মোদি।ভারতীয় সময়ের তখন বহস্পতিবার গভীর রাত। ঘড়ির কাটাতে তখন রাত সাড়ে বারোটা। মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিতে উঠেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেই সাথে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গড়লেন আরও এক ইতিহাস। কারণ তিনি ছাড়া আর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন কংগ্রেসে দু’বার বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি। গোটা বিশ্বে এর আগে এই নজির গড়েছেন নেলসন ম্যাণ্ডেলা, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং উইনস্টন চার্চিল। এখন এর সাথে যুক্ত হলো আরও একটি নাম। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যার নাম এখন গ্লোবাল লিডার হিসাবে আলোচনায় উঠে এসেছে।জনপ্রিয়তার নিরিখে মোদিই এখন বিশ্ব নেতাদের তালিকায় সবার শীর্ষে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ক্যাপিটল হিলে মার্কিন পার্লামেন্টে প্রবেশ করতেই সকলে শ্রদ্ধার সঙ্গে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানান। মার্কিন কংগ্রেসেই মোদি মোদি ধ্বনি উঠে।এদিনের অধিবেশনের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তারাও উঠে দাঁড়িয়ে মোদিকে স্বাগত জানান। এরপর টানা প্রায় এক ঘন্টার ভাষণে মোদি মার্কিন কংগ্রেসকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেন। ভাষণ চলাকালে পনেরোবার মার্কিন আইন প্রণেতারা দাঁড়িয়ে (স্ট্যাণ্ডিং ওভেশন) উঠে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। মোট ৭৯ বার অধিবেশন কক্ষ ভরে ওঠে করতালির আওয়াজে। আর এই সবের মধ্যে মাঝে মাঝেই ধ্বনিত হয়েছে মোদি……… মোদি……..।
ভাষণ যখন শেষ হলো, তখন অনেক মার্কিন কংগ্রেস সদস্যই প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ঘিরে ধরেন। একের পর এক অটোগ্রাফ নিলেন, করমর্দন করলেন, সেলফি তুললেন, কেউ কেউ করলেন আলিঙ্গন। নানা কারণে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু একজন ভারতীয় নাগরিক হিসাবে এই দৃশ্য সত্যিই গর্বের, গৌরবের এবং অবশ্যই আত্মমর্যাদার। এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দলের দুই মুসলিম সাংসদ ছাড়া,মার্কিন সেনেট এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস -এর সকল সদস্য- সদস্যারাই হাজির হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ শুনতে।এদিন মোদির ভাষণে, গণতন্ত্র থেকে করোনা টিকা, মঙ্গল অভিযান থেকে অর্থনীতি, প্রযুক্তি থেকে সন্ত্রাসবাদ, পরিবেশ রক্ষা থেকে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ – নানা বিষয় উঠে আসে। শুনিয়েছেন নিজের লেখা কবিতাও। তুলে ধরেন ভারতের অগ্রগতির কথাও। ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথাও শোনান প্রধানমন্ত্রী মোদি। বলেন, মার্কিন কংগ্রেসকে সম্বোধন করা একটি সম্মানের বিষয়। আর এই নিয়ে আমি দ্বিতীয়বার এই সম্মান প্রাপ্ত করলাম। বিগত কয়েক বছরে বিশ্বে এআই অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। একই সাথে আরও এক এআই ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে বিগত কয়েক বছরে। সেটা হলো আমেরিকা ও ইণ্ডিয়ার সম্পর্ক।নাম না করে পাকিস্তানকেও বিদ্ধ করতে ভুলেননি মোদি। আমেরিকার ৯/১১ এবং মুম্বাইয়ের ২৬/১১ সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, রাষ্ট্র সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতেই হবে। কট্টরপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদ এই বিশ্বের জন্য এক বড় হুমকি। এদের উদ্দেশ্য একটাই। সন্ত্রাসবাদ মানবজাতির শত্রু। এর মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোনও কিন্তু পরন্তু চলে না। যে যে শক্তি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে এবং সন্ত্রাসবাদের রপ্তানি করে, তাদের দমন করতেই হবে। মার্কিন কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে চিনকেও পরোক্ষভাবে আক্রমণ শানান মোদি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রসংঘের সনদের নীতির প্রতি শ্রদ্ধা, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি মান্যতার উপর ভিত্তি করে বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠে। ইউক্রেন ইস্যুতেও মুখ খোলেন মোদি। বলেন,এটা যুদ্ধের যুগ নয়। এখন আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে। ইউক্রেন সংঘাতের কারণে এই অঞ্চল সমস্যার মধ্যে আছে। কষ্ট পাচ্ছে।
মার্কিন কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র নিয়ে মোদি বলেন, গণতন্ত্র ভারতের জন্য পবিত্র একটি মূল্যবোধ।এটি দীর্ঘকাল ধরে বিকশিত হয়েছে এবং বিভিন্ন রূপ এবং ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে। মানুষের সততা ও মর্যাদাকে সমর্থনকারী চেতনা হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র হলো সেই ধারণা যা সমালোচনা, বিতর্ক এবং আলোচনাকে স্বাগত জানায়। গণতন্ত্র হলো সেই সংস্কৃতি যা চিন্তা ও ভাব প্রকাশকে ডানা মেলে ধরতে সাহায্য করে। অনাদিকাল থেকে এমন মূল্যবোধ পেয়ে ভারত ধন্য। গণতান্ত্রিক চেতনার বিবর্তনে ভারত এই মূল্যবোধের জননী । ডোনাল্ড ট্রাম্প জমানায় হাউডি মোদি’র পর বাইডেন জমানায় মোদির এই মার্কিন সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিশ্ব কূটনৈতিক – মহল। মার্কিন কংগ্রেসে সেই সম্ভাবনাই বার বার প্রতিফলিত হতে দেখা গেছে।