Categories: দেশ

মিজোরামে রেলসেতু ভেঙে মৃত ২৬, নিখোঁজ ১০, আর্তনাদ, শোক

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- বড়োসড়ো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে রেলপথ নির্মাণে নিয়োজিত অন্তত ছাব্বিশজন শ্রমিকের। নিখোঁজ দশজনের মতো। এই ঘটনা ঘটেছে মিজোরামের রাজধানী শহর আইজলের ২১ কিলোমিটার দূরে। আইজল বিমানবন্দর সংলগ্ন সাইরাং এলাকায় এই দুর্ঘটনায় নিহত, আহত এবং নিখোঁজদের প্রায় সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তাদের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার পুকুরিয়া, ইংলিশ বাজার এবং মানিকচক এলাকায়। ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জান জোরামথাঙ্গা এবং রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ঘোষণা করা হয়েছে ক্ষতিপূরণ। বুধবার সকাল দশটা নাগাদ সড়কের আইজল জেলার সাইরাং এলাকায় কুরুঙ নদীর উপর নির্মীয়মাণ রেল সেতুর স্টিলের তৈরি গার্ডার ভেঙে এই বিপত্তি ঘটেছে। এই প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে- সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ভৈরবী-আইজল ব্রডগেজ রেলপথ রূপায়ণের সময় উল্লেখিত দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৫১ কিলোমিটার ৩শো ৮০ মিটার দীর্ঘ এই রেলপথ নির্মাণের কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বুধবার সকালে আইজল বিমানবন্দর সংলগ্ন সাইরাঙে কুরুঙ নদীর উপর আচমকা একটি নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে পড়ে। সেতুর উপর থেকে পড়ে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে সতেরোজন নির্মাণ শ্রমিকের। সেতুর ভেঙে পড়া স্টিল গার্ডারের নিচে আরও অনেকে পড়ে থাকতে পারে, তাদের উদ্ধারকাজ চলছে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত হয়েছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। এই কমিটিতে রেলের পদস্থ আধিকারিকের পাশাপাশি এসব বিষয়ে পারদর্শীরা থাকবেন। তদন্তের পরই দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট হবে বলে সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানান। ভিন্ন সূত্রের বক্তব্য অনুসারে এর পেছনে প্রাথমিকভাবে বেশকিছু কারণ থাকতে পারে। তার অন্যতম সেতুর নকশায় ত্রুটি। সেতু নির্মাণে সতর্কতার
অভাবও দায়ী হতে পারে। থাকতে পারে নির্মাণ সামগ্রীতে গলদ। গত কয়েকদিনের মতো বুধবার চল্লিশজনের মতো শ্রমিক কাজ শুরু করে এবিসিআই এবং বিবিজে নামে বেসরকারী নির্মাণ সংস্থার তরফে। সকালে কাজ শুরুর অল্প সময় পরই ঘটেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি। আর্তনাদের শব্দ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্রুত শুরু হয় উদ্ধার কাজ। রেল, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং মিজোরামের রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সহ অন্যরা এই কাজে হাত লাগায় । তারপরও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনায় নিখোঁজ সবাইকে উদ্ধার করা যায়নি।
মিজোরাম পুলিশের আইজি আইনশৃঙ্খলা লালবাইকথাঙ্গা খৈঙ্গতে জানান, দুটি দেহ উদ্ধার করা যায়নি। নিখোজ রয়েছে পাঁচটি দেহ। ভিন্ন সূত্রের খবর, নিখোঁজের সংখ্যা অন্তত দশ। রেল সেতু নির্মাণকালে একশো মিটার লম্বা দিল গার্ডার ভেঙে যাওয়াতেই এই বিপর্যয় ঘটে বলে খবর। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল এলাকায় রেলপথ নির্মাণে সাম্প্রতিক অতীতে এত বড়ো দুর্ঘটনার খবর নেই। খবর নেই এতোজনের প্রাণহানির। আগরতলা রেলস্টেশনে ডেমু শেড নির্মাণকালেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ২০১৫ সালের এই দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়নি। দুর্ঘটনার পর মিজোরাম প্রশাসন উদ্ধারকাজের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিজনদের প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করা হয়েছে। রেলের তরফে এই ক্ষেত্রে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের। রেলের তরফে গুরুতর আহতদের ২ লাখ ও সামান্য আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করা হয়েছে। নয়াদিল্লীতে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। পাশাপাশি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট বার্তায় এ সম্পর্কে তার শোক প্রকাশ করেন। উল্লেখিত ভৈরবী-আইজল রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৭ মে থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজধানী শহরকে ব্রডগেজ রেলপথে সংযুক্ত করার অঙ্গ হিসাবেই শুরু হয়েছে এই কাজ প্রাথমিকভাবে, সাইরাম পর্যন্ত এই রেলপথে মোট চারটি স্টেশন পড়বে। কানপুই, হরতকি, মলখাই, ও সাউরাং।তারপর আইজল পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। পুরো রেলপথে ১৩০টি। কিন্তু, ২৩টি কৃত্তিম রেল সুড়ঙ্গ থাকলে। সাইলার সেশনের কাছে সেতু নির্মাণ করতে গিয়েই বড়োসড়ো অঘটন ঘটেছে বুধবার সকালে। মিজোরামে কুরুও নদীর উপর নির্মীয়মাণ রেল সেতু ভেঙে পড়ার খবরে কান্নার রোল ঘটনাস্থল থেকে প্রায় তেরশো কিলোমিটার দূরে মালদহের রতুয়া ব্লকের পুকুরিয়া থানার চৌদুয়া গ্রামে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারীভাবে মৃতদের নাম-ধাম ওই গ্রামে এসে না পৌঁছলেও চৌদুয়া গ্রামের ২৪ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এ দিন সকাল এগারোটায় মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে সাইরাং এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় ওই ব্রিজে অন্তত ৪০ জন কর্মী কাজ করছিলেন, এদের বড় অংশ বঙ্গের মালদহ থেকে সেখানে ঠিকাদারি সংস্থায় কাজ করতে যাওয়া ঠিকা শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাদের মধ্যে প্রথম ঘন্টায় ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ছাব্বিশ। মালদহ জেলা প্রশাসনকে শোকাহত পরিবারগুলি সমস্ত রকমের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের দেহ যত শীঘ্র সম্ভব তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সবরকম প্রচেষ্টা রাজ্য সরকার মিজোরাম প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে করে চলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিকটাত্মীয়দের যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার গভীর শোক প্রকাশ করে সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

23 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

23 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago