মিঠা জলের বৃহত্তম মাছ পিরারুকুর দাপটে তোলপাড় অ্যামাজন।
মাছ তো নয়,যেন সাক্ষাৎ দৈত্য! আকারে মানুষের চেয়ে দেড় গুণ বড়।নিবাস অ্যামাজন নদীর গভীরে। তবে মাঝে মাঝে তিমির মতো সে ভেসে ওঠে।তার লেজের দাপটে তোলপাড় হয়ে ওঠে নদীর পাড়। ইদানীং তেমন ঘটনাই ঘটেছিল। কোনও ভাবে অগভীর জলে চলে এসে তীরে আটকে পড়েছিল ওই মাছ।স্থানীয় জেলের দল সেটিকে দেখতে পেয়ে শিকার করে (ছবি)।
মৎস্যকুলের দৈত্যের নাম ‘পিরারুকু’। দেখতে দানবের মতো। আকার-আকৃতিতে মানুষের অন্তত দেড় গুন। ঠাকুমার মুখে এই মাছের গল্প শুনে বড় হয় অ্যামাজনের গহন জঙ্গলের আদিবাসী শিশুরা। প্রচলিত অনেক রূপকথা আছে পিরারুকুর জন্মরহস্য ঘিরে।
অ্যামাজনের ব্রাজিলীয় অংশের পশ্চিম অঞ্চলের কানামারি উপজাতিরা মনে করে, কয়েক হাজার বছর আগে একদিন গাছের একটি পাতা টুপ করে পড়ে যায় অ্যামাজন নদীতে। ওই একটি পাতা জলে পড়তেই একটি দৈত্যাকার মাছের জন্ম হয়। পিরারুকু মাছ সম্পর্কে এএফপিকে এমন কথাই বলেছেন ওই জনজাতির প্রধান মাউরো দা সিলভা।এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘আরাপাইমা গিগাস’। একটি পূর্ণাঙ্গ পিরারুকু ৯.৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। ওজন হয় ২০০ কিলো। বিশালদেহীর কারণেই মাছ ‘অ্যামাজনের গরু’ বলেও ডাকে স্থানীয়রা।
পিরারুকু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিঠা জলের মাছ। গোলাপি লেজ, চ্যাপ্টা মাথা ও গোলাকার চোখ বিশিষ্ঠ একটি সর্বভুক প্রাণী। লম্বাদেহী এ মাছ দেখতে অদ্ভুত হলেও খেতে ভীষণ সুস্বাদু। ফলে শিকারীদের কাছেও ভীষণ প্রিয় এই মাছ। চেহারা দানবের মতো হলে কী হবে, জাল ও হারপুন দিয়ে এটিকে মেরে ফেলা সহজ। পিরারুকুর চামড়াও কাজে লাগে। তৈরি হয় জুতা, ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, জ্যাকেটের মতো শৌখিন পণ্য। অন্য মাছের চেয়ে পিরারুকু স্বাদ ও পুষ্টির দিক থেকেও অনেক উৎকৃষ্ট। ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেইরো প্রায় সব বড় রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় পিরারুকুর ডিশ। ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী ‘মোকা’ ডিশ তৈরি করতে পিরারুকু ব্যবহার করেন শেফ মার্সেলো বার্সেলোস। মোকা হচ্ছে মাছের তৈরি এক বিশেষ ধরনের স্যুপ। পাম তেলে ডুবিয়ে রান্না করে, ধনে পাতা সহযোগে পরিবেশন করা হয় এই ডিশ, সঙ্গে মনিয়াক ময়দা ও বাদাম। ডিশটি খেতে যেমন সুস্বাদু, দেখতেও তেমন চোখ জুড়ানো। । নোনাজলের পোলক বা কড় মাছের মতোই সুস্বাদু বলে পিরারুকুকে ‘অ্যামাজনের কড’ বলেও ডাকা হয়।