মিডিয়াকে এড়িয়ে সামগ্রিক উন্নতি অসম্ভব : মুখ্যমন্ত্রী।

 মিডিয়াকে এড়িয়ে সামগ্রিক উন্নতি অসম্ভব : মুখ্যমন্ত্রী।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- তিনি যেন ইহ জগতে না থেকেও রয়ে গেছেন। নিজের মৃত্যুর পঁচিশ বছরের বেশি সময় পরও এ কথা নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে। ত্রিপুরার সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় প্রয়াত ভূপেন্দ্র দত্ত ভৌমিকের প্রসঙ্গ উত্থাপন ছাড়া অসম্ভব। শনিবার এ কথা নতুন করে উচ্চারিত হয়েছে। অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টের দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে তার কথা উঠে এসেছে বারবার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা থেকে শুরু করে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শানিত দেবরায় অথবা ত্রিপুরা সংবাদপত্র বিক্রেতা সমিতির প্রবীন ব্যক্তিত্ব ননীগোপাল সাহার মুখে প্রয়াত দত্ত ভৌমিকের কথা উঠে এসেছে নানাভাবে। ১৯৯৬ সালের এক সন্ধিক্ষণে তার হাত ধরেই গঠিত হয় অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্ট।
দৈনিক সংবাদের প্রাণপুরুষ ও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত দত্ত ভৌমিক রাজ্যের সংবাদ জগতে নয়া যুগের সৃষ্টি করেন। তিনি একাধারে সাংবাদিক, সম্পাদক ও পত্রিকা বিতরকের কাজ করার পাশাপাশি প্রয়োজনে মুদ্রণ যন্ত্র চালিয়েছেন। প্রয়োজনে মুদ্রণ যন্ত্রের সংস্কারে লেগে পড়েছেন। সারা শরীর মেখেছেন কালি। তিনি আবার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজেকে অভেদ্য প্রাচীর হিসাবে তুলে ধরেছেন। লড়াই করেছেন মাঠে নেমে। নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। বিভিন্ন বক্তার মুখেই শোনা গেছে এসব কথা। শনিবার রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলার মুক্তধারা সভাগৃহে তার চিন্তাপ্রসূত অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টের দ্বিতীয় রাজ্য কনভেনশনে প্রয়াত দত্ত ভৌমিক সশরীরে না থেকেও থেকে গেছেন বক্তাদের মননে। সভাগৃহ ভর্তি সবার চিন্তাচেতনায়।এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি এবং উদ্বোধকের ভাষণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। যারা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করতে চায় সর্বদাই তাদের পাশে থাকবে সরকার।এ দিন সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমের উপর কোনও ধরনের আক্রমণ যে সরকার বরদাস্ত করবে না তাও এককথায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সংগঠনের সহ-সভাপতি তথা বরিষ্ঠ সাংবাদিক শেখর দত্তের একটি উদ্ধৃতি টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের মে মাসের পর থেকেই নাকি সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের মাত্রা অনেকটাই নেই কিংবা কমে।এসেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের বিষয় কখনোই কাম্য নয়। দীর্ঘ বছর সাংবাদিকদের দাবিয়ে রেখে একটি ক্যান্সারের রাজনীতি করে রাখা হয়। এতে কোনও অবস্থাতেই চলতে দেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষও এ ধরনের বিষয়কে মেনে নেয় না। যারা করেন তাদেরকেও এ বিষয়টি উপলব্ধি করা উচিত।অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টসের দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেন, সংবাদ মাধ্যমকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। তবেই না এ রাজ্যকেও দেশের প্রধানমন্ত্রীর দিশা অনুযায়ী সামনের সারিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় যায়। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমই সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞগুলিকে সমাজের অন্তিম ব্যক্তির কাছে পৌঁছানোর জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমকে দাবিয়ে রেখে কখনও এগিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তবে সংবাদমাধ্যমকেও এক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। তার কথায়, সংবাদমাধ্যমগুলি তথ্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করলে সরকারের পক্ষেও কাজ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। সরকারের কোনও ভুলত্রুটি থাকলে তাও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই পরিবেশন করে থাকে সংবাদমাধ্যম। যারা সঠিকভাবে তা উপস্থাপন করতে পারে তাদেরই এই সমাজে উৎকর্ষতাও অনেকগুণ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম ছাড়া সরকার কার্যত অচল।এ দিন রাজ্য সরকারও যে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক তাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও বলেন, শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমেই তা করে দেখাতে চায় সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের যে কোনও সাংবাদিক কিংবা সংবাদমাধ্যম যে দেশের অন্যকোনও রাজ্যের সাংবাদিকদের তুলনায় কোনও অংশেই কম নয়। কদিন আগেই বহি রাজ্যের এক ববিষ্ঠ সাংবাদিক রাজ্যে এসে স্পষ্টতার সাথে উল্লেখ করেছেন একথা। তিনি বলেন, রাজ্যের সাংবাদিকদের গুণগত মান আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।এ দিন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা নিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর যে আলোচনায় বসতে চায় তাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, শীঘ্রই এ ব্যাপারে তিনি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে আলোচনায় বসবেন সাংবাদিকদের সাথে। এমনকী এ ব্যাপারে কমিটি গঠনের ব্যাপারেও উদ্যোগী হবেন বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি অব জার্নালিস্টস-এর সাধারণ সম্পাদক শানিত দেবরায় বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সাংবাদিকরা তাদের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষ থেকে তেমনভাবে আমল দেওয়া হচ্ছে না তাদের। রাজ্যের সাপ্তাহিক পত্রিকা এমনকী লিটল ম্যাগাজিনগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও তেমনভাবে নজর নেই দপ্তরের। যে কারণে একদিকে যেমন খুড়িয়ে চলছে এ রাজ্যের সাপ্তাহিক পত্রিকা কিংবা লিটল ম্যাগাজিনগুলি তেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও কেউই আর উঠে আসছে না। রাজ্য সরকারকে সাংবাদিক সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সংগঠনের সহ-সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক শেখর দত্ত সাংবাদিকদের মান উন্নয়নে গুরুত্ব দেন। স্বাগত ভাষণ দেন বিশ্বেন্দু ভট্টাচার্য। সাংবাদিক, অসাংবাদিক কর্মী, সংবাদপত্র বিক্রেতা সহ দিনের সম্মেলনে প্রায় পৌনে দুশোজন অংশ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে বক্তব্য রেখেছেন প্রায় কুড়িজন। সম্মেলনে সংগঠনের নয়া রাজ্য কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সাংবাদিক সুজিত দের নেতৃত্বে একটি প্রস্তুতি কমিটি গড়া হয়েছে। এদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা আগরতলা প্রেস ক্লাবে ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবির ও সংগঠনের পশ্চিম জেলা কমিটির সম্মেলনে সংবাদমাধ্যম সমাজের দর্পণ বলে উল্লেখ করেন। বলেন, রাজ্যের উন্নয়নের চিত্রগুলো জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।সাংবাদিক বান্ধব সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানে আন্তরিক বর্তমান রাজ্য সরকার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য, লোকাযুক্ত কল্যাণ নারায়ণ ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি অমিত বরণ ঘোষ। স্বাগত ভাষণ রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুনীল দেবনাথ। এ দিনের সম্মেলনে পশ্চিম জেলার নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.