মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন জিতেন্দ্র পেছনে বিরাট দুর্নীতির আভাস!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-পশ্চিমবঙ্গে গরু পাচার বাণিজ্যের অর্থে ত্রিপুরায় বেআইনিভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে শান্তিনিকেতন নামে একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ।এই অভিযোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতি এবং রাজ্য প্রশাসনের অন্দরেও তোলপাড় শুরু হয়েছে।এই ইস্যুতে রবিবার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্য সরকারকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলে একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলা হয়েছে।শুধু তাই নয়,ওই একই ইস্যুতে সোমবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহাকে দুই পাতার চিঠিতে আর বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে শীসঘ্রই প্রয়োজনীয় গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।তবে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ওই বেসরকারী তথাকথিত মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে যেসব বিস্ফোরক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে,চব্বিশ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও বিবৃতি নেই!রাজ্য সরকার এ বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব!
এদিকে, ওই বেসরকারী মেডিকেল কলেজ এবং এর কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে খোঁজ করতে গিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার মতো। বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নামে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ হলেও এটি ‘স্বাধীন’ নামে একটি ট্রাস্টের অন্তর্গত। আর এর কর্ণধার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার তৃণমূল নেতা ব্যবসায়ী মলয় পীঠ। এই মলয় পীঠ হলেন বীরভূমের তথাকথিত বাদশা তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডলের ডানহাত এবং ব্যবসায়িক পার্টনার। বর্তমানে অনুব্রত মন্ডল গরু পাচার থেকে শুরু করে একাধিক বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগে তিহার জেলে বন্দি। অনুব্রত মন্ডল সিবিআই ও ইডির জালে আবদ্ধ হওয়ার পর এই মলয় পীঠকেও সিবিআই একাধিকবার সমন পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখানেই শেষ নয়, সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গে নজিরবিহীন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডেও সিবিআই এই মলয় পীঠকে তলব করেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ফলে এই দুই বড় দুর্নীতিকাণ্ডে এখনও মলয় পীঠ সিবিআই এবং ইডির স্ক্যানারে রয়েছে। অনুব্রত মন্ডলের মতো মলয় পীঠও গ্রেপ্তার হতে পারে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
জানা গেছে,গুরু অনুব্রত গ্রেপ্তার হতেই মলয় পীঠ ত্রিপুরাকে আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়েছে। ত্রিপুরায় বিজেপিশাসিত সরকার চলছে। ফলে এখানে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী-মন্ত্রী এবং প্রশাসনকে হাত করে নিতে পারলে সহজেই সিবিআই এবং ইডিকে ফাঁকি দেওয়া যাবে। অভিযোগ, সেই উদ্দেশ্য সাধন করতেই ত্রিপুরায় মেডিকেল কলেজের নামে ব্যবসায় দুর্নীতি থেকে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা লগ্নি করছে। পরিকল্পনামতোই রাজ্যের শাসক দলের এক হেভিওয়েট নেতা ও জনপ্রতিনিধির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে, তার হাত ধরে মলয় পীঠ বিশ্ববায় আমে মেডিকেল ব্যবসায়।এমনই অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওই জনপ্রতিনিধির মাধ্যমেই ডুকলি এলাকায় জমি ক্রয় করা হয়। এই জমি ক্রয় করার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। একেবারে জলের দরে জমি ক্রয় করা হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি ক্রয়ের নামে মোটা অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, কলেজের বিল্ডিং থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মাণে যাবতীয় নির্মাণসামগ্রী (রড, ইট, বালি, সিমেন্ট) বকলমে ওই জনপ্রতিনিধিই সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ।
বাম আমলে কেরালা থেকে জিনেট নামে একটি বেসরকারী সংস্থাকে রাজ্যে ডেকে আনা হয়েছিল মেডিকেল কলেজ পরিচালনার জন্য। সেই কুকীর্তি ও দুর্নীতির কথা রাজ্যবাসী এখনও ভোলেনি। জিনেট নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল, তা রাজ্যবাসীর অজানা নয়। তখন যারা বিরোধী দলে ছিলেন তাদের ভূমিকাও রাজ্যবাসী দেখেছে। আজ তাদের অধিকাংশই শাসক দলের অংশ। তাছাড়া, বর্তমান সরকার যেখানে স্বচ্ছতার দাবি করে, সেখানে এই ধরনের কাণ্ডকীর্তি ঘটছে কী করে? এই প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। মেডিকেল কলেজের নামে যে অর্থ লগ্নি করা হচ্ছে সেই অর্থের উৎস নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ‘স্বাধীন’ নামক ট্রাস্টের ব্যাকগ্রাউন্ড কী? মেডিকেল কলেজ পরিচালনা করার মতো তাদের কি অভিজ্ঞতা রয়েছে? যে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের মাথায় সিবিআই এবং ইডির খাঁড়া ঝুলছে, তাকে কীভাবে এবং কোন্ স্বার্থে রাজ্যে মেডিকেল ব্যবসার জন্য ডেকে আনা হলো? কোন্ ভরসায়? কে বা কাদের ভরসায় মলয় পীঠ ত্রিপুরায় এত টাকা লগ্নি করছেন?কোন্ প্রভাবশালী এর পেছনে রয়েছে? রাজ্যবাসী জানতে চায়। আইজিএম- এর মতো রাজ্যের ঐতিহ্যশালী একটি সরকারী হাসপাতালকে কীসের ভিত্তিতে একটি নামগোত্রহীন বেসরকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে বর্তমান সরকার? সবথেকে বড় কথা, এই ব্যাপারে এখনও রাজ্য বিধানসভায় কোনও বিলও উত্থাপন করা হয়নি। অথচ মেডিকেল কলেজের পরিকাঠামো নির্মাণ হয়ে যাচ্ছে!রাজ্যে বেসরকারীস্তরে মেডিকেল কলেজ হোক, এতে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু এমন সংস্থাকে রাজ্যে আনা হোক, যাদের গোটা দেশজুড়ে নাম রয়েছে। গোটা দেশজুড়ে একাধিক মেডিকেল কলেজ সাফল্যের সাথে পরিচালনা করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা রয়েছে। যাতে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। এমসিআই সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের অনুমোদন ও স্বীকৃতি রয়েছে। অভিযোগ, নামগোত্রহীন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই সংস্থাটিকে রাজ্যে আনার পেছনে কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে। অভিযোগ, এই বেআইনি লেনদেনে ভাগ পেয়েছে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শুরু করে আরও অনেকে। দুই-তিনটি তথাকথিত প্রভাবশালী মিডিয়া হাউসেও চুপ থাকার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি এসব ব্যাপারে কিছুই জানেন না?
বিরোধী নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, শুভেন্দুবাবু নিজেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ওই সংস্থাটির বিরুদ্ধে চিঠি লিখে বলেছেন, স্বাধীন ট্রাস্টের পেছনে রয়েছে অনুব্রত মন্ডল। তাই বিষয়টি অত্যন্ত সিরিয়াস। মুখ্যমন্ত্রী যেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেন এবং অনুমতি না দেন।এদিকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, মলয় পীঠ ত্রিপুরায় ব্যবসা প্রসারিত করতেই, ইডি-ও স্থায়ীভাবে অফিস খুলে বসেছে আগরতলায়। জানা গেছে, ইডি ইতিমধ্যে তদন্তের জাল বিস্তার করছে, মলয় পীঠের টাকা কোথায় কোথায় গেছে তা খুঁজে বের করার জন্য।