মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক এড়াচ্ছে শিক্ষা দপ্তর!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের শোচনীয় ফলাফলের পরও হোশ ফিরলো না শিক্ষা দপ্তরের।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গত ১৬ মে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে মিলিত হবেন। তবে আজ আঠারো দিন অতিক্রম হচ্ছে।কিন্তু রাজ্য শিক্ষা দপ্তর মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের জন্যে নাকি প্রকাশিত স্কুলের ফলাফল সংক্রান্ত ফাইল করতে পারছেন না।মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একের পর এক নির্দেশ এলেও বৈঠকটি এড়িয়ে যেতে ব্যস্ত শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা।কারণ বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের শোচনীয় ফলাফলের বৈঠক হলেই আসল রহস্য প্রকাশিত হবে। তাই যেকোনও মূল্যে বৈঠকটি যাতে বাতিল হয় এই প্রচেষ্টাই চলছে।তবে শিক্ষা দপ্তরের বৈঠক বাতিলের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর এখন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে খবর।
রাজ্য মহাকরণ সূত্রে খবর, ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের পশ্চিম জেলায় রয়েছে ত্রিশটি স্কুল।ঊনকোটি জেলায় এগারোটি,গোমতী জেলায় ষোলটি, দক্ষিণ জেলায় বারোটি, উত্তর জেলায় পনেরোটি, সিপাহিজলা জেলায় ষোলটি,খোয়াই জেলায় বারোটি এবং ধলাই জেলায় তেরোটি বিদ্যালয় রয়েছে।কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সিবিএসই প্রশ্নপত্রে এই ১২৫টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক।পরীক্ষায় বসলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল করতে পারেনি।মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার মাত্র যাট শতাংশ এবং পঞ্চান্ন শতাংশ।আর এখন শিক্ষা দপ্তর স্কুলগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে না। তবে সহজেই অনুমেয় এর পিছনে কিছু একটা রয়েছে।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে সিবিএসই পরিচালিত দশম ২ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার একমাস আগে পর্যন্ত সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের কোনও সঠিক সিলেবাস ছিল না।তাই স্কুল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হয়ে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস অনুযায়ী পঠনপাঠন করাতে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের।এর মধ্যে ৮৮টি স্কুল আবার জন্মলগ্ন থেকে বাংলা মাধ্যমের – বিদ্যালয়।সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছিল না কোনও প্রশিক্ষণ।শুধুমাত্র রাজ্য মন্ত্রিসভাকে খুশি করার জন্যেই রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছে শিক্ষা দপ্তর। যার খেসারত দিলেন রাজ্যের হাজারো ছাত্রছাত্রী।শিক্ষা দপ্তরের ব্যর্থতার জন্যেই রাজ্য সরকারের বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে সিবিএসই-র দ্বাদশ মানের – পরীক্ষায় প্রায় পঁয়তাল্লিশ শতাংশ এবং দশম মানের পরীক্ষায় প্রায় চল্লিশ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে। রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম এত বিপুল পরিমাণে ছাত্রছাত্রী দশম ও দ্বাদশ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলো। এবছর বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে দ্বাদশ পরীক্ষায় ৯৬৭৪ জন পরীক্ষায় বসেছিল।এর মধ্যে মাত্র ৫৩৫৪ জন পাস করেছে। আর ফেল করেছে ৪৩২০ জন ছাত্রছাত্রী। দশম সিবিএসই শ্রেণীর পরীক্ষায় ৭৩৪১ জন বসেছিল।এর মধ্যে পাস করেছেন ৪৫৫৩জন। আর ফেল করেছেন ২৭৮৮ জন ছাত্রছাত্রী। শুধু তাই নয় সরকারী বিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা করে আদায় করেছে শিক্ষা দপ্তর। এখন এই সংগৃহিত বিপুল পরিমাণ অর্থের হিসাবও – শিক্ষা দপ্তরের কাছে নেই।এমনকী মন্ত্ররসভার সিদ্ধান্ত ছিল প্রথমে ১০০টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে একাডেমিক কাউন্সিলার ১০০ জন, স্পেশাল এডুকেটর ১০০ জন, ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচার ১০০ জন, প্রি-প্রাইমারি টিচার প্রত্যেকটি স্কুলের জন্য তিনজন, পিজিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা যথাক্রমে সোসিওলজি ৭৫ জন, সাইকোলজি ৭৫ জন, জিওগ্রাফি ৭৫ জন, ইকনোমিক্স ৭৫ জন। লাইব্রেরিয়ান ১০০ জন, স্টাফ নার্স, আয়া সহ ১৪০০ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। যা তিন বছরে হয়নি। যার খেসারত প্রদান করলেন রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা। উল্টো আরও ২৫টি স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের অধীনে এনে সিবিএসইর পাঠ্যক্রম চালু হয়ে যায়। আর এখন এই ব্যর্থতার কোনও সঠিক উত্তর রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের কাছে নেই। তাই প্রথম নির্বাচনের নামে আর এখন পরীক্ষার ফলাফল সংক্রাশ ফাইল তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। এই অজুহাতে বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছে শিক্ষা দপ্ত বলে অভিযোগ। তাই বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে ফলে রাজ্যের হাজারো ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।