মুখ্যমন্ত্রী বদল করে হার রোখা যাবে নাঃ মানিক

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২৩বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত । এরা ছয় কিংবা সাতটা আসন পেতে পারে । শাসক বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ার কোনও প্রয়োজন নেই । এই উপনির্বাচনে শাসক বিজেপিকে বিজেপিকে আমাদের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দেখিয়ে দিতে হবে , যাতে ২৩ শের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক আর উঠে দাঁড়াতে না পারে । শনিবার শ্রমিক সমাবেশে দলের নেতা কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে এই বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার । এদিন রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন সংলগ্নে সিআইটিইউর ত্রিপুরা রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশ্য সমাবেশ করা হয় । এই সভায় সিট্যুর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন , রাজ্য সভাপতি মানিক দে , রাজ্য সম্পাদক শঙ্কর প্রসাদ দত্ত বিজেপি সরকারের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন । প্রকাশ্য সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো । সমাবেশে মানিক সরকার বলেছেন , আজ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিলো বিজেপির জনসমর্থন শূন্য । এই সত্যটা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরাও জানেন এরা সাতটির বেশি আসন পাবে না । বিজেপির ভিশনডকুমেন্ট , এক ত্রিপুরা , শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা বর্তমানে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে । এই কারণেই প্রতিশ্রুতি পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে এবং ২৩ শে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিপ্লব কুমার দেবকে সরিয়ে দিলো বিজেপি ।

রাজ্যের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যই এই মুখ্যমন্ত্রী বদলের সিদ্ধান্ত নিলো বিজেপি । বিজেপি দলের এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে দিলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি , স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর আশীর্বাদে বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে চলা রাজ্যের বিজেপি সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ । একটি নির্বাচিতসরকারের মেয়াদ যখন শেষ হবার মুখে , ব্যর্থতার নিদর্শন । মাত্র নয় মাস বাকি , সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বদলের সিদ্ধান্ত সরকার ও দলের চরম ব্যর্থতার নিদর্শন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন , এখন তড়িঘড়ি করে রাজ্যের কৃতী সন্তান ডা . মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলো । ভালো , কারণ মুখ্যমন্ত্রীর পদ তো শূন্য থাকতে পারে না । তবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আমাদের এখন পর্যন্ত কোনও বিরোধ নেই । তার পরিবারের সাথে আমাদের দলের সম্পর্ক ভালো । বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বড় ভাই আগরতলা পুরসভার সিপিএমের মনোনীত সদস্য ছিলেন । একটি বিষয় আরও ভালো লাগলো , রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি এক সভায় স্বীকার করেছেন রাজ্যে ভোট লুট হচ্ছে । ভোটের নামে ছাপ্পা ভোট , লুটপাট , জবরদখল হয়েছে । এই সব কর্মকাণ্ডের সময়ে রাজ্যে ছিলেন সদ্য প্রাক্তন পদত্যাগ করা মুখ্যমন্ত্রী । সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে তার এই বক্তব্য আমি সহ রাজ্যবাসীর নজরে এসেছে । বিরোধী দলনেতা আরও বলেছেন দেখলাম মুখ্যমন্ত্রী দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি , কিছু নেই । প্রধানমন্ত্রী , স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ আরও অনেকের সাথে দেখা করেছেন । তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু তিনি কী করে কাজ , খাদ্য , রোজগার , বেকারের চাকরি সহ সবগুলি প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন তা বোঝা গেলো না । কারণ বিজেপি জোট সরকার ভিশন ডকুমেন্টের মাধ্যমে ২৯৯ টি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এরা ক্ষমতায় এসেছে ।

তাই এখন বিদায় বেলায় মুখ্যমন্ত্রী বদল করেও পরাজয় রোখা যাবে না । বছরে পঞ্চাশ হাজার চাকরির মোতাবেক চার বছরে দুই লক্ষ বেকারের সরকারী চাকরি হবার কথা। কিন্তু এরা চাকরির সুযোগই বন্ধ করে দিয়েছে । ডাই – ইন হারনেসে চাকরি পর্যন্ত বন্ধ করে দিলো । সরকারী চাকরি প্রদানের নামে ১০৩২৩ শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে পর্যন্ত বঞ্চনা করেছে বিজেপি । টেট শিক্ষক এবং টেট উত্তীর্ণ বেকারদের সাথেও প্রতিশ্রুতির খেলাপ করেছে বিজেপি সরকার । পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময় চলমান সব নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার ফলে বর্তমানে প্রায় পঁচিশ হাজার শিক্ষিত যুবক যুবতীরা বয়স উত্তীর্ণ বেকারে পরিণত হয়ে গিয়েছে । প্রতিশ্রুতি ছিল ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার হলে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের সপ্তম বেতনক্রম প্রদান করা হবে । এই প্রথম কেবিনেট বৈঠকে রাজ্যের অনিয়মিত , ডিআরডব্লিউ , কন্ট্রাকচ্যুয়েল কর্মচারীদের নিয়মিত করা হবে কেন্দ্রীয় প্রকল্প যথাক্রমে সর্বশিক্ষা , এনআরএইচএম , রেগা সহ অন্যান্য প্রকল্পের কর্মচারীদেরও নিয়মিত করা হবে । রাজ্যের টিএসআর , অন্যান্য রাজ্য পুলিশের সকল স্তরের কর্মচারীদেরও কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর মতো বেতনভাতা কেন্দ্রীয় হারে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেওয়া হবে । রাজ্যের শিক্ষক সরকারী কর্মচারীদের সাথে প্রতারণা করেছে বিজেপি সরকার । উল্টো সামাজিক ভাতা দুই হাজার টাকা , রেগার মজুরি ৩৮০ টাকা সহ দুশো দিনের কাজের বিষয় গায়েব ।

টুয়েপের এবং রেগার কাজ পর্যন্ত বন্ধ । রাজ্যে দুর্নীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলছে । কাজ নেই । খাদ্য নেই । পানীয় জল নেই । পুলিশ কাঠপুতুল । গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই । দেশের সংবিধান রাজ্যে চলছে না । সুষ্ঠু অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন রাজ্যে হচ্ছে না । মানুষের ভোট দানের অধিকার নেই । বিরোধী রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা নেই । সমাজদ্রোহীদের কাছে রাজ্যটাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে । রাজ্যে ফ্যাসিস্ট সুলভ সন্ত্রাস চলছে । কারণ একদলীয় স্বৈরশাসন , জঙ্গলের রাজত্ব নিয়ে এসেছে বিজেপি । এখন বিজেপি মুক্ত ত্রিপুরা গড়তে রাজ্যের মানুষ ঘরে ঘরে চুড়ান্ত প্রস্তুত রয়েছেন । তাই মুখ্যমন্ত্রী বদল করেও পরাজয় রুখতে পারবে না বিজেপি । রাজ্যের মানুষ এখন সব কিছুই বুঝতে পারছেন । তিনি দলের রাজ্য নেতৃত্ব নেতা কর্মী যুববাহিনীর সমর্থকের উদ্দেশে বলেন , বিজেপির ভোট লুট এখন বন্ধ করে দিতে হবে । মানুষকে ভোট দানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে । ঘরে বসে থাকার দিন শেষ হয়ে গিয়েছে । তাই বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাম যুবকদের এখন রাজপথে থেকে রাজ্যবাসীর সাহস জোগাতে হবে প্রত্যেক দিন । প্রয়োজনে রাজপথে নামুন । কারণ প্রতিরোধ দ্বারাই ক্ষমতা পুনর্দখল করা যাবে । এদিনও রাজ্যের গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারে এবং ক্ষমতা পুন : প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলকে পথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রী সরকার ।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

15 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

15 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago