মুখ পোড়াচ্ছে পুলিশ!
অনলাইন প্রতিনিধি :- বর্তমান সমাজব্যবস্থায় পুলিশকে দেখা দেয় জনগণের বন্ধু হিসাবে।
সমাজকে অপরাধ মুক্ত রাখতে, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করে পুলিশ। সমাজে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, সমাজদ্রোহী, সন্ত্রাসী এদের রাজ কঠোর হতে দমন ও প্রতিরোধ করার দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। জনগণের জীবন মানসম্পত্তি সব কিছু রক্ষায় দায়িত্ব পুলিশের উপর ন্যস্ত। ফলে সমাজে পুলিশের কাজ ও ভূমিকা কী? তা বোধ হয় বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই। কেননা, পুলিশ এবং পুলিশের কাজ সম্পর্কে আট থেকে আশি, সকলেই অবহিত। ছোট থাকতেই শিশুদের শেখানো হয় পুলিশ সমাজ ও জনগণের বন্ধু। এই শিক্ষা নিয়েই ছোটরা বড় হয়। অভিধানে ‘পুলিশ’ হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত আইন কার্যকর, সম্পত্তি রক্ষা, সামাজিক অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং জনগণের নিরাপত্তা রক্ষাকারী একটি বাহিনী। ‘পুলিশ’ শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ থেকে। ‘পুলিশ’-এর পুরো নাম হচ্ছে ‘প্রটেকশন অফ লাইফ ইন সিভিলস ইমার্জেন্সি’। এই নামের মধ্যেই রয়েছে পুলিশের মূল অর্থ।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই পুলিশই যদি উল্টো কাজ করে, তখন কী হবে?রাষ্ট্র যার কাঁধে এবং হাতে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করেছে,জনগণের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে, চোর-ডাকাত- ছিনতাইকারীর হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব অর্পণ করেছে,সেই পুলিশই যদি চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী এবং অপরাধীরভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তখন সমাজ এবং আমজনতার পরিস্থিতি কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। এই নিয়ে বিস্তারিত বলার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু রাষ্ট্রপতির পুরস্কারপ্রাপ্ত ত্রিপুরা পুলিশের একাংশ কর্মী নিজেদের ঐতিহ্য, পরম্পরা এবং ইতিহাসকে ভুলে গিয়ে এখন সমাজে অপরাধীদের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাচ্ছে। তাদের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে একদিকে ‘পুলিশ’ নামক শব্দটি যেমন-
কালিমালিপ্ত এবং কলঙ্কিত হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশের উপর জনগণের আস্থা-বিশ্বাস ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। সমাজের ‘বন্ধু’ ক্রমশ ভয়ের কারণ- হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্র, সরকার এবং গোটা পুলিশ ব্যবস্থারও বদনাম হচ্ছে। একাংশ পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়।কিন্তু সাম্প্রতিককালে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে অপরাধীর তালিকায় পুলিশ। যা অত্যন্ত উদ্বেগের এবং চিন্তার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার রাজ্যের প্রায় সবকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর পুলিশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সোনামুড়া থানার ওসি সহ একদল পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ১৬ লক্ষ টাকা ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে। তল্লাশির নামে বাড়িতে ঢুকে ওই টাকা লুঠ করে নিয়ে গেছে পুলিশ। অভিযোগ, এমনটাই। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও, শেষরক্ষা হয়নি। ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে জেলার এসপি-কে নির্দেশ দিয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডাকাতির এজাহার (এফআইআর) সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।এই নির্দেশ প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশের মুখে চুনকালি পড়ে।
শুধু সোনামুড়ার ঘটনাই নয়, কিছুদিন আগে কাঞ্চনপুরে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ লুঠ করার অভিযোগে পুলিশের এক অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়। দুই দিন আগে একজন পুলিশ কর্মী নেশাগ্রস্ত হয়ে বিশালগড় আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে বিচারকের সাথে অভব্য আচরণ করেছেন। অভিযোগ, পুলিশকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে নেশার রমরমা, পাচার বাণিজ্য থেকে শুরু করে যাবতীয় অপরাধকাণ্ড চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব যদি দিন দিন বাড়তেই থাকে, তাহলে এই সমাজের কী হবে? পুলিশই যদি অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে জনগণের জীবন মান সম্পত্তি রক্ষা এবং নিরাপত্তার কী হবে? তবে আমরা মনে প্রাণে এখনো বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করতে চাই- পুলিশ সমাজের বন্ধু। নিরানব্বই শতাংশ পুলিশ কর্মী দিন-রাত এক করে কাজ করেন বলেই, সমাজটা এখনো টিকে আছে। আমরা তাদের স্যালুটে জানাই। কিন্তু একশতাংশ, যাদের কারণে গোটা পুলিশব্যবস্থার মুখ পুড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি। নতুবা মুখ পুড়তেই থাকবে।