মূল্যবৃদ্ধির চাপ!

 মূল্যবৃদ্ধির চাপ!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারতের অর্থনীতির ঘাড়ে একটু একটু করে ক্রমেই চেপে বসতে শুরু করেছে মূল্যবৃদ্ধির চাপ। ফলে সরকার মুখে যতই আগামীদিনে দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির স্বপ্নে মশগুল থাকুক না কেন, বাস্তব চিত্র কিন্তু তা নয়। এতদিন বলা হচ্ছিল বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার কারণে ইউরোপ ও আমেরিকার উপর বড়সড় ধাক্কার সম্ভাবনা থাকলেও ভারতের ক্ষেত্রে তেমন আশঙ্কার কারণ নেই। বরং সারা বিশ্বের অস্থিরতার প্রভাব ভারতে অনেক কম পড়বে। কিছু দিন যত যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতির বাস্তব চিত্রটা ক্রমেই বদলাচ্ছে।

মাত্র মাস চারেক আগে আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি অর্থবর্ষে দেশের ৭.৫ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির কথা শুনিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরনও বলেছিলেন, নিশ্চিতভাবেই ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের উপরে থাকবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এডিবি ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করে জানিয়েছিল, এ বছর ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৭ শতাংশ। এডিবি ও তাদের এপ্রিলের রিপোর্টে ভারতের জিডিপি ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।

কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেই পূর্বাভাস হেঁটে ভারতের জিডিপি ৭.২ শতাংশে নেমে আসার কথা জানায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক। বিশ্ব ব্যাঙ্ক নিজেও গত জুন মাসে তাদের বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাবনা সংক্রান্ত রিপোর্টে ভারতের আর্থিত বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ দাঁড়াতে পারে বলে আশাবাদের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু চার মাস না। ঘুরতেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক তার অভিমত পাল্টাতে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে এক সমীক্ষা বৈঠকে বিশ্ব ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার তথা আইএমএফের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেনচ ভারতে এবার আর্থিক বৃদ্ধির হার অর্থাৎ দেশের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন সাড়ে ছয় শতাংশে এসে দাঁড়াতে পারে।

অর্থাৎ আগে যা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল তা থেকে ১ শতাংশ কমে গেল বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুমান ও হিসাব। তারও আগে বিশ্বব্যাঙ্ক গত ডিসেম্বরে তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮.৭ শতাংশ হতে পারে।
ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধির হারে এই ধাক্কা এবং ক্রমাগত জিডিপি বৃদ্ধির হারের এই নিম্নমুখী সংশোধন কোনও ভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো বার্তা নয়। দেশের সরকার যখন একদিকে দাবি করেছে যে আমাদের দেশের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেড়েছে তখন এর অর্থ দাঁড়ায় নিশ্চয়ই আমাদের খরচের সামর্থ্যও বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে দেখা যায়, দেশের আভ্যন্তরীণ মোট আয় এবং মানুষের মাথাপিছু আয় যা বলা হচ্ছে তার তুলনায় সামর্থ্যের মধ্যে তারতম্য বেড়েই চলছে।

আমরা বলছি দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, অথচ বর্ধিত আয়ের দেশ হিসাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও দরিদ্র লোকের পাশে দাঁড়ানোর সামর্থ্য প্রভৃতির সাপেক্ষে আমাদের অগ্রগতি আশাব্যাঞ্জক নয়। অতিমারির প্রভাবে দেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে। যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে এটা পুনরুদ্ধার করতে না পারা এবং দীর্ঘমেয়াদি দেশে বেকারত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য বড় শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। এতে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই শ্রমিক ও দৈনিক মজুরির উপর নির্ভরশীল। ফলে এর সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার ইস্যুও যুক্ত। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা খুবই দুর্বল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারী ব্যয় অপ্রতুল না হলেও তা যথাযথ জায়গায় ঠিকমতো পৌঁছে না। এই নিরিখে নতুন বেকারত্ব অবশ্যই চিন্তার বিষয়।

এতে সমাজের ভেতরকার বিদ্যমান বৈষম্যগুলো এখন প্রকট হচ্ছে। সরকারী নীতির অসমতা বৈষম্যকে বাড়াচ্ছে। উচ্চবিত্তদের একতরফা সুযোগসুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে নিম্নবিত্তদের সামনে আর্থিক সঙ্কট মারাত্মক আকার নিচ্ছে। মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে। বাড়ছে আর্থিক বোঝা। এভাবে ধনী ও দরিদ্র্যের মধ্যে বৈষম্য ও দূরত্ব বাড়লেও সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে না। এটাই বড় আশঙ্কার কথা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.