মৃত নক্ষত্রের সঙ্গে গ্রহের প্রেমলীলা, বিস্মিত নাসার বিজ্ঞানীরা

 মৃত নক্ষত্রের সঙ্গে গ্রহের প্রেমলীলা, বিস্মিত নাসার বিজ্ঞানীরা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বৃহস্পতির চেয়েও বড় , বিশালাকৃতির এক গ্রহ । সে আবার প্রেমে মজেছে এক মৃত নক্ষত্রের । এবং এই কাণ্ড ঘটে চলেছে পৃথিবীর কাছেই । এমন অতিজাগতিক প্রেম – কাহিনি নাসার তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদেরও স্তম্ভিত করে দিয়েছে । নক্ষত্রটি আকারে বামন , তার উপর সাদা রঙের । পরিভাষায় এদের বলে ‘ হোয়াইট ডোয়ার্ফ । আকারে ছোট হলে কী হবে , মারাত্মক তেজি । এই তারার ঘনত্বের সঙ্গে সূর্যের তুলনা করা হয় । আপেক্ষের বিষয় হল , অতিকায় গ্রহটি যে তারার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে , সেটি আদতে মৃত । তবু তার মায়া কাটাতে পারেনি নক্ষত্রের চারপাশে থাকা গ্রহটি । মৃত তারার শরীর ঘিরেই অবিরত সে পাক খেয়ে চলেছে । পৃথিবী থেকে মাত্র ৮০ আলোকবর্ষ দূরে এই অতিজাগতিক কাণ্ড ঘটে চলেছে ( ছবি ) ।

নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন , গ্রহ – তারার প্রেম ব্রহ্মাণ্ডে নতুন কিছু নয় । তবে মৃত একটি নক্ষত্রকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে অতিকায় এক গ্রহ , এমনটা আগে তারা কখনও দেখেননি । তারা থেকে আগুনের অংশ ছিটকে গিয়ে গ্রহ তৈরি হয় । তারাদের ঘিরেই গ্রহদের সংসার । যেমন সূর্যের মতো তেজি নক্ষত্রকে ঘিরে আস্ত একটা সৌরমণ্ডল তৈরি হয়েছে । বিজ্ঞানীরা অবাক হয়েছেন এটা দেখে যে , মৃত তারার শরীর লেপ্টে যে গ্রহটি ঘুরে চলেছে প্রথমত সেটি আয়তনে বিরাট— প্রায় বৃহস্পতির সমান , দ্বিতীয়ত পৃথিবীর এত কাছে ! নাসার বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন , গ্রহটির নিজের অক্ষের চারপাশে পাক খেতে সময় লাগে পৃথিবীর সময় অনুযায়ী ১.৪ দিন ।| পৃথিবীর এত কাছে যে এমন বিচিত্র ঘটনা ঘটে চলেছে নাসা আগেই তার আঁচ পেয়েছিল। ভিন্ন গ্রহের সন্ধান করতে গিয়ে গ্রহ – তারার এই জুটিকে আবিষ্কার করেছে নাসার ‘ ট্রানসিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট ‘ , সংক্ষেপে ‘ টোস’ । তবে একা টেস নয় , পুরোনো আমলের পিৎজার স্পেস টেলিস্কোপেও ধরা পড়েছে এই অতিজাগতিক প্রেমের দৃশ্য । সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকপত্র ‘ নেচার ‘ – এ এই গ্রহ – তারার প্রেম কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে । এখানে বিজ্ঞানীরা বলেছেন , এতদিন তাদের ধারণা ছিল সাদা বামন তারাকে ঘিরে কোনও গ্রহ পাক খেতে পারে না কারণ এই তারারা প্রচণ্ড ভেজি হয় । কিন্তু এই ঘটনা তাদের পুরোনো ধারণা ভেঙে দিয়েছে । যে গ্রহটি পাক খাচ্ছে , সেটিরও গঠন পৃথিবীর মতো পাথুরে । ফলে বিজ্ঞানীরা এবার খোঁজ শুরু করবেন যে , এই ধরনের দ্বিতীয় কাণ্ডটি ব্রহ্মাণ্ডের আর কোথায় ঘটে চলেছে কি না । ‘ নেচার ‘ – এর পাশাপাশি ‘ দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল নেটার্স ‘ সাময়িকপত্রেও এই কাহিনি ছাপা হয়েছে । বিজ্ঞানীরা এখানে বলেছেন , এই সাদা বামন নক্ষত্রের নাম ‘ ডব্লুডি ১৮৫৬ + ৫৩৪ ‘ । আর তার প্রেমে মজে থাকা পেল্লায় গ্রহটির নাম ‘ ডবলুডি ১৮৫ বি ‘ । তারা বলেছেন , গ্রহটিকে দেখতে বৃহস্পতির মতো লাগলেও আদতে সেটি আকার ও ভরে বৃহস্পতির চেয়ে প্রায় ১৪ গুণ বড় । বুধের থেকেও বেশি গতিসম্পন্ন । সাদা বামন নক্ষত্রেরা এমনিতে খুব উত্তপ্ত হয় । তাদের শরীর থেকে প্রচণ্ড বিকিরণ হয় । পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা এমন বামন তারা হল ‘ সিরিয়াস বি ‘ । সেটি রয়েছে আমাদের এই গ্রহ থেকে মাত্র ৮.৬ আলোকবর্ষ দূরে । সূর্যের কাছাকাছি এমন শতাধিক নক্ষত্রের ভিড়ে মিশে আছে আটটি বামন তারা । এই সাদা – বামন তারাদের তেজ এত বেশি যে এদের চারপাশে পাক খেতে গ্রহদের হিমশিম খেতে হয় । তুলনায় লাল বামন নক্ষত্রেরা অনেক শান্তশিষ্ট । তাদের শরীরে সূর্যের মতো গনগনে আঁচ নেই । পৃথিবীর এমন একটি লাল বামন – তারার খোঁজও নাসার বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক অতীতে পেয়েছিলেন ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.