মেঘালয়ে এবার চতুর্মুখী লড়াই!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইউরোপ ও আমেরিকা সফরের এক বছরের ধকল কাটিয়ে ১৯২৩ সালে খাসি পাহাড়ের গায়ে যে শহরে বসে কবিগুরু ‘রক্তকরবী’ লিখেছিলেন, তার ঠিক একশো বছর পরের শিলংয়ের ভোটের ‘মেজাজ’ দেখলে তিনিও নিঃসন্দেহে চমকে উঠতেন। শিলংয়ের প্রাণকেন্দ্র পুলিশ বাজারের একদিকে বাঁক খেয়ে যে রাস্তা ঢালে নেমে গেছে, সেটা কুইন্টন রোড। খাসি, জয়ন্তীয়া, আসামি, বাঙালি লোকজন মিলেমিশে একাকার। রবিবার দুপুরে পরিচয় গোপন রেখেই তাদের সঙ্গে আড্ডায় ভিড়ে গিয়ে যতটুকু বুঝলাম, তা বেশ চমকপ্রদ। ভোট এলেই সাবেক মেঘালয় রাজ্যে টাকা উড়ে। নেতারা উড়ান। টাকাই নাকি এখানে ভোটের সেরা টোপ! না, রাজধানী শিলংয়ে সেভাবে উড়ে না, উড়ে গ্রামাঞ্চলে। বিশেষত গারো পাহাড়ের বিস্তীর্ণ প্রান্তে। এবারও উড়ছে। পুলিশ বাজারের খাবারের হোটেল চালান সরোজ চৌধুরী। কয়েক পুরুষ ধরে তার পরিবার শিলংয়ের বাসিন্দা। অকপটে বললেন, আমার পরিবারে মোট ষাটটি ভোট। আমি তিনটে দলকেই সাফ জানিয়ে দিয়েছি, ত্রিশ হাজার টাকা ছাড়ুন, ষাটটা ভোট নিয়ে যান! এভাবে ভোট কেনাবেচা হয়? শুনতে অবাক লাগলেও নাকি তাই হয়। কাব্য করে এভাবেও বলা যায়, ক্ষমতা তুমি কার? নোট যার, তার! গত দশ বছরে মেঘালয়ে নোট ভোটের সেটিং তত্ত্ব আরও জমাট হয়েছে। নোটে যে এখানে ভোট হয়, তার আরও একটা কারণ, শাসকের ক্ষমতা এখানে কার্যত মিউজিক্যাল চেয়ার। জনতার ভোট জিতে বিধায়ক পরে দলবদল করবেন, এটাই যেন মেঘালয়ের রাজনীতির রোজনামচা। এবার যিনি একটি দলের হয়ে লড়ে বিধায়ক নির্বাচিত হবেন, আগামী পাঁচ বছর বাদেও তিনি যে ফের এই দলের প্রতীকেই লড়বেন, তার গ্যারান্টি চিনা ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চেয়েও কম। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে পাঁচ বছরে ষাটজনের মধ্যে কুড়ি জনের বেশি,অর্থাৎ তিন ভাগের একভাগ বিধায়ক দল পাল্টেছেন। আগামী সোমবার সাতাশ তারিখ ষাট আসনের মেঘালয়ের বিধানসভার ভোট। ফল প্রকাশ ত্রিপুরার সঙ্গেই দুই মার্চ। মেঘালয়ে লড়াই এবার চতুর্মুখী। মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সংমার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূল। পাঁচ বছর আগে একুশ আসনে জয়ী হয়ে একক বৃহত্ততম দল হয়েছিল কংগ্রেস। গত বছরের নভেম্বরে সেই কংগ্রেসের বারো বিধায়ক, বিরোধী দলনেতা তথা দুইবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সংমার হাত ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। সেই থেকে তৃণমূল এখানে প্রধান বিরোধী দল। গত এক-দেড় মাসে এনসিপির একমাত্র বিধায়ক দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। অন্যদিকে শাসক এনপিপির বিধায়ক যোগ দেন বিজেপিতে। এদিকে এনপিপির আর এক বিধায়ক দল পাল্টে তৃণমূলে এসেছেন। তার আগমনের ফলে তৃণমূলের ঘোষিত প্রার্থী সম্বরলাং ডিংডো এই বলে বিজেপিতে চলে গেছেন যে, তিনি আর কর্দমাক্ত রাজনীতি চান না, পরিচ্ছন্ন দলে থেকে রাজনীতি করতে চান। ডিংডো একা নন, কংগ্রেস ছেড়ে আসা আরও দুই বিধায়ক ফুল বদলান, জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুলে।মেঘালয়ে দল বদলের এমন মর্মান্তিক প্রবণতা, তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয়, এই নিয়ে ভোটারদের কোনও মাথাব্যথা নেই। ভোটারদের মনের কথা হল, তুমি বাপু যদি আমার ভোট জিতে পাঁচ বছর কামাতে পারো, তা হলে ভোটের মুরশুমে আমিই বা পারবো না কেন? তাই ভোট এলেই নোট উড়ে খাসি, জয়ন্তী আর গারো পাহাড়ের ঢালে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

11 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

11 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

11 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

11 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

1 day ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

1 day ago