মোদির নেতৃত্বেই উত্তর-পূর্বের উন্নয়ন কার্যকর হচ্ছে : মানিক

 মোদির নেতৃত্বেই উত্তর-পূর্বের উন্নয়ন কার্যকর হচ্ছে : মানিক
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কেন্দ্রের সরকার এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দোরগোড়ায়। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক প্রয়াস ও নীতির কারণে। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বেই যথাযথভাবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসি কার্যকর হচ্ছে। যা আগামীদিনে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নের শিখড়ে নিয়ে যাবে। গত ৮ ও ৯ অক্টোবর গুয়াহাটিতে উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্যদের দুদিনব্যাপী ৭০তম প্ল্যানারি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে ফিরে সোমবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে এই কথাগুলি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা । দুদিনব্যাপী এনইসি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পর্ষদের চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়নের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি সহ অন্য শীর্ষ আধিকারিকরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীরা। বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তর -পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্ৰী জানান, বৈঠকে এসডিজি, ডিস্ট্রিক্ট ইণ্ডিকেটর ফ্রেম ওয়ার্ক ফর নর্থ ইস্ট, পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা, বেসরকারী ক্ষেত্রে বিনিয়োগ (পিপিপি), ৫ জি পরিষেবা, ডিজিটাল স্কুল চালু, এন্টারপ্রেনারশিপের উন্নয়ন ইত্যাদি নানা বিষয় তুলে ধরে কেন্দ্র ও এনইসির সহযোগিতা চেয়েছেন। একই সাথে, উন্নয়নের বকেয়া বিষয়গুলি দ্রুত সমাধানের জন্যও দাবি জানান ।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারকে উত্তর -পূর্বাঞ্চলের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন। উত্তর পূর্বাঞ্চলের শান্তি রক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গত আট বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দ্বার্থহীন প্রতিশ্রুতির ফলে এই অঞ্চলের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহের মধ্যে সরকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস সদর্থক আকার নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি রাজ্য সরকারের মূল অগ্রাধিকারের বিষয়। গত সাড়ে চার বছর ধরে রাজ্য সরকার বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে রাজ্যের আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পর্যটনের মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রতি বছর পাঁচ লক্ষ দেশ ও বিদেশের পর্যটক রাজ্যে ভ্রমণ করছেন। ত্রিপুরা ট্যুরিজম পলিসি ২০২০-২৫ রাজ্যে চালু হয়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে পর্যটকদের আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো ও পরিষেবা প্রদান করা। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সদর্থক সহায়তা সরকারের এই প্রয়াসকে উজ্জীবিত করবে বলে তিনি বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার অধীনে দেশের প্রতিটি রাজ্যে একটি এইমস স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে। রাজ্যেও এইমসের ধাঁচে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত এই কাজটি করার জন্য এনইসির বৈঠকে তিনি দাবি জানিয়েছেন।

টি বোর্ড, কফি বোর্ড, রাবার বোর্ড এবং স্পাইসেস বোর্ডের মতো আগরতলাকে সদর দপ্তর করে রাজ্যে আগর উড বোর্ড গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বিবেচনা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছেন। রাজ্যের উৎপাদিত চায়ের বাজারজাতকরণের জন্য ই-মার্কেট মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্লেসের ব্যবহারের উপরও বৈঠকে উত্তর -পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সীমানায় একটি প্রধান ল্যাণ্ড পোর্ট স্থাপনের বিষয়টি ভারতের দিক থেকে পুনরায় তুলে ধরা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ত্রিপুরাকে যুক্ত করার লক্ষ্যে ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুকে বাংলাদেশের দিক থেকে কার্যকরভাবে চালু করতে সমস্ত সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। মুহুরীঘাট এবং মনুঘাটে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলমেন্ট কমপ্লেক্স নির্মাণে নো অবজেকশন প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করার বিষয়টিও আলোচনায় উত্থাপিত হয়। একেবারে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত সমস্ত পণ্য সামগ্রী পরিবহণ করার অনুমতি প্রদানের বিষয়টি ভারত এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবি। তাই এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। রাজ্য সরকার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং আগরতলার মধ্যে বিমান পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই জন্য প্রতি বছর রাজ্য সরকার ভায়াবেল গ্যাপ ফাণ্ডিং হিসাবে পনেরো কোটি টাকা ব্যয়ভার বহন করবে। দ্রুত বিমান পরিষেবা চালুর বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে অনুরোধ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে সাঁতার ও জিমনাস্টিক্সে বহু নামি খেলোয়াড় রয়েছেন এবং আগামীদিনেও বহু সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদ উঠে আসছেন। আগরতলায় নেতাজী সুভাষ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জিমনাসিয়াম হলটিকে ন্যাশনাল জিমনাস্টিক্স একাডেমি হিসাবে ঘোষণার জন্য রাজ্য সরকারের প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনার জন্য রয়েছে। দ্রুত এটি কার্যকর হলে রাজ্যের ও দেশের খেলোয়াড়রা উপকৃত হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন। জাতীয়মানের একটি সুইমিং পুল নির্মাণে অর্থ প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
২৩টি জনজাতি অধ্যুষিত ব্লক এলাকায় বসবাসকারী জনজাতিদের উন্নয়ন বিশেষ করে শিক্ষা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মজবুত জীবন জীবিকার উন্নয়নের জন্য ভারত সরকারের অর্থমন্ত্রকের অর্থনৈতিক বিষয়ক দপ্তর ১৩০০ কোটি টাকা এক্সটারন্যাল এইডেড প্রজেক্টের একটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে পাঠিয়েছে। তাই এই বিষয়টিকে ত্বরানিত করা আবশ্যক বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি জানান।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.