মোদির মাস্টার প্ল্যান!!

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে বহুল প্রতিক্ষিত দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।বহুল প্রতিক্ষিত এই কারণে যে, বাংলাদেশে গত বছরের আগষ্ট মাসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর,দুই দেশের সম্পর্কে যে চরম অবনতি এবং উত্তেজনা তৈরি হয়ে আছে, তা সকলেই জানে।এখানে নতুন করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বারবারই এমন একটি বৈঠকের জন্য নয়াদিল্লীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।কিন্তু ভারত সেই অর্থে প্রথমে সাড়া দেয়নি বা কর্ণপাত করেনি।অবশেষে থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনে মোদি ইউনুস দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক প্রায় চল্লিশ মিনিট স্থায়ী হয়েছে। বৈঠকে মোদি-ইউনুসের মধ্যে কি কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে?কতটা আলোচনা হয়েছে?তা ইতিমধ্যে সকলেই জেনে গেছে।ফলে এসব নিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।তাছাড়া এই বৈঠকের পর ইউনুসের পাক ও চিনপন্থী নীতি কতটা পরিবর্তন হবে?ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে,সেই দূরত্ব কতটা কমবে?এই নিয়ে এখনই কিছু বলা বা মন্তব্য করার সময় আসেনি।এর জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন মোদি-ইউনুস বৈঠক দূরত্ব কমানোর একটি প্রচেষ্টা হলেও, মনের দূরত্ব কাটতে অনেকটা সময় লাগবে। ফলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে এখনই উচ্ছ্বাসে শরির ভাসিয়ে দেওয়ার মতো কিছু নেই। তবে একটা ইতিবাচক উদ্যোগ শুরু হয়েছে, এটুকু অবশ্যই বলা বা দাবি করা যায়।
এদিকে,শুক্রবার মোদি-ইউনুস হাইভোল্টেজ বৈঠকের পরই সন্ধ্যায় তিন দিনের শ্রীলঙ্কা সফরে কলম্বো পৌঁছান মোদি।দ্বীপরাষ্ট্রে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী মোদির এই সফর, ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল।হাম্বানটোটা বন্দরের উপর চিনের নিয়ন্ত্রণ কমাতে এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত করতে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।মোদির এই সফরে দু’দেশের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।বিশেষ করে প্রতিরক্ষা চুক্তি। যা নিয়ে এখন জল্পনা তুঙ্গে।শুক্রবার রাতে কলম্বোতে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে যেভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে, তা এককথায় অভাবনীয়।এই প্রথম শ্রীলঙ্কা কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই ভাবে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই সফরের মূল লক্ষ্য হলো ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা। খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি দিশানায়কের মধ্যে যে সকল বিষয়গুলি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে, তার মধ্যে রয়েছে, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং ডিজিটালাইজেশন।এছাড়াও, বাণিজ্য এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে তোলা।
খবরে আরও প্রকাশ,মোদি ও দিশানায়েকের মধ্যে আলোচনার পর দু’দেশের মধ্যে কম করে দশটি ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। এর মধ্যে সকলের নজর প্রতিরক্ষা চুক্তির দিকে। এর পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো, এই প্রথমবারের মতো ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে চলেছে।যে কারণে গোটা বিশ্বের নজর এখন এই চুক্তির উপর।আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলও এই ব্যাপারে বেশ উৎসুক বলে দাবি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে তিক্ততা,, প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার উপর চিনের প্রভাব যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে ভারতের উদ্বেগ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।তাই মোদির শ্রীলঙ্কা সফরকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ ‘মাস্টার প্ল্যান’ বলে মনে করছে।
শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটের একেবারে কাছে অবস্থিত। এই বন্দরটি বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরগুলির মধ্যে একটি।১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হাম্বানটোটা বন্দরটি নির্মাণে সাহায্য করেছিল চিন। ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পর শ্রীলঙ্কা এই বন্দরটি ৯৯ বছরের লিজে চিনের কাছে হস্তান্তর করে।বর্তমানে এই বন্দরটিকেই চিন তার কৌশলগত কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করছে। এর ফলে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সম্পর্কেও তিক্ততার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। খবরে প্রকাশ, মোদি সফরে একাধিক চুক্তির মাধ্যমে ভারত-শ্রীলঙ্কার চিনের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করবে। যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মাস্টার প্ল্যান’ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল।