মোদি ও ট্রাম্প।।

 মোদি ও ট্রাম্প।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সোমবার গোটা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল হোয়াইট হাউসের দিকে।এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার ৪৭তম পদে দ্বিতীয়বার শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ সেই জমকালো অনুষ্ঠানে নেই ট্রাম্পের বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার শপথ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপস্থিতি নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গন যেমন সরগরম, তার চাইতেও কয়েকগুণ বেশি চর্চা চলছে দেশের জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনে। বিশেষ করে মোদি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিষয়টি নিয়ে বেশ মাথা ঘামাচ্ছে। ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে হাজির ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। সোমবার নিরাপত্তা বিষয়ক পাঁচ দেশের মঞ্চ কোয়াডের বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরের।
এখন সব থেকে বড় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে ট্রাম্প ও মোদির বন্ধুত্বের রসায়ন নিয়ে। সেই রসায়নে কি কোনও ঘাটতি তৈরি হয়েছে? এই প্রশ্নই এখন বড় করে চর্চায় উঠে আসছে। বিশেষ করে মোদি বিরোধী শিবির বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির আমন্ত্রণ না পাওয়া, যদি আমন্ত্রণ পেয়েও তাঁর না যাওয়া! গোটা বিষয়টি নিয়ে একটি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পরস্পরকে পরম বন্ধু সম্বোধন করা ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে কি তাহলে দূরত্ব তৈরি হয়েছে? নাকি এর পেছনে অন্য কোনও বিষয় রয়েছে? এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। আড়াই মাস আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারেও ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন ভালো মানুষ। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু’। ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ‘মোদি আমেরিকায় আসছেন, আমার সাথে দেখা হবে।’
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, নির্বাচনি প্রচারের ভাষণে ট্রাম্প এই কথাগুলি বললেও রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী মোদি বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দেখা করে দেশে ফিরে এসেছিলেন। ওই সফরে মোদি ট্রাম্পের সাথে দেখা করা তো দূরের কথা, গোটা সফরে একবারের জন্যও ট্রাম্পের নাম মুখে আনেননি মোদি। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মোদির এই নীরবতায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প। আবার কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মোদির এই নীরবতায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প। আবার কূটনৈতিক মহলের অপর একটি অংশের মতে, মোদিও ট্রাম্পের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্বের অন্যতম কারণ হলো চিন। সাম্প্রতিককালে বেজিং ও নয়াদিল্লীর মধ্যে সম্পর্ক অনেকটাই উন্নত হয়েছে। ভারত- চিন সীমান্ত বিরোধ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পেরেছে দুই দেশ। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে দু-পক্ষই সেনা সরিয়ে এনেছে। শুধু তাই নয়, সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের বোঝাপড়া, সম্প্রতি রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিক্সের সম্মেলনের ফাঁকে চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং- এর সাথেও বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি। দুই দেশের কূটনীতিকদের পরামর্শে হওয়া ওই বৈঠকের পর দিল্লী ও বেজিংয়ের মধ্যে বোঝাপড়া আরও প্রশস্ত হয়েছে বলে খবর। খবরে আরও প্রকাশ, ২০২০ থেকে লাদাখে দুই দেশের সেনার সংঘর্ষের পর থেকে চলতে থাকা অচলাবস্থার অনেকটাই অবসান হয়েছে মোদি জিনপিং-এর বৈঠকের পর।
কূটনৈতিক মহলের মতে, দিল্লী-বেজিং পরস্পর বোঝাপড়াকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হয়তো মনে করছেন, সীমান্ত বিরোধে রাশ টানার মধ্য দিয়ে চিন ও ভারত আসলে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিকে উপেক্ষা করার রাস্তায় হাঁটছে।চিনের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক আমেরিকার জন্য বড় চিন্তার। এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আমেরিকা কোনও অবস্থাতেই চাইবে না, ভারত- চিন সম্পর্ক সুদৃঢ় হোক। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজেপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলি বিভিন্নভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে যে, আমেরিকা ভারতের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সব মিলিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আপাতত কয়েকদিন না গেলে বোঝা যাবে না কিছুই।আদতে বন্ধুত্বের ফাটল? নাকি মোদি-ট্রাম্পের অন্য কোনও কৌশল?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.