মোদি ও মণিপুর

 মোদি ও মণিপুর
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতির ভরকেন্দ্র এখন ‘মণিপুর’। বিদেশি রাষ্ট্র মায়ানমারের সীমান্তবর্তী, ভারতের উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্য মণিপুর’ই এখন রাজনীতির সূতিকাগার হয়ে উঠেছে। দেশের তামাম রাজনৈতিক দলগুলি গত দুই-তিন মাস ধরে এই মণিপুর থেকেই তাদের রাজনীতির রসদ খুঁজে চলেছে। গত মাস তিনেক ধরে ‘মণিপুর’-কে হাতিয়ার করে দেশের রাজনীতিতে কত কিছুই না ঘটে চলেছে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও মণিপুর নিয়ে জোর চর্চা চলছে, গত মাসখানেক ধরে। এখানেই শেষ নয়, দেশের নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ পর্যন্ত জল গড়িয়েছে, এই মণিপুরকে কেন্দ্র করে। সব মিলিয়ে ‘মণিপুর’ এখন হটকেক।আর উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, যে কারণে জল এতটা গড়িয়েছে, মূলত মণিপুরে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মণিপুরকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতি কেন এতোটা তোলপাড় হলো ? তোলপাড়ের প্রধান কারণ মণিপুর হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী যখন তার নীরবতা ভাঙলেন, তখন মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য বিরোধীরা কেউই সংসদে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে বক্তব্য শুরু করার কিছু সময় আগে বিরোধীরা ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যায়। এরপর যা হলো, প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে টানা সোয়া ঘণ্টা বক্তব্য রাখলেন। বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা প্রায় সকলে যে যার মতো করে বাইরে থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। কিন্তু পাল্টা বিরোধিতা করার কেউ ছিলেন না। ভারতীয় রাজনীতির এটাই বৈশিষ্ট, নাকি দুর্ভাগ্য? তা অবশ্য জানা নেই।মণিপুর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার লোকসভায় ইতিহাসের পাতা তুলে আনলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। মণিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য তিনি পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারকেই মূলত কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে একের পর এক কংগ্রেস সরকার উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে যেভাবে অবহেলা- অবজ্ঞা করেছে, তারই পরিণতি মণিপুরের এই হিংসা। এই প্রসঙ্গে উত্তর-পূর্বের দুটি অতীতের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দুটি ঘটনাই কংগ্রেস সরকারের আমলে ঘটা। প্রথমটি ১৯৬৬ সালের ৫ মার্চ। ভারতীয় বায়ুসেনাকে দিয়ে মিজোরামের জনগণের উপর হামলা চালিয়ে ছিল কংগ্রেস সরকার। দ্বিতীয়টি ১৯৬২ সালে চিন- ভারত যুদ্ধের সময়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিন যখন ভারত আক্রমণ করেছিল, তখন দেশের মানুষ আশা করেছিল সরকার তাদের বাঁচাবে। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু তার রেডিও ভাষণে বলেছিলেন, আমার হৃদয় অসমের জনগণের সঙ্গে রয়েছে।’ এই পরিস্থিতি ছিল সেই সময়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, যেন এখনই এই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী হলো কংগ্রেস। উত্তর পূর্বের মানুষ দায়ী নয়। একটা সময় ছিল যখন মণিপুরে সমস্ত ব্যবস্থা চলত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কথায়। তখন ক্ষমতায় কে ছিল ? সরকারী দপ্তরে মহাত্মা গান্ধীর ছবি লাগানোর অনুমতি ছিল না। মৈরং যে আজাদ হিন্দ ফৌজ সংগ্রহালয়ে নেতাজীর মূর্তিতে বোমা মারা হয়েছিল। স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেওয়া হতো। না। লাইব্রেরিতে বই জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। সরকারী আধিকারিকদের তাদের বেতনের একটা অংশ জঙ্গিদের দিতে হতো। তখন ক্ষমতায় কে ছিল?এখানেই থামেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কংগ্রেসের ব্যথা- হানুভূতি সবই নির্বাচন কেন্দ্রীক। সবই তাদের কাছে রাজনীতির বিষয়। গত ছয় বছর ধরে মণিপুরে বিজেপি সরকার এই সমস্যাগুলি মাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মণিপুরে বনধ-অবরোধের দিন চলে গছে। সম্প্রতি মণিপুরে মহিলাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা ক্ষমার যোগ্য অপরাধ। দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র রকার রাজ্য সরকার একসাথে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। মণিপুর আবার ন্নয়নের রাস্তায় ফিরবে। মণিপুরে শান্তির সূর্যোদয় হবেই। মণিপুরবাসীদের শান্তির আহ্বান জনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আাপনাদের সঙ্গে আছে। আরও অনেক কথাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সব কথার মূল কথা হচ্ছে, মণিপুরে শান্তি ফিরবে তো? নাকি রাজনীতির চাপানউতোর চলতেই থাকবে। আর জ্বলতে থাকবে এণিপুর ? এটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.