মোদি-চন্দ্রচূড় সাক্ষাৎ ও রাজনীতি!!

 মোদি-চন্দ্রচূড় সাক্ষাৎ ও রাজনীতি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে দেশীয় রাজনীতি বেশ সরগরম।প্রশ্ন উঠেছে এভাবে প্রাইভেট কোনও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি মিলিত হতে পারেন কিনা।বিচারব্যবস্থার উপর এর প্রভাব পড়বে না তো?এই ভেবে শঙ্কিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। আইনজ্ঞ মহলের মতও হচ্ছে এই ধরনের সাক্ষাৎ নজিরবিহীন ঘটনা। দেশে এর আগে কোনওদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।তাই স্বভাবতই দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঘিরে দেশের প্রবল ঔৎসুক্য তৈরি হয়েছে এবং এ নিয়ে কিছুটা বিতর্কও তৈরি হয়েছে।
উপলক্ষ্য আর কিছুই নয়, দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যান গণেশ পুজো উপলক্ষে। দেশজুড়ে সম্প্রতি গণেশ চতুর্থী প্রতি বছরের মতো এবারও মহাসাড়ম্বরে পালিত হয়েছে।গণেশ পুজো উপলক্ষে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সেখানে তিনি আরতিও করেন। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান সস্ত্রীক প্রধান বিচারপতি। বেসরকারী কোনও অনুষ্ঠানে এভাবে সাধারণত দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতিকে দেখা যায় না। দেশের প্রশাসনিক প্রধান এবং দেশের বিচারব্যবস্থার প্রধান একসাথে কোনও প্রাইভেট অনুষ্ঠানে হাজির- তাতে বেশ খানিকটা অবাকই হয়েছেন দেশের তামাম রাজনৈতিক দল থেকে গণমান্য, বিশিষ্টজনরাও। এরকম মিলিত হবার প্রটোকল রয়েছে কিনা এ নিয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
এমনিতে শিষ্টাচার বা সৌজন্যতা থেকে দুই শীর্ষ ব্যক্তি মিলিত হতেই পারেন এতে দোষের কিছু নেই।কিন্তু যখন পদটি প্রধান বিচারপতির সেখানে কিন্তু কিছু প্রশ্ন এসে যায়।
সম্প্রতি শিল্পপতি মুকেশ আম্বানীর বাড়িতেও গণপতির পুজোতে দেশের অনেক গণমান্য ব্যক্তি হাজির হয়েছেন।কিন্তু এতে কোনও প্রশ্ন তোলেনি কেউই।এর আগে শিল্পপতি মুকেশ আম্বানীর পুত্রের বিয়েতে রাজনৈতিক জগতের বিশিষ্টজন থেকে দেশি বিদেশী বহু তারকার মেলা বসেছিলো।তা নিয়েও তেমন কোনও প্রশ্ন উঠেনি।কিন্তু প্রধান বিচারপতির বাসভবনে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে বহু প্রশ্ন উঠেছে।প্রশ্ন তুলেছে এদেশের রাজনৈতিক দল থেকে আইনজ্ঞদের একাংশ। প্রশ্ন হলো- চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে প্রধান বিচারপতির ছবি প্রকাশ্যে এলো কীভাবে? প্রধানমন্ত্রী কি সেখানে ক্যামেরাম্যান নিয়ে গিয়েছিলেন?
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী এই সুযোগকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন।তিনি বরাবরই ই-ভোট ম্যানেজার। কেদারনাথে ধ্যান কিংবা সমুদ্রের নীচে ডুবকি লাগানো থেকে হালের কন্যাকুমারীতে ধ্যানপর্ব সর্বত্রই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্যামেরা নিয়ে ‘মুভ’ করতে পছন্দ করেন। গোটা বিষয়কে প্রচারের আলোতে নিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জুড়ি মেলা ভার।তাই চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে গণেশ বন্দনার ছবিও স্বভাবতই ভাইরাল হয়েছে।আর এ নিয়েই উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের সময়কাল এমনিতেই মোদির জন্য ভালো নয়।ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে সাম্প্রতিক অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিন- সর্বত্রই সুপ্রিম কোর্টের অবদান।এবং এতে বেশ বিব্রত মোদি সরকার।এই অবস্থায় বিরোধী দলগুলি মনে করছে মোদি-চন্দ্রচূড় সাক্ষাতে এর প্রভাব পড়তে পারে।প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং আতিথেয়তা গ্রহণ করে সেই বার্তাই দিয়েছেন।
তবে আরেকপক্ষের মত হচ্ছে, রাজনীতি, সমাজ, কূটনীতি কিংবা ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিসরে সৌজন্য নামক একটি শিষ্টাচার রয়েছে।আর এতে দোষের বা অন্যায়ের কিছু নেই।সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা ঠিক নয়।চন্দ্রচূড়-মোদি সাক্ষাৎ নেহাতই আমন্ত্রণ রক্ষার নামান্তর।যদিও রাজনৈতিক দলগুলি একে বাঁকা চোখেই দেখছে।কপিল সিবালের মতো বর্ষীয়ান আইনজ্ঞও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।সুতরাং মোদি-চন্দ্রচূড়ের এই সাঙাৎ তাও সামাজিক অনুষ্ঠানে – এর দীর্ঘমেয়াদি বা সুদুরপ্রসারী কোনও প্রভাব আগামীদিনে পড়বে কিনা তা ভবিষ্যৎই বলবে।তবে আপাতত প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মধ্যে এই সামাজিক সাক্ষাৎ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে চর্চা যে আরও কয়েকদিন চালু থাকবে তা বলাই যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.