মোদি জমানার ৮ বছর

 মোদি জমানার ৮ বছর
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি আট বছর পূর্ণ করলেন । ২০১৪ সালের ২৬ মে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মোদি । এরপর আবার ২০১৯ সালে । গতকাল ২৬ মে ২০২২ ইং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি আট বছর কার্যকাল পূর্ণ করেছেন । এই সময়ে অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে । গত আট বছরে একদিকে মোদির রাজনীতি থেকে কূটনীতি যেমন প্রশংসা পেয়েছে । আবার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও । প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির এই আট বছর কার্যকালকে নিয়ে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী রাজনৈতিক চাপান উতোর তুঙ্গে উঠেছে । বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশব্যাপী ধুমধাম করে পালন করতে চলেছে মোদি সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি । মোদ্দাকথা এক প্রকার দেশব্যাপী উৎসবের ডাক দিয়েছে । আগামী ৩০ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রবল জাঁকজমকের আয়োজন করতে চলেছে গেরুয়া শিবির । উৎসবের সূচনা কার্যত বুধবার থেকেই শুরু হয়ে গেছে । ‘ মোদি @ ২০ ড্রিমস মিট ডেলিভারি ’ বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে । বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে মোদি ভজনায় মজেছেন স্বয়ং উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু । জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি তুলনা টেনেছেন প্রধানমন্ত্রীর ।

সাফ জানিয়েছেন , ‘ মোদি যে একজন অবিসংবাদী নেতা , তার চরম নিন্দুকও সেকথা স্বীকার করেন । । মহাত্মা গান্ধী যেভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামকে অভিজাতদের হাত থেকে বের করে গণ আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন , ঠিক সেভাবেই মোদি উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে পরিণত করেছেন গণ উদ্যোগে । ‘ এখানেই শেষ নয় , ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও । এহেন উৎসবের প্রাক্কালে দেশব্যাপী দলের প্রতিটি কমিটি ও ইউনিটকে বার্তা দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা । বলেছেন , আট বছরে ভারতবাসী বিশেষ করে গরিবের জীবন বদলে দিয়েছে মোদি সরকার । মানুষের কাছে গিয়ে একথা প্রচার করতে হবে । ৮ বছর- সেবা সুশাসন এবং গরিবকল্যাণ -এই ‘ শিরোনামকে সামনে রেখে পালিত হবে মোদি সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি উৎসব । নির্ধারিত হয়েছে এই সময়ে সাধারণ মানুষের সাথে পঁচাত্তর ঘণ্টা কথা বলবেন বিজেপির প্রত্যেক নেতাকর্মী । এই নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণের কারণ , চলতি বছরেই দেশের স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি । ‘ দেশকে রিপোর্ট কার্ড ’ শীর্ষক পুস্তিকা , প্রচার ভিডিও , দলীয় সঙ্গীত ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে । দলীয় এমপিদের প্রতি নির্দেশ – গিয়েছে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে ।

কেন্দ্রীয় সরকার গত আট বছরে কত প্রকল্প গ্রহণ করেছে , কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে , তার বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরতে । ইতিমধ্যে মোদি সরকারের ‘ আট বছরে আট বড় সিদ্ধান্ত ‘ শীর্ষক প্রচার গোটা দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে । এই সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে যেমন নোটবন্দি , সার্জিক্যাল স্ট্রাইক , জিএসটি লাণ্ড , তিন তালাক , ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫ এ ধারা বাতিল , সিএএ আইন , কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প , আয়ুষ্মান ভারত যোজনা । সব মিলিয়ে দেশবাসীকে বলা হবে , আট বছর পর ভারতে এসেছে অমৃতকাল ।কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে , মোদি জমানায় গত আট বছরে দেশবাসীর বাস্তব অভিজ্ঞতা কি ? তুল্যমূল্য বিচার যখন হবে , তখন ভালো মন্দ মিলিয়েই হয় । প্রথমত , ২০১৪ সালে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদি ক্ষমতায় এসেছেন , বিশেষ করে দেশে ‘ বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি ‘ রুখতে ‘ চরম ব্যর্থ ‘ । মূল্যবৃদ্ধির আগুনে দিশাহারা দেশের মানুষ । কর্মসংস্থানে বিপুল ঘাটতি । বাড়ছে বেকারত্ব । শেয়ার বাজারে ধস আটকানো যাচ্ছে না । বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন । সর্বকালীন অবনতি ঘটেছে টাকার বিনিময় মূল্যে । আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলির পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পর্যন্ত বলছে জিডিপি বৃদ্ধি হার সন্তোষজনক নয় । আরও বাড়বে মুদ্রাস্ফীতির হার । মোদি জমানায় পেট্রোল , ডিজেল , রান্নার গ্যাস , ভোজ্য তেল , নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর আকাশছোঁয়া মূল্য বেড়েছে । বেড়েছে জীবনদায়ী ওষুধের মূল্য । বিরোধী দলগুলিও মোদি সরকারের আট বছরকে ‘ অপশাসন ’ আখ্যা দিয়ে আটটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে । তারা বলেছে – নোটবন্দি , কৃষি আইন নিয়ে কৃষকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা , বেকারত্ব , মুদ্রাস্ফীতি , পেগাসাস কেলেঙ্কারি , সিএএ – এনআরসি , করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা । গত আট বছরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ সুদিন ’ এনে দিতে পারেননি । বরং বিজেপি জমানায় দেশের মানুষের কপালে জুটেছে শুধুই দুর্ভাগ্যে ।তবে যে যাই বলুক -দেশের মানুষই শেষ কথা বলবে।গণতান্ত্রিক ভারতের জণগণই আসল বিচারক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.