এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

যত গর্জায় তত বর্ষায় না। বাংলার এই প্রবাদের গূঢ়ার্থ বুঝতে হলে রাজনীতির চশমায় নয়,আন্তর্জার নারী দিবসে মানবিক চশমায়
পূর্বোত্তরের সাত ভগিনীর জীবন-যাপনের অন্দরে তাকাতে হবে।বাহ্যিক চাকচিক্য, কসমিক পরিবর্তন অবশ্যই সাধিত হয়েছে গত কয়েক বছরে।কিন্তু অন্দরমহল?নানাবিধ সংকটে সীমান্তবর্তী রাজ্যের মানুষ গ্রস্ত।আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, সর্বত্র অভ্যন্তরীণ অশান্তি, নিরাপত্তার চরম অভাব, সাধারণ মানুষের সীমা অতিক্রান্ত দুর্দশার দিকটি এড়িয়ে যাওয়া যায় কি?পূর্বোত্তরে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন বপন কতখানি বাস্তব তা ভুক্তভোগীরাই জানেন।গত মাসে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত ‘অ্যাডভান্টেজ অ্যাসাম ২.০’ -এর মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পূর্বোত্তরবাসীর প্রতি এই মর্মে আহ্বান জানিয়েছেন যে,ভারতের উন্নয়নের রূপরেখা এমনিতেই বিশ্বে প্রভৃত প্রশংসা অর্জন করেছে; এ বার পূর্বোত্তর ভারত দেখিয়ে দিক তার সম্পদ ও সম্ভাবনার বিশালতা।মঞ্চে উপস্থিত সরকার-ঘনিষ্ঠ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক মহল সমস্বরে প্রতিশ্রুতিও বিতরণ করেছেন।স্মরণে থাক তিন বছর আগে,শিলং-এ এমনই এক মহাবৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কয়েক হাজার কোটি টাকার দ্রুত বিনিয়োগে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বের চেহারা বদলে যাবে।দু’টি স্লোগান তৈরি হয় সেই সূত্রে। ‘অ্যাক্ট ফাস্ট ফর নর্থ-ইস্ট'(পূর্বোত্তরের জন্য দ্রুত কাজ)এবং ‘অ্যাক্ট ফার্স্ট ফর নর্থ-ইস্ট’ (পূর্বোত্তরের জন্য প্রথম কাজ)।তারপরে কী হয়েছে, সে তর্ক বাহুল্য। প্রাণঘাতী হিংসা ও সংঘর্ষে ছারখার হয়ে গেছে মণিপুর, ধ্বস্ত হয়েছে তার অর্থনীতি। অশান্তির এই বাতাবরণে আসাম ও নাগাল্যান্ডেও সংকট ছড়িয়েছে। কোনও নতুন প্রকল্পের সূচনা দুরস্থান, নির্মীয়মাণ প্রকল্পগুলি থেকে কেন্দ্রের কাছে ডিপিআর (ডিটেলড প্রোজেক্ট রিপোর্ট) পাঠানো পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে। সরকারী মহল থেকে রাজ্যসভার বিবরণীর আলোচনায় উঠে এসেছে পরিকল্পিত প্রকল্পের অত্যল্প ভাগ বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।বাকিটা দেবা ন জানন্তি।
রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘর্ষের কারণে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে বলে যারা যুক্তি সাজান, তারা নিশ্চয়ই জানেন যে উল্টো কথাটিও সত্য; উন্নয়নের ভয়ঙ্কর অত্যল্পতার কারণেই সমাজে এবং রাজনীতিতে এত সংঘর্ষ। মণিপুরে মেইতেই বনাম কুকি-জো গোষ্ঠীর ভয়াল সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট; অত্যল্প উন্নয়নের ভাগ কে পাবে,মূলত তা নিয়েই সত্তাপ্রশ্নের দ্বন্দ্ব। শুনতে কটূ হয়তো, কিন্তু সমগ্র পূর্বোত্তর ভারতের জনজাতি-অধ্যুষিত সুবিস্তৃত বাসভূমিকে দারিদ্রসমুদ্রে নিমজ্জিত রেখে বাকি ভারত যদি উন্নতিযাত্রায় সওয়ার হয়, তাতে সাত ভগিনীর যাপনের ক্লেশ দূর হয় না। এমন অভিযোগের মধ্যে খানিকটা স্থানিক সত্তাবোধের অভিমান জর্জরিত ঠিকই, কিন্তু সমধিক বাস্তব। দ্রুত লয়ে সাড়ম্বরে স্বাধীনতার ‘অমৃতকাল’-এর আগমন ঘটল, ধীর লয়ে তার প্রস্থানও ঘটল অথচ পূর্বোত্তরের অধিকাংশ রাজ্যেই পরিকাঠামো থেকে কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মানে পিছিয়ে থাকল।
এমনটা কিন্তু ঘটার কথা ছিল না।কারণ ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ-সহ, লক্ষ্যযুক্ত উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক সীমান্ত। এর বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলটি বিভিন্ন মানব উন্নয়ন সূচকে জাতীয় গড় থেকে পিছিয়ে রয়েছে। ভারতের জিডিপি-তে পূর্বোত্তরের অবদান মাত্র ২.৮ শতাংশ।এই অঞ্চলের সামগ্রিক অগ্রগতি সম্ভব করার জন্য এমন একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য যা নজর দেবে মানবসম্পদের সশক্তিকরণ ও বঙ্গোপসাগরের অর্থনীতির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন একীকরণের উপর। পূর্বোত্তর ভারতের সাক্ষরতার হার জাতীয় গড়ের সঙ্গে তুলনীয় হওয়া সত্ত্বেও এর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি উল্লেখযোগ্য চ্যলেঞ্জের সম্মুখীন সীমিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দক্ষ শ্রমের অভাবের কারণে, যা বেকারত্বের একটি চক্রকে স্থায়ী করে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত করে।
বিভিন্ন স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জন্য কম, দেশের মোট সংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ। কাজেই যা প্রয়োজন তা হলো, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বৈশ্বিক শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সারিবদ্ধ করার লক্ষ্যে পাঠ্যক্রম সংশোধন করা, উদ্ভাবনী পদ্ধতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষক-প্রশিক্ষণ বাড়ানো, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএড)-এর মতো সংস্থাগুলির সহায়তায় বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি তৈরি ও প্রচার করা। ফলে মুখেন মারিতং নয়, পূর্বোত্তরে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য একটি সহায়ক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা আশু প্রয়োজন। এ-সব ব্যতিরেকে নান্য পন্থা বিদ্যতে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই’,বার্তা পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুর বদলে এবার শান্তির বার্তা পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দরের।ভারত যুদ্ধ থামালে, তারাও থেমে…

5 hours ago

পাক গোলাবর্ষনে প্রাণ গেল রাজৌরির উচ্চপদস্থ আধিকারিকের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজৌরিতে পাক সেনার গোলাবর্ষণে প্রাণ গেল রাজৌরির অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন কমিশনার রাজকুমার থাপার।…

5 hours ago

নিঃসঙ্গ পাকিস্তান!!

আজকের দিনের প্রতিটি যুদ্ধ মানেই প্রথমেই স্নায়ুযুদ্ধ।স্নায়ুযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে…

5 hours ago

যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী শুক্রবার সকাল থেকেই…

5 hours ago

যুদ্ধজিগির তোলার মাঝে কেঁপে উঠল পাকিস্তান।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-চার দিনের মাথায় আবারও ভূমিকম্প পাকিস্তানে।শুক্রবার রাত ঠিক ১টা ৪৪ মিনিট।আগের দিনের তুলনায়…

10 hours ago

অমৃতসর বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বৃহস্পতিবারের পুনরাবৃত্তি। সন্ধ্যা আটটার পর থেকেই শুরু হয় একই কায়দায় ড্রোন মিসাইল হামলা…

19 hours ago