মৌন ভঙ্গ!!

 মৌন ভঙ্গ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় বিরোধী দলগুলি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়। নির্বাচন কমিশন একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। কিন্তু গত কয়েকবছর এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ লেগেই রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই সমস্ত অভিযোগের জবাব তো দেয়নি বরং শাসকের সুরে সুর মিলিয়ে বিরোধীদের বরং তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় যে সমস্ত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উঠেছিল তা ছিল নজিরবিহীন। ৭/১০ দিন পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ভোটের শতাংশের হিসাব জানাচ্ছে। এতেই আপত্তি ছিল বিরোধী দলগুলির। কিন্তু কমিশন এতে কর্ণপাত করেনি। নির্বাচন কমিশন অভিযোগগুলির কোন পাত্তা তো দেয়নি বরং ফল ঘোষণার একদিন আগে নাটকীয় ভঙ্গিতে প্রেস কনফারেন্স করে বিরোধীদের ‘অভিযোগ’ করার জন্য তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে।সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস ভুয়ো ভোটার তালিকা, ভুয়ো এপিক কার্ড নিয়ে সরব হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই তারা এই ইস্যুতে সরব। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তারা দরবারও করেছে। অতি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন আধার কার্ডের সাথে এপিকের সংযুক্তির কথা বলে আদতে তৃণমূল কংগ্রেসের যে অভিযোগ একেই মান্যতা দিল বলে মনে করছে রাজনীতিবিদরা। পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে কয়েকমাস ধরেই সরব তৃণমূল কংগ্রেস। একই এপিক কার্ড নম্বরে একাধিক ভোটার কার্ড নিয়েও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছিলো। কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়। সদ্য ভোট হওয়া হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের ভোটের সময়ও ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ উঠেছিলো। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিরুত্তর।তাই এপিকজনিত ত্রুটি মেরামত এবং স্বচ্ছ ভোটের জন্য ভোটার কার্ডের সাথে আধারের সংযুক্তিকরণ করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে শেষ পর্যন্ত উদ্যোগী হল নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশন জ্ঞানেশ কুমারের পৌরোহিত্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইন মন্ত্রকের পরিষদিয় দপ্তরের সচিব ও আধারের সিইও হাজির ছিলেন। যদিও কেন্দ্র এ সংক্রান্ত আইন এনেছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এ সংক্রান্ত নির্দেশ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক ভোটার তালিকায় নাম থাকার বিষয় আধার থাকা বাধ্যতামূলক নয়। অতীতেও আধারের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল একমাত্র আর্থিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্র ছাড়া আধার নম্বরের সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করা যাবে না। এবং সম্প্রতি বৈঠকের ও নির্যাস যা বেরিয়েছে তা হলো ভোটার কার্ডের সাথে আধার সংযুক্তিকরণে বিষয়টি ঐচ্ছিক। অর্থাৎ এতে ভোটারের ইচ্ছার উপর তা নির্ভর করে সংযুক্তিকরণে আগ্রহী কিনা।নির্বাচন কমিশন এর আগে জানিয়েছিলো যে, দেশে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৬ লক্ষের বেশি ভোটার-আধার সংযুক্তিকরণ হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ কিংবা হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে ভুয়ো ভোটার নিয়ে অভিযোগ থাকলেও নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে অনেকটা আইওয়াশ করতে চাইল বলে মনে করা হচ্ছে। কেন না হরিয়ানার নির্বাচনের পর কংগ্রেস-ইভিএম নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছিলো। যার কোন উত্তর এখনও দেয়নি নির্বাচন কমিশন। মহারাষ্ট্রের একাধিক বুথের গড়মিলের তথ্যও নির্বাচন কমিশনে জমা পড়েছিলো। যার কোন নিষ্পত্তি নেই। আসলে নির্বাচন কমিশন এখন অবস্থান নিয়েছে কোন প্রতিক্রিয়া না দেবার। তাদের একটাই কথ তারা লেভেল প্লেয়িং সিদ্ধান্ত বা বা নিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ভুয়ো ভোটার নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা আগামী এক বছর ধরে দরবার চলতেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন না পশ্চিমবঙ্গ আগামী বছর বিধনসভায় ভোট। সেই ভোট পর্যন্ত এই সমস্ত অভিয়োগ চলতেই থাকবে। নির্বাচন কমিশন আধার ভোটান সংযুক্তিকরণের রাস্তা বাতলে আসলে একটি পথ খোঁজার চেষ্ট করছে। এবং তা কতদিন স্থায়ী হয় তাই এখন দেখার বিষয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.