ম-তে মেডিটেশন!
চলতি লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘মটন’ ‘মছলি’ দিয়ে।এবার শেষটা হচ্ছে ‘মেডিটেশন’ দিয়ে। এবার এই মেডিটেশন দিয়ে দেশের রাজনীতি একেবারে উত্তাল। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের শেষবেলায় এসে ধ্যান নিয়ে এ রকম রাজনীতি হবে তা কেউ আন্দাজই করতে পারেনি।তাই এবার নিবাচনের কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে দেওয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এর প্রচার এবার ছিল বেজায় ঘটনাবহুল।দেশের নির্বাচনি ইতিহাসে এত বিতর্কিত প্রচার বোধহয় এ যাবৎ হয়নি যতটা এবারের নির্বাচনি প্রচারে দেখা গেছে একেবারে শুরু থেকে শেষ অবধি।এবারের লোকসভা নির্বাচনের মতো এত লম্বা সময় ধরে দেশের নির্বাচন আর কোনদিন হয়নি।একদিকে দেশ গরমে পুড়ছে আর সেসময় দেশে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এ এক অদ্ভুত সমাপতন।
যাই হোক,৩০ মে যখন চলতি লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার সরব প্রচার শেষ হচ্ছে সেসময়ও বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায়।এবারের নির্বাচনের প্রতিটি দফার ভোটের আগে পরে নির্বাচনি ইস্যু পরিবর্তিত হয়েছে।বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে। বিরোধীরা অবশ্য তাদের নির্বাচনি ইস্যু থেকে এখনও পর্যন্ত সরেনি।কিন্তু বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রীর মতো শাসক দলের স্টার প্রচারককে দেখা গেছে একে পর নির্বাচন (দফা) শেষ হচ্ছে আর প্রধানমন্ত্রী তার ইসু পরিবর্তন করছেন।এবার প্রধানমন্ত্রী শুরু করেছিলেন মটন আর মছলি দিয়ে।বিহারের আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের একটি ভিডিওকে হাতিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী প্রথম ‘মটন’ ‘মছলি’ নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ করেছিলেন।এরপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে মঙ্গলসূত্র, মুসলিম, এবং সর্বোপরি মুজরা।অনেকেই ভেবেছিলেন যে, মুজরা দিয়েই হয়তো প্রধানমন্ত্রী থামবেন। কিন্তু না,সবাইকে ভুল প্রমাণ করলেন প্রধানমন্ত্রী।এবারের নির্বাচনে তাই প্রধানমন্ত্রীর শেষের চমক অবশ্যই মেডিটেশন।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সপ্তম দফা ভোটের আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন যে, সরব প্রচার শেষ হতেই তিনি পাড়ি দেবেন কন্যাকুমারীতে।সেখানে বিবেকানন্দ রক মোমোরিয়্যালে তিনি ৪৮ ঘন্টা সময় কাটাবেন ‘মেডিটেশন’ অর্থাৎ ধ্যান করে।আর প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায় দেশের রাজনীতি ফের সরগরম হয়ে উঠেছে। কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রকে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধ্যান করবেন এতে দোষের কিছু নেই।যে কেউ সেখানে ধ্যান করতেই পারেন।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন গিয়ে ধ্যান করবেন তার মাহাত্ম্যই আলাদা।প্রধানমন্ত্রী বলে কথা!হাজারো মিডিয়ারা হামলে পড়বে।প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানের ছবি ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেশে।গোটা বিশ্বে। এখানেই প্রশ্ন বিরোধীদের- মোদি কি শেষ বেলায় ভোটকে প্রভাবিত করতে চাইছেন?১ জুন যখন দেশে সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ চলবে তখনও মোদি থাকবেন- ধ্যানে।সেই ধ্যানের ছবি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। ভোটারদের প্রভাবিত করতেই মোদির কি এই চাল?প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা।কেননা দেশে আদর্শ নির্বাচনি আচরণবিধি এখনও লাগু রয়েছে।সরব প্রচার শেষ হলেও নীরব প্রচার করার উপরও অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে।তাই কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছে।যদিও নির্বাচন কমিশন ৩০ মে বিকাল পর্যন্ত সরব প্রচার শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি।ডিএমকে, তৃণমূল কংগ্রেস,বামদলগুলিও প্রধানমন্ত্রীর এই চমকপ্রদ প্রচারকৌশলে আপত্তি জানিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ধ্যান করুন কিন্তু তা যেন প্রচারে না আসে। প্রচার করার জন্য ধ্যান কিনাসে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। বিরোধী দলগুলির মতে,ক্যামেরা নিয়ে ধ্যান হয় না।এতে!তো ধ্যানে বিঘ্ন ঘটবে।ধ্যান তো নির্জনে হয়।
সব মিলিয়ে মোদির মেডিটেশন নিয়ে এখন আকাশ বাতাস মুখরিত ইতোমধ্যেই কন্যাকুমারীতে নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো হয়েছে।প্রায় ২ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় কাজে লাগানো হয়েছে।এছাড়া জলপথ এবং বিমানপথেও চলছে নজরদারি।দেশের তাবৎ মিডিয়াকুল তৈরি কন্যাকুমারী নিয়ে।এর মধ্যে সমাজবাদী সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব প্রধানমন্ত্রীর মোদির উদ্দেশ্যে চমকপ্রদ বয়ান দিয়েছেন।অখিলেশের ভাষায়-প্রধানমন্ত্রীর তো অনেক আগেই ধ্যানে বসার প্রয়োজন ছিল।এখন সময় হারিয়ে তিনি ধ্যানে বসেছেন। তার এখন অফুরন্ত সময় হবে।তা তিনি ধ্যান করতেই থাকুন।কথায় আছে যার শেষ ভাল তার সব ভাল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও চাইছেন তার শেষটাও যেন ভাল হয়।দেখা যাক ‘ধ্যান’ মোদির লোকসভা ২০২৪-এর ‘ভাল’ এনে দেয় কিনা।